মিকি মাউসের বয়স কত হলো?
মিকি মাউসের বয়স কত হলো জানো কি? এমন প্রশ্ন শুনলে অনেকেই একটু চিন্তায় পড়ে যাবে। মিকি মাউসের আবার বয়স কিসের? সে তো বুড়ো হয়নি। ছোটবেলায় যেমন দেখে এসেছি এখনো ঠিক সে রকমই আছে। কিন্তু মিকি মাউসের বয়স থেমে থাকলেও সময় তো আর থেমে থাকেনি!
মিকি মাউসের জন্ম হয়েছিল আজ থেকে ৮৭ বছর আগে! হ্যাঁ, ১৯২৮ সালের ১৮ নভেম্বর। ১২ বছর আগে ৭৫তম জন্মদিনটি ঘটা করে পালন করেছিল ডিজনি। একটা ইঁদুর কীভাবে এত বছর বেঁচে থাকে? পর্দায় মিকিকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভক্তদের ভালোবাসা। এই চাহিদার কারণেই মিকি এখনো সবার প্রিয় পাত্র।
মিকি মাউসের ৮০তম জন্মদিনে কার্টুন চরিত্রটির উত্থান-পতনের ইতিহাস নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন করেছিলেন বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন টাইম। সেই প্রতিবেদন অবলম্বনে মিকি মাউসের ৮৭ বছরের জীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরা হলো।
১৯২৭ সালে ডিজনিরা দুই ভাই ইউনিভার্সাল পিকচার্সের কাছ থেকে কার্টুন ছবি করার প্রস্তাব পান। সে সময়ে ওয়াল্ট ডিজনির মাথায় কিছু আসছিল না। শেষমেশ একটা খরগোশ এঁকে ফেললেন ডিজনি। নাম দিলেন ‘ওসওয়াল্ড দ্য লাকি র্যাবিট’।
ডিজনি এঁকেছিলেন সাদা মুখের, বড় বোতামের মতো কালো নাক আর লম্বা কানের হাসিমুখো এক খরগোশ। এতে কোনো রং ছিল না। শুধুই সাদা-কালো। প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই সাড়া ফেলে দিল ‘ওসওয়াল্ড’। এই সুযোগটা লুফে নিল ইউনিভার্সাল পিকচার্স। টানা কিছু ছোট কার্টুন সিরিজ আঁকিয়ে নিল ডিজনির কাছ থেকে।
পরের বছর ১৯২৮ সালে আবারও ডিজনির ডাক পড়ল ইউনিভার্সালের দপ্তরে। তবে এবার তারা জানাল ওসওয়াল্ডের জনপ্রিয়তার কারণে তারা এর কপিরাইট কিনে নিয়েছে এবং ডিজনির সব কর্মচারীকে তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ডিজনি চাইলে সেখানে চাকরি করতে পারেন তবে বেতনটা খুবই সামান্য।
প্রস্তাবটা মোটেও পছন্দ হলো না ডিজনির। মেজাজ খারাপ করে ফিরে এলেন। সব অ্যানিমেটর চলে গেলেও উব ইয়র্কস নামের এক বিশ্বস্ত সহচর থেকে গিয়েছিল ডিজনির সাথে। ডিজনি ও ইয়র্কস মিলে দিনরাত খেটে আরেকটি কার্টুন আঁকলেন, যেটা ওসওয়াল্ডের জনপ্রিয়তাকে ছাড়িয়ে যায়।
এবার তাঁরা আঁকলেন একটি ইঁদুর, যার রয়েছে ছোট দুটি কান এবং মোটা একটা শরীর। ইঁদুরের নাম রাখা হলো ‘মর্টিমার’। কিন্তু নামটা পছন্দ হলো না ওয়াল্ট ডিজনির স্ত্রীর। তিনি বললেন নামটা পাল্টে ‘মিকি’ রাখতে। স্ত্রীর কথা ফেলতে পারলেন না ডিজনি, আর তখনই নতুন নাম এবং পরিচয় পেল ওই ইঁদুরটা, নাম হলো ‘মিকি মাউস’।
মিকি মাউসের প্রথম দুটি পর্ব প্রচারিত হওয়ার পরও তেমন কোনো সাড়া পেলেন না ডিজনি। এরপর তৈরি করা হলো ‘স্টিমবোট উইলি’ নামের একটি পর্ব। এটাই ছিল দুনিয়ার প্রথম অ্যানিমেশন ছবি যেখানে শব্দ এবং সংগীত ব্যবহার করা হলো।
নতুন এই মিকি মাউসকে দর্শকরা লুফে নিল। ১৯২৮ সালের ১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে প্রিমিয়ার হয় মিকি মাউসের। প্রথম শোতেই রাতারাতি হিট ‘মিকি মাউস’। পরপর আরো কয়েকটি পর্ব বানানো হয় এই কার্টুন চরিত্রের।
বছর শেষে দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাচ্চার কাছেই মিকি মাউস পরিচিত। ডিজনি এই সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। মিকি মাউসের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘মিকি মাউস ফ্যান ক্লাব’।
১৯৩৫ সালে তরুণ অ্যানিমেটর ফ্রেড ম্যুর মিকি মাউসের আকৃতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনলেন। আগেকার মিকি মাউসগুলো আঁকা হয়েছিল কয়েকটি বৃত্ত মিলিয়ে। এর ফলে মিকিকে নাড়ানো বা দৌড়ঝাঁপ করানোটা একটু মুশকিলই ছিল।
ম্যুর মিকিকে দিলেন নাশপাতির মতো একটা শরীর। লম্বাকৃতির চোখ এবং কালো মণি, সাদা গ্লভস এবং খাটো নাক। ম্যুরই প্রথম মিকিকে রঙিন করে তুললেন।
১৯৩৭ সাল নাগাদ বছরে মিকির ১২টা গল্প বানাত ডিজনি স্টুডিও। মজার ব্যাপার হলো, এসব কার্টুনে মিকির চরিত্রে কণ্ঠ দিতেন ওয়াল্ট ডিজনি নিজেই। গল্পের খাতিরে মিকি হয়ে ওঠে একজন ফুটবলার, শিকারি, দর্জি ও সংগীতজ্ঞ।
১৯৫০ সালের দশকে মিকির নামে থিম পার্ক হয়ে গেল, পত্রিকায় নিয়মিত কমিক ছাপা হতো মিকিকে নিয়ে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল মিকি মাউস ক্লাব। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্টরা পর্যন্ত মিকির সাথে ছবি তুলেছেন।
কিন্তু ১৯৫৩ সালে ‘বাম্বি’ ও ‘স্লিপিং বিউটি’র মতো সিনেমার কাজ নিয়ে ডিজনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে মিকি মাউসের আর কোনো নতুন পর্ব তৈরি হয়নি পরের ৩০ বছরে। দীর্ঘ এই বিরতির পর ১৯৮৩ সালে ‘মিকি মাউস’ আবার ফিরে আসে। ক্রিসমাসের জন্য তৈরি করা হয় ‘মিকিস ক্রিসমাস ক্যারোল’ নামের নতুন পর্ব।
তবে মিকির নতুন পর্ব না হলেও মিকির জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে তার বাণিজ্যিক ব্যবহার। বাচ্চাদের স্কুলের ব্যাগ, খাতা, পেনসিল, জুতা সবকিছুতেই জায়গা করে নেয় মিকি মাউসের কার্টুন। এখনো পৃথিবীর সব প্রান্তে ছোট-বড় সবার কাছে একই রকম জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে ডিজনির মিকি মাউস। অবশ্য মিনি মাউসের জনপ্রিয়তাও কিন্তু কম নয়। যাক সে কথা, আজ শুধু মিকি মাউস নিয়েই কথা হলো অন্যদিন বলব মিনির কথা।