চিড়িয়াখানার পলাতক প্রাণীরা
বন্যেরা বনে সুন্দর। কিন্তু মানুষ নিজেদের চিত্তবিনোদনের জন্য বনের প্রাণীকে আটকে রাখে খাঁচায়। অনেকগুলো খাঁচা একটি জায়গায় রেখে সেটার নাম আমরা দিয়েছি চিড়িয়াখানা। এতে মানুষের চিত্তবিনোদন হলেও বন্দিদশায় দিন পার করে প্রাণীরা। নিজেদের পরিবেশ ছেড়ে এক কৃত্রিম পরিবেশে জীবন কাটাতে হয় তাদের। কোনো কোনো প্রাণী কিন্তু এই বন্দিদশা মেনে নিতে চায় না। তারা প্রায়ই খাঁচা থেকে পালানোর চেষ্টা করে এবং কখনো কখনো সফলও হয়। চলুন, ডোডোর সৌজন্যে জেনে নিই প্রাণীদের চিড়িয়াখানা থেকে পালানোর এমন পাঁচটি ঘটনা।
চুভা-ম্যাকাও পাখি
যুক্তরাজ্যের ভ্যানকুভার জু প্যারট গার্ডেনটি পুরোটাই আচ্ছাদিত করে রাখা হয় জালে, যাতে এর পাখিরা কোনোভাবেই উড়ে যেতে না পারে। শুধু তাই নয়, পাখিদের ডানাও ছেঁটে ফেলা হয়। তবে এর কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারেনি চুভা নামের একটি ম্যাকাও পাখিকে। ২০০৯ সালে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় চুভা। তিন দিন অনুসন্ধান করেও তাঁর খোঁজ পায়নি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের ধারণা ছিল, খাঁচা থেকে বের হলেও চিড়িয়াখানার বাইরে বের হতে পারেনি চুভা। কিন্তু দেখা গেল, চিড়িয়াখানা থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে একটি আরভি ইঞ্জিন ক্যাবিনেটে আশ্রয় নিয়েছে চুভা।
পাথর দিয়ে খাঁচার তালা ভাঙল বাঁদর
কাপুচিন প্রজাতির বানরের সঙ্গে পাথরের সম্পর্কও বেশ পুরোনো। পাথর দিয়ে শক্ত বাদাম ভাঙায় বেশ ওস্তাদ তারা। আর নিজেদের এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ব্রাজিলের একটি চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়েছিল একদল কাপুচিন প্রজাতির বাঁদর। বাদাম ভাঙতে ভাঙতে হঠাৎই তারা আবিষ্কার করল, পাথরে শুধু বাদামই ভাঙে না। খাঁচার দরজার তালাও ভাঙে। তালা ভেঙে রাতের অন্ধকারে জঙ্গলে পালিয়ে যায় সব বানর। চার দিন বাদে আবার সবাইকে পাকড়াও করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
মিসি-রেকুন
ইংল্যান্ডের সমারসেটের ট্রপিকোয়ারিয়া চিড়িয়াখানায় থাকত মিসি নামের একটি কোয়ালা। নিজের জীবন নিয়ে মোটেই খুশি ছিল না মিসি। চিড়িয়াখানায় আনার কিছুদিনের মধ্যে ভারি বৃষ্টি ও বন্যার শিকার হয় চিড়িয়াখানাটি। এতে অবশ্য শাপে বর হয় মিসির। বৃষ্টিপাত ও বন্যায় মাটি নরম হয়ে যায়। ফলে নরম মাটি খুঁড়ে গর্ত তৈরি করে মিসি। এমনভাবে গর্তটি তৈরি করে, যা গলে অনায়াসে খাঁচার বাইরে আসতে পারবে সে। পাঁচ সপ্তাহ পর আবারও আটক করা হয় মিসিকে।
বনের বাঘ
এবারের ঘটনাটি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের। ভারতে নন্দনকানন চিড়িয়াখানায় বাঘ নিয়ে আসার কোনো পরিকল্পনা ছিল না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। কিন্তু যখন তারা খবর শুনল যে তাদের পাশের জঙ্গলেই একটি বাঘ ধরা পড়েছে, তখন সেটাকে চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরের জন্য তোড়জোড় শুরু হলো। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নিজেকে খাঁচায় আবিষ্কার করল বাঘটি। কিন্তু বন্দি হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ বাদেই বন্দিদশা থেকে নিজেকে মুক্ত করে বাঘটি। অবাক কাণ্ড, চিড়িয়াখানার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, বাঘটি অনায়াসে ২০ ফুট উঁচু দেয়াল টপকে পালিয়েছে। পরে বাঘটিকে আর আটক করা যায়নি।
কেন অ্যালেন-ওরাংওটাং
ওপরের সবার চেয়ে দুর্ধর্ষ পলায়নকারী বলা যায় কেইন অ্যালেনকে। কারণ একাধারে তিনবার পালানোর রেকর্ড রয়েছে তাঁর। শুধু তাই নয়। নিজে তো বটেই অন্য প্রাণীদেরও চিড়িয়াখানা থেকে পালানোর ট্রেনিং দিত সে। ১৯৮০-এর দশকে বোরনিয়ান প্রজাতির ওরাংওটাংকে নিয়ে আসে সান দিয়েগো চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৫ সালে গ্রীষ্মে প্রথমবারের মতো চিড়িয়াখানা থেকে পালায় অ্যালেন। কেন এতটাই চতুর যে পালানোর পথ হিসেবে সে বেছে নিয়েছিল এমন একটি গাছকে, যার একটি ডাল চিড়িয়াখানার সীমানা দেয়ালের বাইরে ছিল। সেটা ধরেই বাইরে বেরিয়ে আসে অ্যালেন। পরে আটক করা হয় তাকে।