যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি প্রধান প্রতিষ্ঠান হ্যাক করেছে চীন!
যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই চীনের হ্যাকারদের হামলার শিকার হয়েছে। কোনো আলামত না রেখেই হ্যাকাররা ওই সব প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নকশা চুরি করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মার্কিন কংগ্রেস, প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
এসব হামলার প্রমাণ পেলেও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক কর্মকর্তা মাইক ম্যাককোনেল।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় ম্যাককোনেল ছিলেন এনএসএর পরিচালক। গত বৃহস্পতিবার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিই চীনের হ্যাকারদের হামলার শিকার হয়েছে। তারা এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরিয়েছে। তবে আমরা কোনো ভাইরাস বা আলামত চিহ্নিত করতে পানিনি।’ চীনের অনুপ্রবেশকারীরা যখন খুশি তখনই তথ্য সরিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ম্যাককোনেল ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের এনএসএর প্রধান ছিলেন। সে সময় তিনি সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন হ্যাকিংয়ের ঘটনার তদন্ত হয়েছে।
তদন্তের সময় সাইবার হামলার শিকার হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তালিকা করেন ম্যাককোনেল। মার্কিন কংগ্রেস, প্রতিরক্ষাবিষয়ক অধিদপ্তর ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ওই তালিকায় উঠে আসে।
সিএনএন মানির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসার নকশা ও পরিকল্পনা চীনের চররা চুরি করেছে, যা চিহ্নিত করতে পেরেছে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। আর অ্যালকো, ইউএস স্টিল করপোরেশন, ওয়েস্টিংহাউজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চরবৃত্তির অভিযোগে গত বছর চীনের পাঁচ চরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে মামলা দায়ের করা হয়।
তবে ম্যাককোনেলের বক্তব্য ভিন্ন। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই তাদের বিশেষ ব্যবসা পরিকল্পনা গোপন রাখতে পারেনি। সেখান থেকে কিছু না কিছু খোয়া গেছেই বলে দাবি করেন তিনি।
মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তৃতায় ম্যাককোনেল বলেন, বুশ প্রশাসনের শেষ বছরে চীন সরকার এক লাখের একটি হ্যাকার দল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরানোর কাজে নিযুক্ত করে। তবে সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা ছিল অনেক।
অটোমোবাইলস, উড়োজাহাজ, মহাকাশ যান, সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদনের উন্নত নকশা ও পরিকল্পনার তথ্য চীনের চররা চুরি করেছে বলে তদন্তে প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি ম্যাককোনেলের। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য বাজারে ছাড়ার আগেই তারা ওই সব তথ্য সরাতে পারে। আর এটা বহু বছর ধরেই চলেছে।’ এটা যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত দুর্বলতার কারণেই হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
আধুনিক সাইবার অস্ত্রগুলো যদি সন্ত্রাসীদের কাছে চলে যায়, তবে বড় বড় দেশের আর্থিক বাজার এবং বিদ্যুৎ গ্রিডও আক্রমণের শিকার হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় সাইবার বিশেষজ্ঞরা হ্যাকারদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোনো প্রতিষ্ঠানকে চীন সরকারের চরবৃত্তির কার্যক্রম থেকে রক্ষা করতে পারবে কি না, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
ইওয়াই নামে একটি সাইবার বিশেষজ্ঞদলের পরামর্শ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্যও ২০১২ সালে চীনের হ্যাকারদের হামলার শিকার হয়। তবে সব প্রতিষ্ঠানে চরবৃত্তি হয়নি বলে দাবি করে ইওয়াই। ইওয়াইয়ের পরামর্শক চিপ টিস্যন্টস বলেন, ‘আমি বলতে পারব না প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এর শিকার হয়েছে। যদি তা সত্য হয়, চীন কোকের তথ্যও চুরি করতে পারত, তবে পারেনি।’
পূর্ব ইউরোপের মাফিয়া, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার চররাও বসে নেই বলে মন্তব্য করেন ম্যাককোনেল। উদাহরণ হিসেবে তিনি সম্প্রতি সাইবার হামলার শিকার সনি পিকচারস ও জেপি মরগানের কথা উল্লেখ করেন।
তবে ম্যাককোনেলের মন্তব্যকে অতিরঞ্জিত ও ভুল বলে মনে করেন সিআইএর সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক সাবেক গবেষক জন পিরস। ব্রিকাটা নামে জনের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। তাঁর পরামর্শ গ্রহণকারী কোনো প্রতিষ্ঠান চীনের চর দ্বারা আক্রান্ত হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।