জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেছেন, জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে- এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার টিআইবিকে (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) কে দিয়েছে? টিআইবি নিজেরাই নাচের পুতুল।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এ কথা বলেন। টিআইবির সংসদ অধিবেশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পার্লামেন্ট ওয়াচের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। টিআইবি গতকাল রোববার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

আ স ম ফিরোজ বলেন, টিআইবির মন্তব্যে বাংলাদেশ সংবিধান ও চলমান জাতীয় সংসদকে অবজ্ঞা করা হয়েছে এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপমানিত করা হয়েছে।

চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। সেই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জাতীয় সংসদে সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। এই সংসদকে অবমাননা করা দেশের সমগ্র জনগণকে অবমাননা করার শামিল এবং সাংবিধানিকভাবে জনগণের নির্বাচিত সংসদকে হেয় প্রতিপন্ন করে কোনো মন্তব্য করা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। এ ধরনের অসাংবিধানিক মন্তব্যকে আমরা তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাই।’

আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে’- এ ধরনের মন্তব্য করার অধিকার টিআইবিকে কে দিয়েছে? টিআইবি নিজেরাই নাচের পুতুল। এখানে প্রতীয়মান হয় প্রভুদের সুতার টানেই তারা নাচে। জাতীয় সংসদ অকার্যকর নয়, সংসদ ভালোভাবে চলছে। চেয়ার ভাঙাভাঙি নেই, গালিগালাজ নেই। দেশের উন্নতি হচ্ছে। বিল নিয়ে কমিটিতে আলোচনা হয়। সেখানে সরকার ও বিরোধীদলীয় সদস্যরা থাকেন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদেরও ডেকে আনা হয়। বিলটি যখন পাসের জন্য উত্থাপন করা হয়, তখন সরকারি দলের সদস্যদের তেমন একটা দায়িত্ব থাকে না। বিলের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকলে সেটা বিরোধী দলের দায়িত্ব।’

তবে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘টিআইবির কিছু পর্যবেক্ষণ যৌক্তিক। আমরা সাংসদদের বলব তারা যেন নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। সংসদীয় কমিটির কোনো সদস্য ব্যবসায়িকভাবে লাভবান কি না, আমাদের কাছে সে রকম কোনো তথ্য নেই। যদি আপনাদের কাছে থাকে তাহলে আমাদের দিন। আমরা তাদের সরিয়ে দেব।’

টিআইবি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নের কলুষিত করেছে জানিয়ে আ স ম ফিরোজ দাবি করে বলেন, ‘টিআইবির আয়ের উৎস কী, সেটা মানুষ জানতে চায়। তাদের টাকা কোথা থেকে আসে, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। টিআইবি প্রভুদের সুতার টানে নাচে।’

টিআইবির প্রতিবেদন সম্পর্কে চিফ হুইপ বলেন, ‘সম্প্রতি দুজন বিদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। তাজিয়া মিছিলে হামলা করা হয়েছে, সেখানে একজন মারা গেছে। আন্তর্জাতিক মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের দেশীয় চক্র এ কাজ করেছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য। এ ধরনের পরিস্থিতিতে টিআইবি এ প্রতিবেদন দিয়েছে এবং সংসদ সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি সংসদের বাইরে বসে সংসদের সমালোচনা করবে, গাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারবে, বিদেশিদের হত্যা করবে, মৌলবাদীদের দোসর হিসেবে কাজ করবে, কিন্তু এসব নিয়ে টিআইবি কিছু বলে না।’

‘আন্তর্জাতিক মহল কারা’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফিরোজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে, তারাই আন্তর্জাতিক মহল।

সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘কীভাবে আইন হবে, সেটা টিআইবির কাছ থেকে শিখতে হবে না। অনুরোধ করব আগামী নির্বাচনে টিআইবির প্রতিনিধিরা যেন অংশ নেয়। শুনেছি টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের ঢাকা শহরে একটি ফ্ল্যাট আছে। তিনি ফ্ল্যাটের মূল্য কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছেন। তাঁর ফ্ল্যাট কেনার আয়ের উৎস কী, সেটা আমরা জানতে চাই।’