আইনি জিজ্ঞাসা
ওজনে কম দিলে শাস্তি কী?
রফিক (ছদ্মনাম) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাকরির ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন বাজারে যেতে পারেন না। ফলে ছুটির দিন শুক্রবারই ভরসা। বাসার কাছে হওয়ায় সাধারণত তিনি কাওরানবাজার থেকেই বাজারটা সেরে নেন। অন্য যেকোনো সপ্তাহের চেয়ে মাসের প্রথম শুক্রবারে একটু বেশিই বাজার করা হয়। কেননা, এদিন সারা মাসে পরিবারে লাগে এমন অনেক কিছুই কিনতে হয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে চাল। আড়ত থেকে একটু কম দামে পাওয়া যায় বলে দুই মণের (৮০ কেজি) বস্তা নেন। তারপর একটি রিকশায় সব বাজার নিয়ে বাসায় চলে আসেন।
বাসায় এনে চাল ড্রামে রাখার সময় সন্দেহ হলো। অন্যবার দুই মণ চাল আনলে ড্রাম ভরে যায়, এবার ড্রামের বেশ কিছুটা ফাঁকা। কিন্তু সেটা দোকানদারকে কীভাবে বলবেন? চাল নিয়ে তো বাসায় চলে এসেছেন। বাজারে যে ওজন করাবেন সেটাও মাথায় আসেনি। তবু এত দামের চাল, দুনোমুনো করে দোকানদারকে গিয়ে কথাটা বললেন রফিক। দোকানি অভিযোগ শুনবেন তো দূরের কথা, উল্টো অপমান করে বের করে দিলেন। বেশ কষ্ট পেলেন রফিক।
বাসায় গিয়ে আবার চালটা দেখলেন। না, ওজন কমই হবে। অপমানিত হয়ে রফিকের মাথায় জিদ চেপে যায়। তিনি চালটা বস্তায় ভরে পাশের পরিচিত এক দোকানে নিয়ে যান মাপানোর জন্য। দেখলেন, দুই মণের বস্তায় চাল আছে ৭৭ কেজি, অর্থাৎ তিন কেজি কম।
রফিক ভাবলেন, এক দোকান থেকে এতদিন ধরে চাল কিনছেন। কোনোদিন দামাদামি করেননি, সন্দেহও করেননি। আর এই সুযোগে দোকানি এভাবে ঠকাবে? অভিযোগ করতে গেলে আবার অপমানও করল! দোকানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবলেন রফিক। কিন্তু সেটা কীভাবে?
রফিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। আইনজীবীর কাছে গিয়ে জানতে পারলেন, এ ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ২৬৪, ২৬৫,২৬৬ ও ২৬৭ ধারা অনুসারে নিকটস্থ মুখ্য মহানগর হাকিম ও মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে ফৌজদারি মামলা করা যাবে।
ফৌজদারি আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের করতে হয়। সে অভিযোগ শুনে আদালত অভিযোগ থাকা ব্যক্তিকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিতে পারেন। সে নির্দেশ মোতাবেক হাজির না হলে, সে ক্ষেত্রে বিচারক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
দণ্ডবিধির ২৬৪ ধারায় ‘ওজনের জন্য প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা যন্ত্র ব্যবহার’ করার বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে কোনো ব্যক্তি যদি প্রতারণামূলকভাবে ওজনের জন্য এমন কোনো যন্ত্র ব্যবহার করেন, মিথ্যা বলেন- তবে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ২৬৫ ধারা অনুসারে ‘প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা ওজন কিংবা মাপ ব্যবহার’ করার বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রতরণামূলকভাবে কোনো মিথ্যা ওজন কিংবা দৈর্ঘ্যের বা ধারণশক্তির মাপকে উহা অপেক্ষা ভিন্ন ওজন কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারণশক্তির মাপ হিসেবে ব্যবহার করেন, তবে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ২৬৬ ধারা অনুসারে, ‘মিথ্যা ওজন কিংবা মাপ করা’ বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো ওজন, পরিমাপ যন্ত্র বা বাটখারা কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারনক্ষমতা মাপবার যন্ত্র রাখে, যা মিথ্যা বলে সে জানে এবং উহা যাতে প্রতারণামূলকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে তার জন্যই রাখে, তবে সেই ব্যক্তির এক বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম অথবা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
দণ্ডবিধির ২৬৬ ধারা অনুসারে, ‘মিথ্যা বাটখারা কিংবা মাপ তৈরি কিংবা বিক্রয় করা’ বিষয়ে বলা আছে। এ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো ওজন বা বাটখারা কিংবা দৈর্ঘ্য বা ধারনশক্তির পরিমাপ যন্ত্র তৈরি করেন, বিক্রয় করেন বা লেনদেন করেন, যা মিথ্যা বলে তিনি জানেন এবং উহা যাতে সত্য বলে ব্যবহার করা যায়, সে উদ্দেশ্যেই তা করেন অথবা উহা সত্য বলে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হবেন।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট