প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৭ শতাংশ, গ্রস রিজার্ভ ২৫.৩০ বিলিয়ন
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক প্রবাসী রেমিট্যান্স স্ট্রাইকের ঘোষণা দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত প্রবাসী আয় না পাঠাতে ক্যাম্পেইনও করেছিলেন তারা। গত ৫ আগস্টে হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর তিনি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান। সেই আহ্বান ও নিজেদের দেওয়া কথা রেখে চলেছেন প্রবাসীরা।
চলতি অক্টোবরের প্রথম ২৩ দিনে (১ থেকে ২৩ অক্টোবর) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৮৬ কোটির মার্কিন ডলারের বেশি। যা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি ২৭ শতাংশ। এর প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। এরই ধারায় গতকাল বুধবার (২৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য তথ্য জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রবাসী আয়ের প্রভাবে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ হিসাবমান অনুযায়ী, গতকাল বুধবার রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। এর আগে গত ১ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯ দশমিক ৭০ বিলিয়ন। সেই হিসাবে রিজার্ভ বেড়েছে।
অপরদিক বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বাড়ায় দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স বেড়েছে। চলতি অক্টোবরে প্রথম ২৩ দিনে (১ থেকে ২৩ অক্টোবর) প্রবাসী আয় এসেছে ১৮৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। যা আগের বছরের (২০২৩ সাল) অক্টোবরে প্রথম ২৩ দিনে (১ থেকে ২৩ অক্টোবর) প্রবাসী আয় এসেছিল ১৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে এই সময়ের মধ্যে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৪০ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। আগের বছরের ১ জুলাই থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছিল ৬৩৬ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। যা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাসী আয় দেশে এসেছে ৮৪০ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। একই সময়ে গত বছরের তুলনায় এবার প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩২ শতাংশ।
প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (বিআরপিডি) ও সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, সচেতনতা বাড়ানোর কারণে এখন হুন্ডি বা অবৈধভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা কমেছে। এর ফলে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
প্রবাসী আয় ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, অর্থ পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা গেলে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে। একই সাথে বাড়বে রিজার্ভও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং অক্টোবর ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার এসেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার ডলার, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার ডলার, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।