অভিমত
সৌদির ইসরায়েল প্রীতি, ফিলিস্তিনিদের লাশের মিছিল
সম্প্রতি ইসরায়েলের পক্ষে কথা বলে আলোচনায় এসেছেন সৌদি যুবরাজ সালমান। মার্কিন সংবাদ সাময়িকী দ্য আটলান্টিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসরায়েলের নিজেদের ভূমিতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের অধিকার আছে। এ ধরনের কথায় সৌদির ইসরায়েল প্রীতি আছে বলে ধরেই নেওয়া যায়।
যদিও সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে বেশ দ্রুতই। দেশ দুটির উভয়েই ইরানকে তাদের হুমকি বলে মনে করে। ধারণা করা হচ্ছে, রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যকার উত্তেজনা ইসরায়েলের দিকে ঠেলে দিয়েছে সৌদি আরবকে।
২০১৪ সাল। জুলাই মাসের গোড়ার দিকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। সেই আগ্রাসনে মারা যায় দুই হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। যেখানে নিহত শিশুর সংখ্যা ছিল ৫০০-এরও বেশি। মিসরের কায়রোতে পরোক্ষ আলোচনার মধ্য দিয়ে আগ্রাসন শুরুর পর ৫০ দিন পর ২৬ আগস্ট যুদ্ধ শেষ হয়।
২০১৮ সালের ৩০ মার্চ থেকে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ শিরোনামে নিজ ভূমিতে ফেরার দাবিতে গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা। জানা গেছে বিক্ষোভ চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। ইসরায়েলি বর্বরতার শিকার হয়ে মারা গেছে হাজারো ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে আরো কয়েক হাজার। ইসরায়েলি বাহিনীর গুলির জবাবে ফিলিস্তিনিরা টায়ার ও পাথর নিয়ে নিজেদের দাবিতে মাঠেই থাকে।
লাশের মিছিলে আছে শিশু আর নারীরাও। তবুও দমে যেতে চায় না ফিলিস্তিনিরা। হাজারো প্রাণের বিনিময়ে হলেও নিজ ভূমিতে ফেরার আজন্ম আকাঙ্ক্ষা যেন তাদের মনে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৭৬ সাল থেকে প্রতিবছর ৩০ মার্চ ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদে ভূমি দিবস পালন করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। ২০০৭ সাল থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। যেখানে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিতাড়িত হয়ে বসবাস করছেন ৭০ শতাংশ মানুষ। চলতি বছর দিনটি স্মরণে বড় আকারে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে ফিলিস্তিনিরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা ভিন্নতা দিয়েছে এবারের ভূমি দিবসকে।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক, কাতার, মিসর, মরক্কো, আরবলিগসহ অনেকেই। ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি বাহিনীর রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আলোচনায় উভয়পক্ষকে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানান মার্কিন কূটনীতিক ওয়াল্টার মিলার।
আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের কাছে এই সহিংসতার বাইরে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সেটি হলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের এই সংঘাত কি লেবানন, সিরিয়া ও ইরানকে জড়িয়ে আরো ব্যাপক আকার নিতে যাচ্ছে? একটি বিশ্বাসযোগ্য শান্তি প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি সর্বশেষ এই সংঘাতের একটি বড় কারণ।
২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর সময় এবং ২০১৪ সালে আবারও এমনটা হয়েছিল। গাজা দীর্ঘদিন ইসরায়েল ও মিসর অবরোধ করে রেখেছে। পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি প্রতিপক্ষ ফাতাহর সঙ্গেও হামাসের বিবাদ রয়েছে। এ অবস্থায় হামাস গাজার ওপর থেকে অবরোধ সরানোর জন্য বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিয়ে আবার গণবিক্ষোভ শুরু করেছে। অন্যদিকে, হামাসকে দমনে সামঞ্জস্যহীন বলপ্রয়োগের মতো অদূরদর্শী কাজ করে যাচ্ছেন দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি নেতারা।
২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর চলতি বছরের এই বিক্ষোভে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারাতে হলো কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে। লাশের এই মিছিল থামাতে দুই পক্ষ ছাড়াও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসতে হবে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের। সংঘাত আর সহিংসতা নয় বরং কার্যকর আলোচনাই হতে পারে এ ধরনের সংকট নিরসনের অন্যতম উপায়।
লেখক : সংবাদকর্মী, আরটিভি