মংলা বন্দরে ভিড়ছে বেশি জাহাজ, বাড়ছে আয়
পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য বর্তমানে মংলা বন্দরে জাহাজ বেশি ভিড়ছে। সাত বছর আগে প্রতি মাসে এ বন্দরে সাত-আটটি জাহাজ ভিড়ত। এখন সেখানে ৩৫টির বেশি জাহাজ ভিড়ছে। এতে বন্দরের আয় বেড়েছে কয়েক গুণ।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে মংলা বন্দর লাভজনক অবস্থায় থাকলেও ২০০০ সালের পর থেকে নানা জটিলতা দেখা দেয়। আমদানি করা পণ্যের মান ভালো না হলে মামলা করা হয়, এতে দেশি-বিদেশি জাহাজ আটকে যায়। এতে সীমাহীন সংকটে পড়ে বন্দর। আর বন্দরের পশুর চ্যানেলে নাব্যতা সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ, কাস্টমসের হয়রানিও বন্দরে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করে। এসব কারণে আমদানি-রপ্তানিকারকরা মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া করতে অনীহা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা। সংকট কাটাতে সরকার বন্দরের ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করা হয়। এর পর থেকে মংলা বন্দর অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ায়।
২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে বন্দরের লোকসান ছিল প্রায় ১১ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে নয় কোটি ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার ও ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে লোকসান ছিল ছয় কোটি ১৯ লাখ টাকা।
গত ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য খালাস ও বোঝাই হয় সাত লাখ ২২ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০১৪-২০১৫) পণ্য খালাস-বোঝাই হয় ৪৫ লাখ ৩০ হাজার টন।
আর ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে বন্দরে ভেড়া জাহাজের সংখ্যা ছিল ৯৫টি ও মাসিক গড়ে আটটি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ বন্দরে জাহাজ আসে ৪১৬টি। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৩৫টি জাহাজ আসে।
গত অর্থবছরে মংলা বন্দরের নিট মুনাফা দাঁড়ায় ৬০ কোটি ১২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বন্দরের আয় হয় প্রায় ৯৬ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
মংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার ড. আল আমিন প্রামাণিক বলেন, বন্দরে জাহাজ বেশি ভেড়ার ফলে মংলা শুল্ক কর্তৃপক্ষ (কাস্টমস) গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৪ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছে। গত অর্থবছরে মংলা কাস্টম অফিসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল এক হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। তবে আদায় হয় এক হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।
বন্দর ব্যবহারকারী ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মেসার্স নুরু অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী এইচ এম দুলাল বলেন, বন্দরকে অধিক গতিশীল করার ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে। চ্যানেলের হিরণ পয়েন্টের অদূরে নদীর মুখে খনন করা প্রয়োজন। বন্দর চ্যানেলের ডুবন্ত রেক (জাহাজসহ ছোট-বড় বিভিন্ন নৌযান) উত্তোলন করার ক্ষেত্রের সমস্যাও দূর হওয়া দরকার।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বন্দরের দক্ষ ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কারণে গত অর্থবছর এ বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি পণ্য খালাস-বোঝাই হয়েছে। এতে বেশি মুনাফা হয়েছে। মংলা-খুলনা রেললাইন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে মংলা বন্দর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এ ছাড়া এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মংলা বন্দরের আরো আধুনিকায়ন হবে। ফলে আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমও বাড়বে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, আগে লোকসান হলেও বর্তমানে এ বন্দর সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে এ বন্দর দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে।