কর মেলায় রেকর্ড আয়
সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার শেষ দিন আজ সোমবার মেলায় করদাতাদের ঢল নেমেছিল। এদিন আগারগাঁওয়ের মেলা প্রাঙ্গণে সকাল থেকে দলে দলে করদাতারা আসতে থাকেন। দুপুরের পর সেটি যেন জনস্রোতে রূপ নিয়েছিল।
আর এবার মেলা থেকে রেকর্ড দুই হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮১১ টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছে। গত বছর মেলা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল দুই হাজার ৩৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ৮১৮ টাকা। যা গত কর মেলার চেয়ে ৯৪ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৩ টাকা বেশি।
সপ্তাহব্যাপী এই মেলা থেকে নয় লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩ জন সেবা গ্রহণ করেছেন। আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছেন এক লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জন। নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৫৩ জন। মেলার শেষ দিন রাজস্ব আয় হয়েছে ৪০১ কোটি ৯৫ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৪ টাকা।
সোমবার মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বুথের সামনে করদাতাদের লম্বা লাইন। তবু উৎসবের আমেজ। মেলায় আগত করদাতাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। অনেক করদাতা মেলার সময় বাড়ানোর দাবি করছেন। অনেকে মেলা প্রাঙ্গণের মেঝেতে বসে রিটার্ন ফরম পূরণ করছেন। এক বুথ থেকে অন্য বুথে যেতেও লাইন ধরতে হয়। তারপরও নেই কোনো বিশৃঙ্খলা।
রাজধানীর মিরপুর থেকে নতুন ই-টিআইএন নিতে এসেছেন তপন কুমার বোস। তিনি বলেন, নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাই। এ জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেব ভাবছি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, ঋণের জন্য আবেদন করতে ই-টিআইএন লাগবে। কিন্তু মেলার শেষ দিনে এত ভিড় যে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।
শেষ দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৩টি জেলা, ৩১টি উপজেলায় (আটটি ভ্রাম্যমাণ) মোট ৪৪টি স্পটে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
করদাতা বাড়ানোর পরামর্শ
করের আওতাসহ করদাতার সংখ্যা বাড়াতে রাজধানীতে কর জরিপ পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক।
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়োজিত আয়কর মেলা পরিদর্শনে এসে এক সেমিনারে রাজ্জাক এ পরামর্শ দেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য টিপু মুনশী, সংসদ সদস্য বেগম আক্তার জাহান ও শওকত চৌধুরী। এর আগে ড. আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল মেলা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, ঢাকা শহরে কী পরিমাণ মানুষের আয়কর দেওয়া উচিত এবং কী পরিমাণ মানুষ আয়কর দিচ্ছেন, সে বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করা দরকার।
‘পৃথিবীর সব দেশেই কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা আছে। আমাদের দেশে যাঁরা কর ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের কীভাবে করের আওতায় আনা যায়, সেই কৌশলটি বের করতে হবে। আর এটা বের করতে পারলেই এনবিআর সফল হবে। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণে আয়কর মেলা বিরাট ভূমিকা রাখছে।’
আবদুর রাজ্জাক জানান, বর্তমানের আমাদের দেশে মোট জিডিপির মাত্র ১১ শতাংশ কর আদায় হয়; যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায়ও কম। বর্তমান অবস্থায় ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ কর আদায় সম্ভব।
শেষ দিনের অনুষ্ঠান
এদিকে সন্ধ্যায় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।