জমে উঠেছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের নির্বাচন
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে আগামী ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজ্য নির্বাচন। অস্ট্রেলিয়ার দুটো প্রধান দল হচ্ছে লেবার ও লিবারেল পার্টি। তবে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বেশি অভিবাসী অধ্যুষিত নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য হচ্ছে লেবার পার্টির ঘাটি। ১৯৪১ সালে থেকে ২০১১ পর্যন্ত পাঁচ দশকেরও বেশি ক্ষতায় ছিল লেবার পার্টি। কিন্তু ২০১১ সালে ন্যাশনাল পার্টির সাথে জোট বেঁধে লিবারেল পার্টি ক্ষমতাসীন হয়্। সেই থেকে গত বারো বছর ধরে জোট সরকারের দখলে রাজ্যের পার্লামেন্ট। তাই এবার ক্ষমতার ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে লড়ছে বিরোধী দল লেবার পার্টি।
ফেডারেল (কেন্দ্রীয় সরকার), স্টেট (রাজ্য সরকার) এবং লোকাল গর্ভনমেন্ট (স্থানীয় সরকার ) এই তিনটি স্তরের সরকার দিয়ে পরিচালিত হয় অস্ট্রেলিয়ার গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। নিউ সাউথ ওয়েলসে প্রতি চার বছর অন্তরএকবার মার্চ মাসের চতুর্থ শনিবার একটি রাজ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিতহয়। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যটি ৯৩ টি নির্বাচনী জেলায় বিভক্ত, যাকে ইলেক্টোরেটস ও বলাহয়। পার্লামেন্টে রয়েছে দুটো স্তর - আইনসভা (Legislative Assembly) যাকে নিম্নকক্ষ ও বলা হয়। আর অন্যটি হল ৪২সদস্যের আইন পরিষদ (Legislative Council)। একে উচ্চকক্ষ ও বলা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনো যুক্তিসিদ্ধ কারণ ছাড়া ভোট দিতে ব্যর্থ হলে ৫৫ ডলার জরিমানা গুনতে হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দেওয়ার পদ্ধতি তেমন একটা সহজ নয়। ব্যালট পেপারে নিজের পছন্দের প্রার্থী কিংবা দলকে চিহিৃত করার সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে ভোটারের জন্য বিষয়টা দুরূহ মনে হতে পারে। যার ফলে গণনার সময় বহু ভোট তিল বলে গণ্য হয়।
অস্ট্রেলিয়া সরাসরি ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে ডাকযোগে, অনলাইনে, টেলিফোনে এবং নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে নির্বাচনের আগেই আগাম ভোট প্রদানের সুযোগ রয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ,গত বছর প্রায় ২০ শতাংশ ভোটার ডাকযোগে, অনললাইন ও ইন্টারনেটে ভোট দিয়েছেন।
সিডনি শহরে যে নির্বাচন হচ্ছে তা চারপাশ দেখে বুঝবার জো নেই। এখানে নেই উত্তপ্ত শ্লোগান, নেই মাইকে নির্বাচনী প্রচারণা, কিংবা প্রতিযোগী দলগুলোর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে ভোট গ্রহন পর্ব বলতে একবারেই নিরুত্তাপ। এখানে দেয়ালে পোস্টার লাগানো কিংবা চিকা মারা নিষিদ্ধ। তাই নির্বাচনের সময় রাস্তা ঘাটে নির্বাচনী পোস্টার চোখেই পড়েনা। এখানকার নির্বাচনী প্রচারণা অনেকটা নিঃশব্দেই চলে। অধিকাংশ প্রার্থীরা ট্রেন কিংবা বাস-স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভোটারদের হাসিমুখে স্বাগত জানান আর হ্যান্ডবিল বিলি করেন। অনেক প্রার্থী সমর্থকদের বাড়ির উঠোনো পোস্টার লাগিয়ে রাখেন। এছাড়া অনেকে স্থানীয় টাউন হল কিংবা কমিউনিটি হলে সীমিত আকারে নির্বাচনী প্রচারণা সভার আয়োজন করেন। তবে অধিকাংশ প্রার্থী নিজস্ব কমিউনিটির মধ্যেই মূলত গনসংযোগ করেন। নির্বাচনের দিন পোলিং সেন্টারের বাইরে দেখা যায় প্রার্থীদের রং-বেরংয়ের পোস্টার। ভোটিং সেন্টারে ঢোকার মুখে এজেন্টরা ভোটারদের হাতে গুঁজে দেন প্রার্থীদের পরিচিতি। এই হল অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনী প্রচারণার সামগ্রিক চিত্র।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ানরা এখন ধীরে ধীরে মূল ধারার রাজনীতির সাথে সংযুক্ত হচ্ছেন।
গত বছর নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পাঁচজন বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের রাজ্য সরকার নির্বাচনে সিডনির বাংলাদেশি অধ্যুষিত ম্যাকোয়ারী ফিল্ডস এলাকায় লিবারেল পার্টি থেকে একজন বাংলাদেশি প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন।
নির্বাচনের আর মাত্র ক’টা দিন বাকী । জমে উঠেছে ভোটারদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল লেবার ও লিবারেল পার্টির পাল্টাপাল্টি অঙ্গীকার দেওয়ার লড়াই। মূখ্য মন্ত্রী ডমিনিক প্যারেটের জোট সরকার সিডনিতে মেট্রো ও লাইট রেল তৈরী পরিবহন খাতে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে লেবার পার্টির নেতা ক্রিস মিন্সও পিছিয়ে নেই। ভোটারদের মন জয় করার জন্য সমপরিমান অর্থ ব্যয় করার অঙ্গীকার করেছে লেবার পার্টি।
ডমিনিক প্যারটে মুখমন্ত্রীর পদে সমাসীন হয়েছেন খুব বেশী দিন হয়নি। অস্ট্রেলিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউ-এরসাম্প্রতি জরীপে মুখ্যমন্ত্রী ডমিনিক ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী হিসাবে বিরোধী দলীয় নেতা ক্রিস মিন্স থেকে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও তাঁর দল লেবার পার্টি থেকে ৬ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে। তবে বিজয়ের হাসি কে হাসবে তা ২৫ মার্চের রাতেই জানা যাবে ।
লেখক: সিডনি প্রবাসী প্রকৌশলী ও গবেষক