পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র
পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বাধা দেওয়ার কথা বলে ২০১৫ সালের ওই পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে বেরিয়ে যান এবং দেশটির বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু, জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে আসার পর পরমাণু চুক্তিতে আবার যোগ দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করেন। এবার যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিল, তারা ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে চায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও জার্মানির আমন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করবে।’
তবে ইরান এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ইরান ২০১৯ সালে চুক্তি ভেঙে ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়ায়। গত কয়েক মাসে ইরান তাদের ইউরেনিয়াম মজুদ অনেকটা বাড়িয়েছে। এর পাশাপাশি ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজও করছে। পরমাণু বোমার জন্য যেটা জরুরি।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি ভিডিও-বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তারপর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরান যদি ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি মানে, তা হলে যুক্তরাষ্ট্রও চুক্তিতে ফিরবে এবং ইরানের সঙ্গে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্রকেই আলোচনার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। ইউরোপের দেশগুলো আগে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালন করুক এবং ট্রাম্প যেভাবে ইরানের ওপর যাবতীয় দায় চাপিয়ে দিয়ে আর্থিক সন্ত্রাসবাদের পথ নিয়েছিলেন, তা থেকে সরে আসুক যুক্তরাষ্ট্র। আমরা আগে কাজ দেখতে চাই।’
যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেকোনো আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাবে। ওই কর্মকর্তা রয়টার্সকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই জাতীয় বৈঠক হলে আমরা সেখানে উপস্থিত থাকব।’ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই জাতীয় বৈঠক আয়োজনের জন্য প্রস্তুত আছেন এমন ইঙ্গিত দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ওই মন্তব্য আসে। ইরানের সঙ্গে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ার বাইডেনের ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছে লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিন। তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে আসার পর এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপের পর ইরান ২০১৯ সাল থেকে এই চুক্তি লঙ্ঘন শুরু করে।
তেহরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চুক্তির শর্তগুলো লঙ্ঘনের মাত্রা বাড়িয়েছে এবং চুক্তিটি সংরক্ষণে প্রথমে কার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সে বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে একরকমের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে।