৬১ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ পেল টেন মিনিট স্কুল
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম কনজাংশন ক্যাপিটাল, পিক ফিফটিনের সার্জ (পূর্বে সিকয়িয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া) এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ এর আওতায় নতুন করে ৬১ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুল। এর মাধ্যমে প্রি-সিরিজে ফান্ডিং রাউন্ড নিশ্চিত করল এই অনলাইন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। টেন মিনিট স্কুলের সিইও আয়মান সাদিকের ফেসবুক পেজ সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
এর আগে ২০২২ সালে ১৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ পায় টেন মিনিট স্কুল। বিনিয়োগ করেছিল পিক ফিফটিনের সার্জ (পূর্বে সিকয়িয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়া। এটি একটি বাংলাদেশি স্টার্টআপের জন্য সর্বোচ্চ সীড-স্টেজ ফান্ডরেইজিং। দুই বিনিয়োগ মিলিয়ে টেন মিনিট স্কুলের মোট ফান্ডিংয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়মান সাদিক জানান, ‘টেন মিনিট স্কুলে’র মাধ্যমে আমরা সব সময় শিক্ষাকে সবার জন্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এই বিনিয়োগ যে শুধু আমাদের লক্ষ্যকে সমর্থন দিচ্ছে তা নয়, এর পাশাপাশি তা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও দক্ষতা উন্নয়ন খাতে আমাদের ভূমিকাকে উৎসাহিত করেছে। বিনিয়োগকারীদের এই পর্বের বিনিয়োগের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে পড়াশোনা ও দক্ষতা সম্পর্কিত উন্নত সহায়তা দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা এখন আমাদের ভিশনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিওও মির্জা সালমান হোসেন বেগ বলেন, ‘ভিসি উইন্টার এবং বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বিনিয়োগ পাওয়া বেশ রোমাঞ্চকর একটি অভিজ্ঞতা ছিল। সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এটা আমাদের একাগ্রতার একটা পরীক্ষাও ছিল বলা যায়। এই চ্যালেঞ্জটি আমাদের মিশনকে সত্যি করার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়েছে যা আমাদের জন্য একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হিসেবে কাজ করেছে। আমাদের সারাদেশে মানসম্মত শিক্ষাকে অনলাইনে সহজলভ্য করার এই যাত্রাকে সমর্থন করে আমাদের সঙ্গী হওয়ার জন্য আমরা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’
স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ বলেন, ‘টেন মিনিট স্কুল বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে গড়ে তোলার এই জার্নিকে সাপোর্ট করতে পেরে আমরা ভীষণভাবে উচ্ছ্বসিত।’
জানা যায়, গত বছর থেকে বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপসমূহের সামগ্রিক কার্যক্রম ও গতিবিধি ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে বিশ্বব্যাপী মাত্র ০.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার; এই হিসাব অনুযায়ী এড-টেক স্টার্টআপসমূহের ওপর এই প্রভাব পড়েছে আরও ভয়াবহভাবে। এই ম্যাক্রো রিয়েলিটি এবং বাংলাদেশের মতো একটি খুব প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে থাকা সত্ত্বেও টেন মিনিট স্কুল তাদের বিভিন্ন প্রোডাক্ট ও সার্ভিসগুলোর গুণগত মান ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। এবং এর ফলাফলস্বরূপ, দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে টেন মিনিট স্কুলের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। টেন মিনিট স্কুল অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয়েছে ৬৭ লাখেরও বেশি বার, এবং টেন মিনিট স্কুল থেকে নিয়মিত ফ্রিতে শিক্ষাসেবা নিয়েছে তিন কোটি ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। এই অ্যাপের পেইড ইউজার সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি।
২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৬ষ্ঠ-১২শ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইন ব্যাচে লাইভ ক্লাস ও পরীক্ষার মাধ্যমে বোর্ড সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা ও পরীক্ষা প্রস্তুতির নিয়মিত সহায়তা করছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী ও চাকরির প্রত্যাশীদেরও প্রস্তুতিতে সাহায্য করছে টেন মিনিট স্কুল।
সারা দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনা ও সব ধরনের শেখাকে সহজলভ্য করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে এই বিনিয়োগ। দেশের সবচেয়ে বড় অনলাইন শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে টেন মিনিট স্কুলের লক্ষ্য সবসময় শিক্ষিত ও দক্ষ মানুষ গড়ে তোলা।
২০১৫ সালে আয়মান সাদিক ও আবদুল্লাহ আবইয়াদ রাইদের হাত ধরে টেন মিনিট স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকেই টেন মিনিট স্কুল গুণগত পড়াশোনাকে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীদের কাছে সহজলভ্য করে তোলা ও প্রথাগত ও ডিজিটাল শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যকার দূরত্ব নিরসনের লক্ষ্যে কাজ করছে। টেন মিনিট স্কুলের ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী শহরের বাইরে, এবং তার মধ্যে ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মেয়ে। এই বিনিয়োগ একটি শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে টেন মিনিট স্কুলকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।
২০২০ সালের শুরুর দিকে করোনা মহামারিতে দেশের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা নতুন করে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। লকডাউনেও যাতে পড়াশোনা থেমে না থাকে এ চেষ্টায় নতুন নতুন কোর্স ও বই বের করে ই-লার্নিং প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধু এ মহামারীর সময়ে প্রায় ৯০ লাখ নতুন শিক্ষার্থী যুক্ত হয় টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে। ১৭ হাজার নতুন ভিডিও লেকচার যুক্ত হয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে।