মেয়র নির্বাচন
আগামীকাল আশা-আশঙ্কার নাসিক নির্বাচন
আগামীকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচন নিয়ে আশা-আশঙ্কায় রাজনৈতিক মহল। নতুন নির্বাচন বিধি অনুযায়ী স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন দলীয় পরিচয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নাসিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। স্থানীয় নির্বাচন হলেও দলীয় প্রতীকের কারণে গোটা দেশে এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তীব্র প্রতিযোগিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আইভী ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রিয়। আওয়ামী ঘরানার বাইরে তাঁর একটি জগৎ আছে। ক্ষমতাসীনদের ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তা আইভীর জন্য একটি বড় আশঙ্কা। জয়ের ব্যাপারে অতি আশাবাদী বিএনপি। বিএনপির প্রার্থী অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত হলেও নীরব জনগণের সমর্থনই তাদের ভরসা। দলের নেতারা বলছেন, ধানের শীষ প্রতীকই এ নির্বাচনে মূল ম্যাজিক। চলমান অগণতান্ত্রিক পরিবেশ ও নানামুখী ক্ষোভ ও বঞ্চনার জবাব দিতে ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দেবেন। উল্লেখ্য যে বিগত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার শেষমুহূর্তে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এর ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আইভীর বিজয় সহজতর হয়। এবারের চিত্র তার বিপরীত। এরই মধ্যে শীতালক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গায় অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। আইভি তার স্বাতন্ত্র রক্ষা না করে নির্বাচনের পরদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। আইভির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমানের অবস্থানের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হিসেবে পরিচিত ইনি বিগত বছরগুলোতে আইভীকে যথেষ্ট যন্ত্রণা দিয়েছেন। এ নির্বাচনে তাঁরা প্রার্থীও দিয়েছিলেন। অবশেষে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় আইভী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন।
এখন শামীম ওসমানের পক্ষে আইভীর বিপক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তিনি নীরব রয়েছেন। তবে ‘ওস্তাদের মার শেষ রাতে’ বলে একটা কথা আছে। আগামীকাল তার প্রমাণ মিলবে। যদি শামীম ওসমান সত্যি সত্যি তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আইভীকে হারাতে সাখাওয়াতের পক্ষে গোপন অবস্থান নেন, তাহলে ধানের শীষের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
এ নির্বাচনে প্রকারান্তরে সরকারই বড় ফ্যাক্টর। জাতীয় নির্বাচনে যেমন আনুষ্ঠানিকভাবে বিনাভোটে ১৫৩ জন জিতেছে, সে ধারা অব্যাহত ছিল প্রতিটি পর্যায়ে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিগত ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে একই দৃশ্য দেখা গেছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ‘এ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠুক আমরা তা চাই না।’ এ কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- এতে জয়-পরাজয় যেটাই হোক আওয়ামী লীগ তা মেনে নেবে। এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, নৌকার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের মন্তব্য নতুন নয়। বিগত নির্বাচনগুলোর প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের নেতারা এ রকম অনেক কথা বলেছেন। বস্তুত, ভালো কথার ফুলঝুরিতে আওয়ামী লীগের জুড়ি নেই। এ নির্বাচনেও অনুরূপ ঘটনা ঘটতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য উভয় সংকট সৃষ্টি করেছে। এ যেন দুধারী তরবারি। এদিকে কাটে, ওদিকেও কাটে। যদি তারা হেরে যান, তাহলে ২০১৩ সালের মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। মনে করা যেতে পারে যে ওই সময়ে পাঁচটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে জয়লাভ করলে, বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়। এ সময় বিএনপির অনিবার্য বিজয়কে ঠেকাতে আওয়ামী লীগকে নির্মম শক্তি প্রয়োগ ও কারসাজির আশ্রয় নিতে হয়। জনগণের হারানো আস্থা ফিরে পেতে হলে নাসিক নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। অপরদিকে জিতলে বিএনপি এর জন্য উৎসাহের কারণ হবে। দেশে এবং বিদেশে নির্বাচক পর্যবেক্ষকদের আস্থায় নিতে হলে আওয়মী লীগকে পরাজয় মেনে নিতে হবে। হারানো আস্থা ফিরে পেতে হলে তাদের অবশ্যই সহনশীল হতে হবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। জনসংযোগ শেষে গণজোয়ার কোন দিকে তা স্পষ্ট হয়নি। বোঝা যায়, ভোটাররা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছে। তারা মুখ খুলতে পারছে না। অপরদিকে শাসক দলের বিরোধীদের প্রতি অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন তো রয়েছেই। নির্বাচন কমিশন প্রায় সব ভোটকেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। আইভী ও সাখাওয়াত- উভয়ই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে আবেদনে সাড়া দেয়নি। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো শেষ সময়ে নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ড সোজা করবে। আর আগামীকালের নির্বাচনে আশা, জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সাহসী হবে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।