ডিজিটাল ব্যাংকের কনসোর্টিয়ামে যোগ দেবে ইস্টার্ন ব্যাংক
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত কনসোর্টিয়ামে যোগ দেবে ব্যাংকটি। আরও ৯টি ব্যাংক নিয়ে এ কনসোর্টিয়াম গঠিত হবে। তাতে স্পন্সর বা উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকবে ইস্টার্ন ব্যাংক।
গতকাল বুধবার (৯ আগস্ট) অনুষ্ঠিত ইস্টার্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম হবে ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি। এর স্পন্সর বা উদ্যোক্তাদের মধ্যে আরও রয়েছে—সিটি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসি ব্যাংক), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন হতে পারে ১২৫ কোটি টাকা। এতে ইস্টার্ন ব্যাংক পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ তথা ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা যোগান দিতে পারে।
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি দিলে প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহীদের কাছ থেকে আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা যাচ্ছে। অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আলাদা একটা পাতা খুলেছে। সেখানে গিয়ে আগ্রহীরা আবেদন জমা দিতে পারবেন। আবেদন ফি বাবদ বাংলাদেশ ব্যাংককে অফেরতযোগ্য পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে হবে।
একেকটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১২৫ কোটি টাকা। প্রচলিত ধারার ব্যাংক করতে প্রয়োজন হয় ৫০০ কোটি টাকা। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রত্যেক উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মূলধন জোগান দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স বা সনদ দেওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে এই ব্যাংককে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার ছাড়তে হবে। আইপিওর পরিমাণ হতে হবে উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক অবদানের ন্যূনতম পরিমাণের সমান।
এই ব্যাংক স্থাপনে উদ্যোক্তাদের অর্ধেককে হতে হবে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বাকি অর্ধেককে হতে হবে ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও বিধিবিধান বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ডিজিটাল ব্যাংককে কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রচলিত ব্যাংকের মতো সময়ে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) বজায় রাখতে হবে।
কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক হতে পারবেন, তা ঠিক করা হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যার মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, রেগুলেশন, গাইডলাইন, সার্কুলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে। লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকরা অন্য ব্যাংকের এটিএম, এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় ও মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে।