পাবনায় মেয়রের তৈরি অবৈধ নৌবন্দর গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো
পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেনের উদ্যোগে গড়ে তোলা অবৈধ নৌবন্দর উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
আজ সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় বুলডোজার দিয়ে হুরাসাগর নদের তীরের বৃশালিখা বেসরকারি ‘রাজঘাট’ নৌবন্দর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে বিপুল পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ধরনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন বিআইডব্লিউটিএর অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ নৌবন্দর তৈরি করেন। দীর্ঘদিন ধরে তা পরিচালনা করে আসছিলেন। এতে সরকারের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছিল। কয়েক দফা নোটিশ দেওয়ার পরও তা বন্ধ না করায় অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। গত ১০ বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়েছে। এজন্য মামলা করা হবে।’
এ ছাড়া অভিযান চলাকালে অবৈধ বন্দরে পণ্য খালাস করতে আসা নয়টি জাহাজ জব্দ করা হয়। সেইসঙ্গে রাজঘাট বন্দরের নয় শ্রমিককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে অভিযান চলাকালে স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তারা বিক্ষোভ করে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, ‘বৃশালিখা রাজঘাটে প্রতিদিন কমপক্ষে আট থেকে ১০ কোটি টাকার পণ্য ওঠানামা হয়। এতে কয়েক হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। হঠাৎ করেই এমন উচ্ছেদে তারা কর্মহীন হয়ে পড়বে। অন্তত কিছুদিন সময় দেওয়া উচিত ছিল।’
বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের কাছে তারা সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থাকে নৌবন্দর পরিচালনার অনুমতি দেননি। স্থানীয় সরকার খেয়া পারাপারের জন্য ঘাট ইজারা দিতে পারে কিন্তু বৃশালিখা রাজঘাটে যেভাবে বন্দরের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
বিআইডব্লিউটিএর এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘বাঘাবাড়ি ঘাটে নোঙর করা প্রতিটি মালবাহী জাহাজকে প্রতিটন মাল খালাসের জন্য ৩৪.৫০ টাকা দিতে হয়। বৃশালিখা ঘাটের কারণে গত ১০ বছরের সরকারের অন্তত ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।’
উচ্ছেদ অভিযান পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর মাহবুবুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত আইনানুসারে কেবল বিআইডব্লিউটিএ দেশে নৌবন্দর পরিচালনায় বৈধ কর্তৃপক্ষ। বৃশালিখা ওই ঘাটের কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। কোনোভাবেই আর এই অবৈধ কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না।’
এ ব্যাপারে বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আনোয়ার হোসেন তারা সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে, ঘাট থেকে অর্জিত রাজস্ব অবশ্যই স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ পাবে। যেহেতু বৃশালিখা ঘাট পৌর এলাকার মধ্যে তাই পৌরসভা সেখান থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করেছে।’