গ্রাফিক্সে এনটিভির নিজস্বতা রয়েছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ১৯৯৮ সালে ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগ থেকে এমএফএ ডিগ্রি অর্জন করি। পরের বছর ১৯৯৯ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি প্রাইভেট টেরিস্ট্রিয়াল টিভি একুশে টেলিভিশনে চাকরি শুরু করি। একুশে টেলিভিশনে থাকতে প্রথম অনলাইন গ্রাফিক্স সিস্টেম পিক্সেল পাওয়ার কোলাজের (সিজি) ওপর প্রশিক্ষণ নিই।
২০০২ সালের ডিসেম্বরে একুশে টেলিভিশন বন্ধ হয়ে যায়। এনটিভির প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০৩ সালের ১৫ জানুয়ারি এনটিভিতে কাজ শুরু করি, পরে চিফ গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
গ্রাফিক্স বিষয়টি নান্দনিকতার সঙ্গে যুক্ত। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান পরিকল্পনাগুলো সুন্দর ও সার্থকভাবে নিজস্বতা বজায় রেখে উপস্থাপন করা। লোগো (গ্রাফিক্স) দিয়ে দর্শক প্রথম চিনতে শুরু করে টেলিভিশনের নাম ও রং। একটি টেলিভিশনের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে গ্রাফিক্সের ওপর।
শুরুতে গ্রাফিক্স খুব সাধারণভাবে উপস্থাপন করা হতো। স্থির গ্রাফিক্সের সঙ্গে টুডির মাধ্যমে নিউজ ও প্রোগ্রামের অনুষ্ঠান গ্রাফিক্স করা হতো। এরপর থ্রিডি সফটওয়্যার সংযোগ শুরু হয়। ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, আফটার অ্যাফেক্টস টুডি কাজের জন্য ব্যবহার হতো এবং থ্রিডি ম্যাক্স থ্রিডি কাজের জন্য ব্যবহার হতো। গ্রাফিক্স শেখার ক্ষেত্রে অনেক গবেষণার মাধ্যমে কাজ শিখতে হতো। বাংলাদেশে প্রফেশনাল ট্রেনিং হাউস ছিল না। নিজের তাগিদে সিডি কিনে বই পড়ে শিখতে হয়েছে। আমাদের দেশে সে সময় বিটিভি একমাত্র জাতীয় গণমাধ্যম ছিল। গ্রাফিক্স উপস্থাপনের ভিন্নতা শুরু হয় বেসরকারি গণমাধ্যমের মাধ্যমে।
বর্তমানে টেকনোলজির অগ্রগতির ফলে গ্রাফিক্স পিসি ও সফটওয়্যারের অনেক উন্নতি হয়েছে, তাই কাজের মধ্যে ভিন্নতা এসেছে। অনলাইন গ্রাফিক্সের ক্ষেত্রে ভিজার্টি সংযুক্ত হয়েছে, যা নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গ্রাফিক্স ভাবনায় আমারা টেকনোলজিতে সমৃদ্ধ হয়েছি অনেকটাই। সব টিভির লোগোগুলো তুলে দিলে আমরা এখন প্রায় কাছাকাছি কাজ দেখতে পাব। এখানে আমাদের নিজস্বতা নিয়ে আরো কাজ করার সুযোগ আছে।
একুশে টেলিভিশন বন্ধ হওয়ার পর এনটিভির শুরুতে এই গবেষণার মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। নতুন চ্যানেলে, নতুন উদ্যমে আমরা সবাই কাজ শুরু করি। আমাদের চেয়ারম্যান স্যার ও এমডি স্যার গ্রাফিক্সে কাজের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, যা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিল। আমরা গ্রাফিক্স সদস্যরা দিনরাত গবেষণার মধ্যে ডুবে থাকতাম। নতুন নতুন সফটওয়্যার সংযোগ শুরু হয় টুডি ও থ্রিডি কাজের ক্ষেত্রে। একটা নতুন সুবিধা যুক্ত হলো ইন্টারনেট, যা আমাদের নতুন নতুন টিউটোরিয়াল ও কাজ দেখার পথকে সহজ করল। চিন্তায় ভিন্নতা, সঙ্গে সফটওয়্যারের ধারণা বৃদ্ধির ফলে গ্রাফিক্সের কাজ একধাপ এগিয়ে গেল। বাংলাদেশে গ্রাফিক্সের এই ভিন্নতা টেলিভিশনগুলোকে স্বতন্ত্র একটা জায়গায় নিয়ে এলো। একই ধারাবাহিকতায় এনটিভি নিজস্বতা বজায় রেখে কাজ করে চলেছে।
এনটিভিতে শুরু থেকে আমরা এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। গ্রাফিক্স ও ডিজাইনের সঙ্গে অনুষ্ঠানের সমন্বয়ের জায়গায় অনেক গবেষণার সুযোগ আছে। আমরা আমাদের নিজস্বতা নিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে যাব ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’।
লেখক : গ্রাফিক্স বিভাগের প্রধান, এনটিভি