প্রতিক্রিয়া
টিকা নিয়ে বেশ ভালো আছি, চমৎকার আছি
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আজ বুধবার বিকেলে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। আজ কুর্মিটোলা হাসপাতালে ২৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাংবাদিক হিসেবে আমিও ছিলাম।
করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করা বা না করা নিয়ে আমার ভেতরে কোনো সংশয়বোধ ছিল না। কিন্তু সংশয়বোধ দেখেছি আশপাশের পরিবেশ কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। করোনার টিকা কতটা কার্যকর হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটুকু, ভারতের টিকা বিশ্বাস করা যাবে কিনা; এসব আলোচনা যেন সর্বত্রই।
এসব আলোচনা ভারতের টিকা প্রয়োগের পরপরই শুরু হয়। কারণ, সেখানে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এরপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আমার কিছুটা আগ্রহবোধ জন্মায়। তারপর থেকে ঘাটাঘাটি শুরু। ভারতের কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কথা বলেছিলাম। কথা বলেছিলাম, কলকাতার একজন টিকাগ্রহীতার সঙ্গেও।
তারপর ভাবলাম, স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গে কথা বলা দরকার। যেই ভাবনা সেই কাজ, কথা বললাম ভারতের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একজন সেন্ট্রাল সদস্যের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তাঁর একমাত্র ছেলেও টিকা গ্রহণ করেছেন। তিনিও টিকা গ্রহণ করবেন। তাঁর কথায় বেশ আশ্বস্তবোধ করলাম। তিনি আরো জানালেন, যাদের মধ্যে টুকটাক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তা খুবই নগন্য সংখ্যার। হালকা মাথা ব্যথা, কাশি ও জ্বর জাতীয় কিছু উপসর্গ মাত্র।
ভারতের মাঠপর্যায়ের এসব তথ্য এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সে সময় তিনি আচমকা আমাকে প্রথম দিনেই টিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। ৩০ সেকেন্ডের মতো চুপ ছিলাম আমি। চুপ থাকার ওই সময়ে মাথার ভেতরে ঘুরছিল শুধু নেতিবাচক সমালোচনা। কেন যেন জিদ চেপে বসল। বলেই বসলাম, ‘হ্যাঁ, আমি নিতে আগ্রহী।’
আমার আগ্রহের কথা আশপাশের অনেকজনকে জানিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে থেকে আমাদের অনলাইনের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মো. মাহবুব আলম রনী ভাইসহ দুই-তিনজন আমাকে উৎসাহিত করেছিল। বেশিরভাগই প্রথম দিকে টিকা নিতে নিষেধ করেছিলেন। তারপর জিদটা যেন আরো চেপে বসে। যখনই সুযোগ পাব, টিকা নিতেই হবে-এমন মনোভাব শক্ত হয়ে আসন গাড়ে মনের ভেতরে। ক্ষতি হলে আমার হোক। তবু আমার শরীরে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তা আমি অনুভব করতে চাই। বুঝতে চাই।
গতকাল সন্ধ্যায় অফিস নির্ধারণ করল, আমাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে টিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কাভার করতে হবে। কারণ, আজ সকাল পর্যন্ত আমি জানতাম না; প্রথম দিনই টিকা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। শুধু জানতাম, কারা টিকা পাবেন তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তখনো শেষ হয়নি।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে অফিসের উদ্দেশে বের হবো, এমন সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম ও ঠিকানা চাইলেন। একইসঙ্গে বললেন, দুপুর ২টার মধ্যে কুর্মিটোলা হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে। বাকি কাজ তাদের লোকজনই সারবেন। দুপুর ১টার ভেতরে পৌঁছে গেলাম কুর্মিটোলাতে। গিয়ে খবর সংগ্রহের কাজ করলাম। সেই খবর অফিসে পাঠালাম। সে সময়ও শুনলাম, হাসপাতালে উপস্থিত অনেকের ভেতরে করোনার টিকা নিয়ে নানা নেতিবাচক কথা। তখন পর্যন্ত আমি কাউকে বলিনি, একটু বাদেই আমি টিকা নিতে ঢুকব।
দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে গেলেন টিকা সংশ্লিষ্টরা। প্রথমেই আমার নামটি রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিলেন। তারপর কিছু নির্দেশনা দিলেন। দুপুরের খাবার দিলেন। এরপর ৩টার দিকে নিয়ে গেলেন টিকাকেন্দ্রের পাশে। প্রধানমন্ত্রী টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন। তারপর সবার ভেতরে বেশ উৎসাহ দেখা গেল। সেখানে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ও টিকাগ্রহীতারা ছিলেন শুধু। একজন নার্সের মাধ্যমে টিকা কার্যক্রম শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রী তা হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দেখলেন এবং উৎসাহ দিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, খুবই সহজ পদ্ধতিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
এভাবে একে একে আমার টিকা নেওয়ার পালা চলে এলো। নাম ধরে ডাকলেন আমাকে। আমি টিকাকেন্দ্রে গেলাম। সুঁচ ঢোকালেন আমার বাঁ হাতে। মনে হলো, পিঁপড়া কামড়ালো। মাংসপেশী ফুটো করলে এতটুকু হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্যথা বলতে ওইটুকুই। টিকা নিয়েছি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে। এই লেখাটি যখন লিখছি তখন রাত ১০টা। এই সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় মধ্যে আমার পুরো শরীরের কোথাও শিরশির থেকে শুরু করে কোনো ধরনের ব্যথা অনুভূত হইনি। শুধু ব্যথা নয়, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, জ্বর বা কাশির মতো কোনো কিছুই আমার শরীর অনুভব করেনি। মন তো করেইনি!
মোদ্দাকথা হচ্ছে, টিকা গ্রহণের আগে যেমন ছিলাম, টিকা গ্রহণের পরেও তেমন আছি; মাঝে শুধু টিকা নিলাম। কোনো ধরনের শারীরিক পরিবর্তন আমার চোখে পড়েনি। আমি বেশ ভালো আছি, চমৎকার আছি। অন্যদের শারীরিক অবস্থা কেমন, তা আমি এখন বলতে পারব না। বিকেলে পরে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে কিনা তা আমি জানি না। তবে টিকা নেওয়ার পরপরই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল, তারাও আমার মতো স্বাভাবিক রয়েছেন। পরবর্তী পরিস্থিতি অবশ্য আমি জানি না।
টিকা নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি বুঝে আমার মনে হয়েছে, অনেকের নানাবিধ সমালোচনা অযৌক্তিক। অযৌক্তিক না বলে একটু হালকা করে বলি, টিকাটি প্রয়োগের পর চূড়ান্ত সমালোচনাই হবে নান্দনিক। টিকা না নিলে খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োগের আগে অবশ্যই আলোচনা করবেন। বুঝবেন, জানবেন। কিন্তু অযাচিত সমালোচনা কোনো কাজে আসে না। বরং আরো কিছু অযাচিত প্রেক্ষাপটের যোগান দেয়। আমার সবশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে শেষে এটাই বলব, চাইলে আপনিও টিকাটি নিতে পারেন। করোনা হটাও স্লোগানে শামিল হতে পারেন আপনিও।