আয়কর আদায়ে ব্যাপক সাড়া, ১৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা
আয়কর আদায়ে এবার ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, এবার আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা নিবন্ধিত ১১ লাখ থেকে ২০ লাখে পৌঁছাবে। কর আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার অনুযায়ী বর্তমান সরকার আমলের শেষ বাজেট ৫ লাখ কোটি টাকা দেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব ভবনে সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা প্রদান ও জাতীয় আয়কর সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শুধু ব্যবসায়ী নয়, এবার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট করদাতাদেরও সম্মানিত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবারই প্রথম আয়ের উৎসের ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিক, খেলোয়াড়, শিল্পী, প্রকৌশলী, ডাক্তার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ করদাতাদের ট্যাক্সকার্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সিনিয়র সিটিজেনসহ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীদেরও বিশেষ বিবেচনায় ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা দিয়েছে রাজস্ব বোর্ড। কর প্রদানে সচেতনতা বাড়াতে নীতিমালা সংশোধন করে এবার ২০টির পরিবর্তে ১৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা ও ট্যাক্সকার্ড দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ কোটি লোকের দেশে সামান্য কয়েক লাখ লোক ট্যাক্স দেয় এটা হতে পারে না। ট্যাক্স না দিলে দেশ চলবে কীভাবে?
সম্মাননা পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘এটা অবশ্যই আমাদের এবং অন্য সব খেলোয়াড়কেই ইন্সপায়ার করবে। আশা করি আমরা ইনশাল্লাহ সামনে নিয়মিতভাবে (আয়কর) দিতে পারব।’
থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, ‘যাদের আয় করার ক্ষমতা আছে, তাদের প্রত্যেকের আয়কর দেওয়া উচিত। আয়কর দিলেই তো আমরা স্বাবলম্বী হব এবং এই জাতি বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’
অনুষ্ঠানে করদাতাদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, আয়কর দেওয়া দেশসেবার পরিচয় বহন করে। তার মতে, এবার জনগণের মধ্যে আয়কর প্রদানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব যে এবার আমাদের আয়কর রিটার্ন যারা দেবে তাদের সংখ্যা ১১ লাখ থেকে বেড়ে অন্তত ২০ লাখে পৌঁছাবে। যে প্রবৃদ্ধি আমরা আশা করছি, এই সরকারের শেষ সময়ে ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করতে পারব।’
এবার প্রথমবারের মতো ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর আয়কর সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় কর দিতে মানুষ ভয় পেত। তবে যে হারে করদাতা বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে, মানুষের মধ্যে সে ভয় আর নেই। এখন করদাতাবান্ধব সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। তবে রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো করবান্ধব সেবার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তিনি আরো বলেন, এখন ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস। তাই একজন করদাতাকে প্রতিবছর ওই সময়ের মধ্যেই কর দিতে হবে। তবে কেউ চাইলে সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন। আয়কর সপ্তাহ করা হচ্ছে যাতে মানুষ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর দেন। দেশসেবা করতে মানুষ কর দেবেন, এটাই আমার প্রত্যাশা। আর কর দেওয়া এক ধরনের বাহাদুরীর কাজও বটে। কারণ করের টাকা দিয়েই দেশের উন্নয়ন কাজ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, সরকারের দায় হচ্ছে জনগণের আয়। আর সরকারের আয় হচ্ছে কর। তাই যারা কর দিচ্ছেন সেই সব করদাতাদের আমি অভিনন্দন জানাই। যাঁদের করযোগ্য আয় আছে, অথচ কোনো কারণে দিচ্ছেন না, তাঁদের তিনি কর প্রদানের আহ্বান জানান।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, যাঁরা কর দিচ্ছেন না; তাঁরা যদি কর দিতে এগিয়ে আসেন, তাহলে আমরা আরো দ্রুত সমৃদ্ধশালী হব। করের টাকা দিয়েই বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ আমাদের জনগণকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সেবা দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আয়কর মেলার মতো অনেক সৃজনশীল উদ্যোগের ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে করদাতাদের বেশি আস্থা অর্জন করেছে। জনগণের করের টাকায় দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে দেখে জনগণ আরো বেশি কর দিয়ে সরকারের উন্নয়নের অংশীজন হতে চায়।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, এনবিআর করদাতাদের উন্নততর করসেবা প্রদানে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। করদাতাদের সাথে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আহরণে এনবিআর কর্তৃক সৎ করদাতাদের প্রণোদনা দিতে ট্যাক্স কার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি ও কার্ড প্রদানের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বৈচিত্র্য আনা হবে বলেও তিনি জানান।