অভিমত
হাওর, হিন্দু, ত্রাণ : কেইসটা কী
আফসাইন্নারে পড়ছস নাকি, হাসিনা নাকি শুধু হিন্দুগো ত্রাণ দিছে হাওরে গিয়া! বুঝা গেল হাসিনারে হাওরে গিয়া গরিব মানুষ পাইলেই চলব না, হেগুলা মুসলমান হওন লাগব। গরিব হিন্দু হইলে চলব না।
একখান ছবি উঠছে, যাতে কয়ডা হিন্দু মাইয়া ত্রাণ নিতাছে দেখা যায়, হের লাগি কিছু ‘মুসলমান’ ভাই-ব্রাদারের বহুত চ্যাত লাগছে। হেই লোকরা ত্রাণ লইয়া হাওরে গেলে কলমা জানে কি না হেইডা পরীক্ষা কইরা ত্রাণ দিত? নাকি এইটা কইতে চান, হিন্দুরা বাংলাদেশের পাবলিক না? যহন পাকিস্তানিরা একাত্তর সালে একই কথা কইয়া হিন্দা মারতাছিল তহন কি আপনে অথবা আপনের বাপ-দাদারা খুশিতে হাততালি দিছিলেন? কারণ, যেগো মারতাছে হেরা তো মুসলমান না, দেশের মানুষ না। আফসাইন্নারে যেগুলা এইসব কথা কইছে হেরা কি মুসলমান?
২. এমন একখান দেশ পাওন গেছে যে মুরখ্য হইলেই পেটে ভাত পাওন যায়। তুই তো নিজেই হাওর এলাকার সম্পত্তি দখল লইয়া কাম করছস। ওইহানে দেখছস, হাওরের মানুষের মাত্র দুইডা ধর্ম। হেরা প্রভাবশালী অবস্থাপন্ন আর অসহায় গরিব। ওইহানে জমি দখল হিন্দু-মুসলমান পরিচয় দিয়া সম্পত্তি দখল হয় না। যে পারে হেই লয়। হিন্দু বড়লোকরাও হিন্দুগো এবং পারলে মুসলমানগো হাত ধইরা সম্পত্তি দখলে লয়। প্রায় সকল হিন্দুই গরিব-দুঃস্থ।
শাল্লা, দিরাই এলাকায় কত হিন্দু আর কত মুসলমানের বাস হেই খোঁজ নেওনের কাম আছিল না? বোঝা গেল, আপনেরা হিন্দুদের গালাইতে চান। কিন্তু বুদ্ধি-সুদ্ধি, খোঁজ-খবর লইয়া গালাইলে ভালো অইত না? শেষ পর্যন্ত আপনেরা কেবল নাদান, নালায়েক ও জাহেল প্রমাণিত হইলেন। হাসিনা কওমি মাদ্রাসা হাতে আইনা ফালাইছে, সেইহানে গিয়ে ভর্তি হন গা। একটু শিক্ষিত হন।
৩. আফসাইন্নাত তাও কি না তুই বিভিন্ন সংস্থার ত্রাণকর্মীদের লগে যোগাযোগ কইরা জিগাইছস, কেসটা কী। হেরা কয়, আপনেও কি পাগল হইছেন, হাওর এলাকায় মানুষ হেইভাবেই থাহে। অনেক দ্বীপের মধ্যে একলগে কেবল মুসলমান থাহে অথবা হিন্দু থাহে। আমি জিগাইলাম, হাসিনা কই গেছিল? হেরা কইল, সবচেয়ে দুঃস্থ এলাকায়, ওই হানে হিন্দুর বেশি বসবাস। হাসিনার ত্রাণ হের জিনিস, হেয় যারে খুশি দিতে পারে। কিন্তু দিছে হিন্দু-মুসলামন দেইখা না, ওই হানে বেশির ভাগ মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মানুষগুলার অনেকে হিন্দু। এই সব কথা কইতাছি, এইডা প্রমাণ করতে যে আপনেরা হিন্দু-মুসলমানের কথা উঠাইছেন হেরা শুধু ঝামেলা করার জন্য উঠাইছেন, হাওরের মানুষগোর কষ্টের কথা ভাইবা না।
৪. আপনেরা সাহস পাইতাছেন, হাসিনা-হেফাজতরে ডিগ্রি কইছে এইটা শুইনা। ভাবতাছেন, শেখের বেটির ওপর আপনাগো কত প্রভাব, আপনাগো হের কত প্রয়োজন। ভুইলা গেছেন নাকি জামায়াতের কয়টা ঝুলাইছে। একটু হিসাব কইরা দেইখেন। তহন তো ভাবছিলেন, আপনাগো এত ক্ষমতা যে কেউ কিছু কইতে পারব না। শাহবাগরে ফালাই দিছেন, হাসিনা আর এমন কি। এহন কেমন লাগে? এতিম, এতিম?
বিএনপি তো কইছিল, আন্দোলন কইরা হাসিনারে ফালাই দিব, হেরা গেছে কই? খালেদা জিয়ার হাওরের মুসলমানের কাছে গিয়া ত্রাণ বিতরণ করে না কেন? কথা হইল, এই রকম অবস্থায় যারা হিন্দু-মুসলমান খোঁজে, হেগো মুসলমান কওন যায় না, বাংলাদেশিও না। যারা গরিব মানুষের কষ্টের মধ্যে ধর্ম খোঁজে হেরা কী জিনিস?
৫. আফসাইন্না ইতিহাস পড়ছস, হিন্দু-মুসলমান কইয়া কইয়া বহুত কিসিমের মানুষ এই দেশে আইছিল দখল করতে। হেরা কেউ টিকতে পারে নাই। যারা এহন হেফাজতের সাথে আওয়ামী লীগের কোলাকুলিতে সাহস পাইয়া এই সব কইতাছে, হেগো নাম হইতাছে, মোল্লা মধ্যবিত্ত। হেরাও হাসিনার ওপরে ভর কইরা চলে। হাসিনা একটু জাগা দিছে, হেরা ফাল পাড়তাছে। যেদিন শতরঞ্জিতে টান দিব, তহন কান্দন ছাড়া আর কিচ্ছু থাকব? যাগো নিজেদের কিছু নাই হেরা হগল টাইমেই এগো-ওগো খোঁচা মাইরা চলে। হের পর যহন বাড়ি খায়, তহন কান্দে। আমাগো ভদ্দরলোক মধ্যবিত্ত আর মোল্লা মধ্যবিত্ত গোর মধ্যে তফাতটা কই, খুঁইজা পাইতাছি না।
লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক