অভিমত
বাকস্বাধীনতা, বাংলা একাডেমি ও বইমেলা
অ্যারিওপ্যাজিটিকা বইটা কীভাবে পেয়েছিলাম মনে নেই, হয়তো ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী বড় বোনেরই ছিল। কিন্তু প্রথমবার পড়াতক বইটার মালিকানা আমারই। ওই সংস্করণটার প্রকাশক ছিল বাংলা একাডেমি।
অ্যারিওপ্যাজিটিকা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের সময়টাতে। ক্যাথলিক-প্রটেস্ট্যান্টদের পারস্পরিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুধু নয়, প্রটেস্ট্যান্টদেরও বহু মত আর পথের ভেতর নিত্যনতুন দমন, নির্বাসন, মৃত্যুদণ্ড, অধিকার কর্তন আর বিধিনিষেধের চূড়ান্ত দশাতে।
মিল্টন নিজেও প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে কোয়েকার নামে একটা সামাজিক আদর্শবাদী মতকে সমর্থন করতেন। কোয়েকার নেতা জেমস নেইলার প্রভু ঈসার জেরুজালেমে প্রবেশের অনুসরণে গাধার পিঠে ব্রিস্টল নগরীতে এলেন ১৬৫৬ সালে। ইংল্যান্ডের সংসদে এই ‘বেয়াদবি’ নিয়ে কদিন ধরে আলোচনা হয়, তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জোর দাবি ওঠে। এই কোয়েকাররা কিন্তু প্রটেস্ট্যান্টদেরই একটা উপদল। তখনকার সংসদও ক্যাথলিক রাজতন্ত্রবিরোধী প্রটেস্ট্যান্টদেরই বিজয়ের স্মারক। সংসদ শেষ পর্যন্ত জেমস নেইলারকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দিলেও তাঁর জিহ্বা ছিদ্র করে দেওয়া হয়। নেইলারের বার্তাটিরও গভীর একটা আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ছিল, তখন যিশুকে যারা ক্রুশবিদ্ধ করছে, সেই ইহুদিদেরই অনুরূপ আরেক আনুষ্ঠানিকতা খ্রিস্টান ধর্মে রাজত্ব করছে। কিন্তু সমাজে সেই একই দারিদ্র্য, বৈষম্য আর পীড়ন বিরাজ করছে। ক্যাথলিকদের আচারসর্বস্বতা, ধর্মের ব্যবহার আর প্রবল অনাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রটেস্ট্যান্ট মতধারাগুলোও ক্ষমতার হাতিয়ার হওয়ামাত্র প্রতিবাদী প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যেও নতুন নতুন উপধারা সৃষ্টি হয়ে এবং জনপ্রিয়তা পেয়ে একটা বিপ্লবী উন্মাদনার সময় সৃষ্টি করেছিল তখন। ক্ষমতাধররাও ছিলেন একই রকম নিষ্ঠুর। তাৎপর্যবাহী কোনো প্রতিবাদকে নির্মূল করার জন্য তাঁরা ব্যগ্র। নির্মম শাস্তি পেয়ে জেমস নেইলারও সেটিই প্রমাণ করলেন।
এ ঘটনার বেশ আগেই ১৬৪৪ সালে মিল্টন প্রকাশ করেন তাঁর অ্যারিওপ্যাজিটিকা। এর উদ্দিষ্ট ছিল সংসদের প্রণীত নতুন একটি বিধিনিষেধ। ‘গ্রন্থ’ তখন বেশ বিপজ্জনক একটা বস্তু হিসেবে চিহ্নিত। নতুন চিন্তা আর আদর্শের স্ফুলিঙ্গ ছড়ানোর শক্তিমত্তা উপলব্ধি করেই গ্রন্থের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইংল্যান্ডের সংসদ নতুন একটা আইন প্রণয়ন করে। কোনো বই প্রকাশ করতে গেলে তখন থেকে পূর্বানুমোদন নিতে হবে। মিল্টন এরই বিরোধিতায় অ্যারিওপ্যাজিটিকা রচনা করেন। অ্যারিওপ্যাজিটিকার যুক্তিগুলো পরবর্তীকালে বহুবার পুনরোক্ত হয়েছে দেশে দেশে বাকস্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের সংগ্রামে।
এ যুগের বিস্তারিত ইতিহাস রোমহর্ষক। ক্রিস্টোফার হিলের ‘ওয়ার্ল্ড টার্নড আপসাইড ডাউন’ বইটাতে এর বেশ খানিকটা বিবরণ আছে। বাংলায় অনুবাদও আছে বইটির : 'বিশ্ব যখন উথালপাথাল'।
২.
অবাক হচ্ছেন, এই বইটার অনুবাদ বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছিল? বইয়ের মুক্ত প্রকাশকে এত ভয় পেয়ে ইংল্যান্ডের সংসদ বিধিনিষেধ আরোপ করছিল। কিন্তু প্রায়ই আমরা দেখি, সেই সব বইপত্রের পণ্ডিতরা তো বটেই, কারবারিরাও নিশ্চিন্তে নতুন নতুন ক্ষেত্রে সেসব নিষেধই আরোপ করেন। সে কারণেই বাংলাদেশে কেউ পোশাকশিল্প নিয়ে ইচ্ছামতো চলচ্চিত্র বানাতে পারবেন না। পুলিশ কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতাচর্চা নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতে পারবেন না। উপন্যাস লিখতে অবশ্য পারবেন। মানে বই হয়তো আর ততটা উসকানিমূলক, চিন্তা ছড়ানো মাধ্যম আর নেই, তাই বইয়ের নিয়ন্ত্রণের চেয়ে বেশি দরকার হয়ে পড়েছে অন্য সব জনপ্রিয় আর সস্তা মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ। আসলে মাধ্যম নয়, চিন্তাটাকে নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে বড় কথা।
বাংলাদেশে আর সব মাধ্যমের ওপর যত প্রত্যক্ষ কড়াকড়ি, বইয়ে আসলে সেটা করা হয় পরোক্ষ সব উপায়ে। বাংলাদেশে বইয়ের দাম অত্যন্ত চড়া, এতে প্রকাশকদের দায় সামান্যই। কর, শুল্কের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বাজার বিস্তারকে যথাসম্ভব নিরুৎসাহিত করে গ্রন্থসংস্কৃতিকে কার্যত এ দেশে কিছু 'সংস্কৃতিবান' মানুষের বিলাসে পরিণত করা হয়েছে। মানুষের জীবনের সঙ্গে, চিন্তার বিকাশের সঙ্গে এর দূরত্ব অতি বিশাল।
এরই কিছু দাম সমাজকে দিতে হয় শ্রাবণ প্রকাশনীর মতো ঘটনায়। শ্রাবণ অবশেষে হয়তো বইমেলায় ঠাঁই পাচ্ছে। হয়তো বলছি এ কারণেই যে, বাংলা একাডেমি শ্রাবণকে শর্তযুক্ত অনুমতি দিতে চাইছে। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী এই শর্তগুলোর মধ্যে ‘মেলার স্বার্থবিরোধী কোনো বিষয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ করা যাবে না’ এমন লিখিত মুচলেকাও রয়েছে।
শ্রাবণকাণ্ড আরো অজস্র প্রশ্ন উত্থাপনও করেছে। প্রথমত, এখানে রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধের চেয়ে অবশ্যই ব্যক্তিগত আক্রোশ আর প্রতিহিংসার একটা প্রাবল্য আমরা দেখেছি। বেশ মনে আছে, কয়েক বছর আগে, ২০১১ সালে শ্রাবণেরই একটা বই, 'ইউনূসের দারিদ্র্য বাণিজ্য' নামের একটা বই নিয়ে বিষয়টার সূত্রপাত। লেখক বদরুদ্দীন উমর। নিবন্ধ আকারে এর বিষয়বস্তু আগেই পড়া ছিল। বদরুদ্দীন উমরকে যাঁরা চেনেন, বুঝবেন, যুক্তিপূর্ণ এবং অর্থনীতি ও রাজনীতির আলোচনায় পূর্ণ একটা বই, ব্যক্তিগত কুৎসার কিছু এতে ছিল না। সবাই তাঁর সঙ্গে একমত হবেন, এমন কথা নেই। কিন্তু মিল্টন যেমন তাঁর যুগের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার, ব্যক্তিগত মানুষের ধর্মযাজকের স্থান গ্রহণ প্রভৃতি সংকট নিয়ে ভাবিত থেকেছেন, সব যুগের চিন্তাবিদরাই যেমনটা করেন, বদরুদ্দীন উমরের বইটিও তাঁর মতো করেই তাঁর সময়ের সবচেয়ে বড় আলোড়ন ক্ষুদ্রঋণ ও গ্রামীণ ব্যাংকের একটা সমালোচনাই হাজির করেছিলেন।
সমস্যা ছিল, ওই সময়ে ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার নিয়ে দেশে প্রবল ভাবোন্মাদনা। কাজেই এমন পূজনীয় চরিত্র আঘাত পান এমন বিষয়ে নিয়ে কথা বলা যাবে না। ফলে বইটির নাম বইমেলার তথ্যকেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা নিষিদ্ধ হলো। এই নিষিদ্ধ হওয়াটা তেমন একটা আলোচিতও হলো না। বইমেলায় একটা অর্থনীতি-রাজনীতিবিষয়ক গ্রন্থও নিষিদ্ধ হয়েছিল, এটা নিয়ে আমরা এত যে কম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলাম, তার সঙ্গে আজকের দুর্যোগের একটা সম্পর্ক কি নেই? আপনি ওই বইটার বিষয়বস্তুর সঙ্গে একমত না হতে পারেন, ওটা নিষিদ্ধ হওয়াকে কীভাবে সমর্থন করতে পারেন? কীভাবে মৌন থাকতে পারেন? এর পর একের পর এক বই নিষিদ্ধ হতে থাকল, সেটা যে পারা গেল, তা তো আমাদের ওই মৌনতারই জোরে।
এরই ধারাবাহিকতা কিন্তু আমরা অব্যাহত দেখেছি। বাংলা একাডেমি কোনো আদালত নয়, তার কোনো বিচারিক এখতিয়ার নেই। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো আদালত নিষিদ্ধ করেনি, এমন গ্রন্থও বইমেলায় নিষিদ্ধ করতে দেখেছি আমরা একাডেমিকে। আস্ত বইয়ের দোকানও তারা দিনদুপুরে বন্ধ করে দিয়েছে। গুটি কতকের প্রতিবাদ তখন সামান্যই শব্দ সৃষ্টি করেছে। এখন বাংলা একাডেমি যে লিখিত মুচলেকা চাইছে শ্রাবণের কাছে, তারও কতখানি এখতিয়ার একাডেমির আছে, আদালতে এটা কতদূর গ্রহণযোগ্য হবে, সেই প্রশ্নের অবকাশ আছে। আমরা আশা করেছিলাম, একাডেমি তার নিজের ভুল উপলব্ধি করে না হোক, জনমতের চাপে অন্তত পিছু হটতে বাধ্য হবে। কিন্তু তাদের সেই অননমনীয় স্বৈরতন্ত্রী ক্ষমতার প্রকাশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
৩.
বাংলা একাডেমির প্রশাসন আর বাংলা একাডেমি একটা প্রতিষ্ঠান, দুয়ের মাঝে একটা পার্থক্য প্রায়ই বুদ্ধিমান মানুষও হারিয়ে ফেলেন। তাই কেউ কেউ এ ঘটনায় মেলা কিংবা বাংলা একাডেমিকে বর্জনের কথা বলছেন। এটি অত্যন্ত ভুল একটা প্রস্তাব। বাংলা একাডেমি ঐতিহাসিক একটা আন্দোলনের ফল, গোটা জাতির অর্জন। সরকারের সমালোচনার মানে এই নয় যে আপনাকে দেশের ভূখণ্ড বর্জন করতে হবে। এমনকি সরকারের নিন্দা করার অর্থ এই নয় যে সরকারের কাছ থেকে পাওনা আর সব অধিকারও আপনি বর্জন করতে বাধ্য থাকবেন; বরং সরকার যদি বিরোধিতা করার জন্য বা প্রতিবাদ করার জন্য আপনাকে নতুন করে অন্য কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়, তার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করতে হবে। বাংলা একাডেমির ওপর এর প্রশাসনের যতটুকু অধিকার, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আপনারও ঠিক ততদূরই অধিকার আছে; বইমেলার ওপরও।
এমনকি ব্যক্তি শামসুজ্জামান খান আর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের মধ্যেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পার্থক্য করা জরুরি। লোকসাহিত্য বিষয়ে তাঁর পাণ্ডিত্য, ভালো গ্রন্থের প্রতি তাঁর আকর্ষণ এগুলো সকলেই জানেন। কিন্তু মহাপরিচালক হিসেবে দীর্ঘ সময় কাটানো শামসুজ্জামান খান এতগুলো একতরফা এবং বলা চলে স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, যেগুলো এই পদে তাঁর অনুপযুক্ততাই নির্দেশক। ফলে আমরা আহত হই ব্যক্তি শামসুজ্জামানের পাণ্ডিত্যের কথা তুলে মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের একতরফা সিদ্ধান্তকে যেকোনো মূল্যে জায়েজ করার চেষ্টায়। এমন চেষ্টা আমাদের কোনো কোনো সাহিত্যিক করেছেন। শামসুজ্জামান খানের জ্ঞানের সহায়তা নিয়েও তাঁর অন্যায় কাজের বিরোধিতা করার এখতিয়ার যেকোনো নাগরিকের থাকবে, একাডেমি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের এইটাই তো স্বাভাবিক রীতি হওয়ার কথা।
বহু বছর ধরেই বইমেলা অনুষ্ঠানসর্বস্ব সরকারি উৎসব আর আয়োজনে পরিণত হয়েছে। এর আলোচনাগুলোতে কার্যত কেউই যান না। জ্ঞান আর সৃজনশীলতার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বরং এখানে পার্শ্বচরিত্রে পরিণত হয়েছেন, মন্ত্রী-আমলারাই এখানে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আছেন। এ সবই সত্যি। কিন্তু বর্জন বা খারিজ এর সমাধান নয়। শাসকরা বা ক্ষমতাবানরা যা দখল করতে চান, সেই ভাবসম্পদ স্থায়ীভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলে সমাজে প্রতিবাদের পরিসরও আরো সংকুচিত হতে থাকবে। বরং প্রতিবাদে যে কাজ হয়, প্রতিরোধ যে গড়ে তোলা দরকার, সেই চেতনা ছড়ানোর মৃদু হলেও একটা সম্ভাবনা আমরা দেখেছি এ ঘটনায়। ফলে বইমেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাসীনদের যতই দাপট থাকুক না কেন, এই দাপটকে যাঁরা ভাঙতে চান, তাঁদেরও বইমেলাতেই যেতে হবে।
দুঃখজনক যে, প্রকাশকরা এ ঘটনার বিপক্ষে প্রায় কিছু বলেননি বলে বারবার একাডেমির তরফ থেকে দাবি করা সম্ভব হয়েছে। প্রকাশক নেতৃবৃন্দ যদি এর বিরোধিতা না করেন, তাঁরা ভলতেয়ারের গ্রন্থসমগ্র বিক্রেতা হলেও তাতে এ ঘটনার অন্যায্যতা বৈধতা পায় না। কিন্তু উল্লেখ না করে পারছি না, বই বিক্রি যদিও শেষ বিচারে একটা ব্যবসাই, তারপরও একদিকে পেশাগত ভ্রাতৃত্বের পরিচয় দিতে, অন্যদিকে বইয়ের মতো একটা সৃজনশীল উৎপাদনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত মানুষ হিসেবে তাঁদের মতামত প্রকাশ করা উচিত ছিল। দেশবাসী অন্তত জানতে পারতেন, মান্যবর প্রকাশকগণ প্রতিবাদ করার বা চিন্তা করার অধিকার কতখানি সমর্থন করেন। তাঁদের কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিবাদ করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁরা পাশে দাঁড়াবেন কি না, এইটুকু পেশাগত সহমর্মিতা তাঁদের মাঝে আছে কি না, তা জানাটা জাতির জন্য জরুরি ছিল। ব্যক্তিগতভাবে এই হতাশা ব্যক্ত না করে পারছি না, এ ঘটনায় আসলে কতটা গোড়া থেকে আমাদের শুরু করতে হবে, বাণিজ্যিকীকরণ কত ভয়াবহভাবে আমাদের সৃজনশীলতার প্রকাশকে সীমিত করতে দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে লেখকগণ কতভাবে জিম্মি হবেন প্রকাশকদের সংঘশক্তির কাছে, তার একটা আগাম নমুনা হিসেবে থাকল।
আরো একটা বিষয় খেয়াল করা দরকার। কারো কি স্মরণ ছিল, রবীন আহসান বদ্বীপ প্রকাশনী বন্ধের সময়ে যাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁদের একজন? বাংলা একাডেমি সেটা মনে করিয়ে দিয়েছে পুরো এক বছর পর। মনে করিয়ে দিয়েছে যে এ ঘটনায় বাংলা একাডেমি পুড়িয়ে দিতে পারত মৌলবাদীরা! মৌলবাদীরা যদিও দেশে গত এক বছরে অনেক ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা বইমেলা পোড়ানোর কোনো বাসনা সম্ভবত এখনো প্রকাশ করেনি। বরং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ নিজে থেকেই এ আতঙ্ক দেশের মাঝে ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। বাংলা একাডেমির এই দাবি যতই হাস্যকর হোক, মৌলবাদের জুজুর এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবহার অত্যন্ত বিপজ্জনক। মৌলবাদের বিকাশে এই জুজু দেখানো সংস্কৃতির, তাকে বিশাল ক্ষমতাধর হিসেবে দেখাবার সংস্কৃতির ভূমিকা কম নয়।
লেখক! জানি না কতজন লেখক এ ঘটনায় নিন্দা করেছেন। কয়েকজন অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বাংলা একাডেমির কাজের আগাপাছতলা সমালোচনা করেছেন। অবশ্য এমন লেখক দু-একজন তো থাকবেই, বর্তমান আর ভবিষ্যতের প্রাপ্তির মোহে মোসাহেবির চূড়ান্ত দেখিয়ে ফেলবেন এই সুযোগে। নীরবদের ব্যথা আর দোদুল্যমানতা আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। কিন্তু ভরসা পুরোটা থাকল তরুণদের ওপর। তাঁদের কথা শুনছি এবং আশা জাগছে। আমাদের জাতির আত্মপ্রকাশের আকুতিকে তাঁরা ভাষা দেবেন, তাঁদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবেন চিন্তার নতুন বীরেরা, তেমন সম্ভাবনা তাঁরা দেখিয়েছেন। তাঁদের অভিবাদন। মত ও পথের অজস্র ফারাক থাকুক, মৌলিক কিছু প্রশ্নে তাঁরা একসঙ্গে দাঁড়াতে পারলে কিছু অর্জন মিলবেই।
লেখক : সদস্য, রাজনৈতিক পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।