সুইমিংপুল পরিত্যক্ত, পুকুরে গিয়ে প্রাণহানি
প্রায় ২০ বছর ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সুইমিংপুলটি। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা সাঁতার কাটতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরগুলোতে। পুকুরগুলো অনেক বড় ও গভীর হওয়ায় এবং বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ভালো করে সাঁতার না জানায় এ ক্ষেত্রে থাকে পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা।
গত মাসের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ক্লাবের পুকুরে সাঁতার কাটতে গেলে ডুবে মৃত্যু হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জিসান নামের এক শিক্ষার্থীর। জিসান যদিও সাঁতার জানতেন কিন্তু পুকুরটি দৈর্ঘ্যে বড় হওয়ায় সাঁতার দিয়ে একপাড় থেকে অপর পাড়ে গিয়ে ফিরে আসার সময় ক্লান্ত হয়ে মাঝপুকুরে তলিয়ে যান তিনি। জিসান ডুবে যাওয়ার পর ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে ওই সময়েই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
পুকুরে সাঁতার কাটা শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ক্রীড়াবিদ মো. সিফাতুল্লাহও। তিনি বলেন, ‘সুইমিংপুলের যে গভীরতা তাতে কেউ তলিয়ে যায় না। অজ্ঞান হয়ে গেলে কিংবা অন্য কোনো কারণে তলিয়ে গেলেও খুঁজে পাওয়া যায় সহজেই।’
এদিকে জিসান পানিতে ডুবে যাওয়ায় ভয় পেয়ে শিক্ষার্থীরা পুকুরে সাঁতার কাটাও কমিয়ে দিয়েছে। মো. সিফাতউল্লাহ জানান, এতে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন চমৎকার একটি ব্যায়াম থেকে। তাঁর ভাষ্যে, ‘সাঁতার হলো সকল ব্যায়ামের রাজা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিত্যক্ত পড়ে থাকায় সন্ধ্যা নামলেই সুইমিংপুলটি বহিরাগত, ছিনাতাইকারী, নেশাগ্রস্ত ও অসামাজিক কার্যকলাপকারীদের দখলে চলে যায় । প্রবেশদ্বার ও উঁচু দেয়াল না থাকায় এসব রোধে কিছুই করতে পারছে না শারীরিক শিক্ষা বিভাগ।
‘সুইমিংপুল থাকলে সাঁতার কাটার জন্য জিসানকে ঝুঁকি নিয়ে পুকুরে নামতে হতো না, সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে কারো মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে না’-এমনটাই দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার পর সুইমিংপুলের আশপাশে অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি নারী শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে। সুইমিংপুলটি পরিত্যক্ত পড়ে থাকায়ই এ এলাকায় ঘটনাগুলো ঘটাতে পারছে দুষ্কৃতকারীরা।’
শারীরিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, মূলত সুইমিংপুলে অনেক কাজ বাকি থাকায় এতে পানি ছাড়া যাচ্ছে না। পরিপূর্ণ সুইমিংপুলে পরিণত করতে গেলে গেইট, উঁচু দেয়াল, নারী-পুরুষের আলাদা ড্রেসিংরুম, পুলের পানির ট্যাংকে টাইলস বসানো এবং গ্যালারি বানাতে হবে। এতে প্রয়োজন প্রায় দুই কোটি টাকার মতো। এগুলো না থাকার কারণেই ১৯৭৮ সালে নির্মাণের পর আট বছর চালু রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয় এটি।
এ ছাড়া সুইমিংপুলটি সচল থাকলে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বাইরের লোকদের সাঁতারের সুযোগ দিয়েও অনেক টাকা আয় করতে পারত বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে বরাদ্দের অভাবেই সুইমিংপুলের বাকি কাজ শেষ করা যাচ্ছে না- এমনটাই দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দীক বলেন, ‘এর জন্য আমরা প্রকল্প সাবমিট করেছি, সেটা পাশ হলেই কেবল বাকি কাজ শেষ করা যাবে।’
বরাদ্দ না থাকার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল বলেন, ‘শিক্ষার্থী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় হলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাদ্দ না থাকার কথা বলে। অথচ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজনদের সুবিধা দিতে, বিধিবহির্ভূত ভাবে জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রতি বছর সোয়া দুই কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের পরিবহন সেবা দিতে ভর্তুকি দিচ্ছে সোয়া চার কোটি টাকা। তখন টাকা কোত্থেকে আসে? ভর্তি পরীক্ষার আয়ের যে ৪০ শতাংশ টাকা কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে তার এক টাকাও কোনো বছরই তো জমা দেওয়া হয় না। এই টাকা অবৈধভাবে শিক্ষকরা ভাগ-বাটোয়ারা করে না নিলে এবং বিধি বহির্ভূত ভর্তুকি না দিলে এসব টাকা দিয়েই তো প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন করা যেত।’