সাদা চোখে
নন্দনকানন নুহাশপল্লীর বাণিজ্যিকীকরণ
১.
আষাঢ়ের উদ্ভ্রান্ত মেঘলা দিনে মন হারিয়ে দিয়ে নুহাশপল্লীর বৃষ্টিবিলাসের বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে লেখক হুমায়ূন আহমেদ জীবৎকালে চঞ্চল সজল পবনবেগে আসা বৃষ্টি উপভোগ করতেন। গুন গুন করে রবিঠাকুরের বর্ষা সংগীতের সুর ভাজতেন কণ্ঠে।
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।
কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ দেহাতীত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে তাঁর অবসর বেলার ঠিকানা গাজীপুরের ভাওয়াল বনের নন্দনকানন নুহাশপল্লী এমনরূপে পরিবর্তিত হয়ে গেছে যে, এখন বৃষ্টিবিলাসী প্রকৃতিপ্রেমী হুমায়ূনকে জোর করে ধরেও বৃষ্টিবিলাসের বারান্দায় বসানো যেত না! বৃষ্টিবিলাস এখন আমজনতা বা গণমানুষের বিশ্রামাগার। মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে টিকেটধারীদের মধ্যাহ্ণভোজনের এঁটো নোংরার ছড়াছড়ি এখানে সেখানে। হুমায়ূনের নন্দনকানন বা অত্যুঙ্গ ভালোবাসার ঘর এখন বাণিজ্যিক ভাড়াঘর। রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের পিরুজালির এক দুর্গম এলাকায় প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নুহাশপল্লী গড়ে তুলেছিলেন। সেখানকার নানা স্থাপনা আর অসংখ্য ফলদ, বনজ গাছের পাশাপাশি তিনি বানিয়েছেন ঔষধি গাছের বাগান। ছেলের নামে রাখা নুহাশপল্লীকে এক স্বপ্নজগৎ করে তুলেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। আড়াইশ প্রজাতির সবুজ গাছের সেই নন্দনকাননে বারবারই ছুটে গেছেন তিনি।
নুহাশপল্লীতেই হুমায়ূন আহমেদ গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব স্যুটিং স্পট, দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো। একটিতে থাকতেন আর বাকি দুটি ছিল তাঁর শৈল্পিক চিন্তাধারার আরেক রূপ। শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোর নাম দিয়েছিলেন ‘ভূতবিলাস’। দুর্লভ সব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে, তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষস। আরো রয়েছে পদ্মপুকুর, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা সুইমিং পুল কিন্তু হুমায়ূনের সেই নান্দনিক নুহাশপল্লী আজ আর নেই নুহাশে। এখন সেখানকার সবই দর্শনার্থীদের ব্যবহারের জন্য খোলা। হুমায়ূনের একান্ত নিজস্ব বাড়িকে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন জনপ্রতি ২০০ টাকা শুভেচ্ছা মূল্যের বিনিময়ে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দিয়েছেন। সামনে জুজু হিসেবে রেখেছেন, নুহাশপল্লী থেকে অর্জিত আয়ের পুরোটাই এখানকার রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং নেত্রকোনায় হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের যাবতীয় খরচ মেটানোর জন্য ব্যয় করা হয়। কিন্তু আমরা হুমায়ূনভক্ত যাঁরা এবার ঈদের পর নুহাশপল্লীতে হিমু বা রূপা সেজে লেখকের শিল্পতীর্থের খুঁজে বেড়িয়েছিলাম, তাঁদের একরাশ হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়েছে। এখনকার বিধি মোতাবেক টিকেট কেটে যাঁরা মূল ফটকের ভেতরে প্রবেশ করবেন, তাঁদের জন্য হুমায়ূন আহমেদের লিচুতলার সমাধি নিষিদ্ধ। সমাধির ভেতরের ফটকে তালা দেওয়া। আপনি যদি কবরে শ্রদ্ধা জানাতে চান, তবে আপনাকে মূল ফটকের বাইরে গিয়ে কিছুদূর হেঁটে সমাধি ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। অবশ্য সমাধিক্ষেত্রে প্রবেশে কোনো দর্শনী পরিশোধ করতে হবে না। এখানে দেখা যাচ্ছে স্রষ্টার দ্বার অবারিত। তবে তাঁর সৃষ্টির সান্নিধ্য পেতে হলে যথার্থ মূল্য পরিশোধ করেই আপনাকে প্রবেশ ইচ্ছুক হতে হবে। বিনিময়ে আপনি হুমায়ূনের অন্দরমহলে প্রবেশ করে অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা সেই এবড়োথেবড়ো সুইমিং পুলে সাঁতরাতে পারবেন; মাঠের মধ্যিখানে গাছবাড়িতে উঠতে পারবেন। হুমায়ূন আহমেদেরও হয়তো কখনো এমন গাছঘরে বসে বই পড়তে ইচ্ছে হয়েছিল, তাই তিনি এমনটা বানিয়েছিলেন। কপোতকপোতীর স্বাধীনতায় হুমায়ূনের অতিপ্রিয় ‘বৃষ্টিবিলাস’ আপনি যাচ্ছেতাইভাবে নোংরা করতে পারবেন। বৃষ্টিবিলাস; এ ঘরটির ডিজাইন ব্রিটিশ আমলে সিলেটের চা-বাগানগুলোতে ইংরেজ সাহেবরা যেসব বাংলোবাড়ি বানিয়েছিলেন, তাদের ডিজাইনের অনুকরণে করেছিলেন হুমায়ূন। সামনে তিনদিক খোলা প্রশস্ত বৈঠকখানা, তার পেছনে প্রশস্ত টানা বারান্দা, তার পেছনে ঘর। ওপরে টিনের ছাদ। টিনের তলা দিয়ে নকশাদার কাঠের প্যানেলিং। এ কাজগুলো সিলেট বা আসাম অঞ্চলের বাড়িতে একসময় হতো। টিনের চালে বৃষ্টির রিনিঝিনি সুর শুনবেন বলেই হয়তো এমনটি বানানো। একসময় বৃষ্টিবেলায় তিনি এ ঘরে বসে মুগ্ধ হয়ে প্রকৃতির খেয়াল উপভোগ করতেন। এ ছাড়া নুহাশপল্লীতে গেলে অতিরিক্ত ২০০ টাকা খরচে হুমায়ূনের নিজস্ব কিচেনের প্রধান পাঁচক বাশারের হাতের রান্না খেতে পারবেন; রাক্ষসের হাত মাড়িয়ে দিতে পারবেন বা মৎস্যকুমারীর সঙ্গে সেলফি তুলতে পারবেন। ভূতবিলাসে গিয়ে মনের আনন্দে ভূত দেখতে পারবেন, দিঘি লীলাবতীতে নৌবিহার করতে পারবেন; সবশেষে রাশেদ হুমায়ূন ঔষধি বাগানে গিয়ে মনের ইচ্ছেমতো শিয়াল মুতা, পানবিলাস, গোলমরিচ, কর্পূর, রসুন্দি, বিলম্বী, শ্বেত চন্দন বা চা গাছের পাতা ছিঁড়তে পারবেন। ডাইনোসরের পিঠের ওপর উঠে পা দোলাতে দোলাতে ভিডিও ধারণ করে ইন্সটাগ্রাম করা মামুলি ব্যাপার আপনার জন্য। এমনকি চুতরা পাতার ঘষা খাওয়া কিংবা লাইলি মজনু গাছের কাছে গিয়ে আবেগে বিগলিত হতেও মানা নেই।
সোজা কথা হলো, আপনি যখন অর্থের বিনিময়ে নুহাশপল্লীর সময় কিনবেন, ওই সময়টা পুরোই আপনার। এটা কি একজন কিংবদন্তিতুল্য লেখকের বাগানবাড়ি নাকি তথাকথিত ‘ফ্রি অ্যান্ড ফানি’ পিকনিক স্পট এসব নিয়ে ভাবাভাবির দরকার নেই। আপনি মাস্তি করবেন তো চলে যান না নুহাশপল্লীতে। হুমায়ূনপুত্র নুহাশ, শিলা বা নোভারা এতে নিশ্চয় মাইন্ড করবেন না। কারণ ওই যে নুহাশপল্লী নেই আর নুহাশে।
২.
‘নো লাঞ্চ ইজ ফ্রি’ অংশীদারিত্বের দর্শন থেকে একসময় ইউরোপে আধুনিক আয়কর ধারণার উৎপত্তি হয়েছিল। নেবে আর দেবে, দেবে আর নেবে, এভাবে মেলাবে নিকাশ। এমনতর হিসাবনিকাশের লোভাতুর ভূত নুহাশপল্লীতে ভর করেছে কি না, কে জানে? ক্যানসার ধরা পড়ার পর ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন তিনি। নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদ ‘নো ফ্রি লাঞ্চ’ শিরোনামে একটি মর্মস্পর্শী লেখা লেখেন। এতে তিনি বাংলাদেশে একটি বিশ্বমানের ক্যানসার হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু নুহাশপল্লী সাধারণ্যে খুলে দিয়ে আনন্দনগরে রূপান্তর করে অর্থ আয়ের মধ্য দিয়ে কোনো স্বপ্নপূরণের কথা হয়তো তিনি বলে যাননি। নিজের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তায় আমেরিকায় দরিদ্র কোটায় কম মূল্যে চিকিৎসা নিতে চাননি তিনি। সেই লেখক মহা দরিদ্রতায় পড়লেও নিজের নন্দনকাননকে টাকা কামানোর দূষিত শিল্পালয় ঘোষণা করতেন না হয়তো। কারণ নুহাশপল্লীকে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের আদলে জ্ঞানতীর্থ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। প্রায় ৪০ বিঘার ওপর নির্মিত এই নন্দনকাননকে ট্রাস্ট করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘নো ফ্রি লাঞ্চ’ লেখাটায় আছে একদিকে একজন ব্যক্তিত্ববান লেখক হিসেবে বিদেশি দরিদ্র কোটায় চিকিৎসা না নেওয়ার দুর্মর সিদ্ধান্ত, অন্যদিকে অসুখ বা মৃত্যুকে অগ্রাহ্য না করে চিকিৎসাটা চালিয়ে যাওয়ার দুঃসহ কথন। ওই লেখার পাদটিকায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন, আব্রাহাম লিংকনের অল্প বয়সে মারা যাওয়া দুটি সন্তান নিয়ে তাদের বাবার বোধ : ‘গডের সৃষ্ট কোনো জিনিসকে ভালোবাসতে নেই। কারণ তিনি কখন তাঁর সৃষ্টি মুছে ফেলবেন তা তিনি জানেন, আমরা জানি না।’ নুহাশপল্লীর স্রষ্টা যদি লেখক হুমায়ূন আহমদ হন, তবে নুহাশপল্লীর বর্তমান বিবর্তন দেখে হয়তো আব্রাহাম লিংকনের জীবনবোধই নিজের বলে মানতেন। ভালোবাসতে যেতেন না নুহাশপল্লীকে। লেখকের ভালোবাসা যখন অর্থদণ্ডের মাপকাঠিতে ঝুলে থাকবে, সেখানে অত্যুঙ্গ প্রেমও উবে যেতে বাধ্য। বলা হচ্ছে, নুহাশপল্লীর টিকেট বেঁচা টাকায় চলে শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। কিন্তু লেখক সারা জীবনভর দিনরাত পরিশ্রম করে সেন্ট মার্টিনে ‘সমুদ্রবিলাস’, ধানমন্ডির ৩/এ নম্বর সড়কে ‘দখিন হাওয়া’ নামে একটি ফ্ল্যাট, উত্তরায় রাজউকের পাঁচ কাঠার একটি প্লট, তেঁতুলিয়ায় পাঁচ কাঠা জমি ও মোহাম্মদপুরের বছিলায় পাঁচ কাঠা জমি। একই সঙ্গে ধানমন্ডির ১০/এ সড়কে একটি পাঁচতলা বাড়ি, নেত্রকোনাতেও তাঁর বেশ কিছু স্থাবর সম্পত্তি রেখে গেছেন। স্থাবর সম্পত্তির পাশাপাশি তিনি আরো রেখে গেছেন অমূল্য সম্পদ, তিন শতাধিক বই। যার মধ্যে দেড় শতাধিক বইয়ের কপিরাইট প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খানের নামে। এরপরের প্রায় একশ বই ও অর্ধশতাধিক সংকলনের কপিরাইট দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনের নামে। উল্লিখিত বই থেকে বিক্রিলব্ধ অর্থ তাঁরা পেতে থাকবেন। এ ছাড়া নুহাশ চলচ্চিত্র ও লীলাবতি কথাচিত্র নামে দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থাও রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের। সেই লেখকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার ৩৩ কাঠার ওপর নির্মিত ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ’ নামে বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক বিদ্যালয়টির পরিচালন ব্যয় হুমায়ূন আহমেদের ভালোবাসার শখের বাড়ি বা নিজের সমাধিক্ষেত্র ভাড়ার টাকাতেই যদি মেটানো হবে, তবে তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তিগুলো আসলে কী কাজে লাগবে! এই অপ্রিয় সত্য কঠিন প্রশ্নটি মেহের আফরোজ শাওনকে হুমায়ূনভক্ত আমরা কি করতে পারি!
৩.
২০১২ সালের ১৯ জুলাই দুর্ভাগা কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ পরিবারের অন্য সবার অমতে নুহাশপল্লীতে সমাহিত করা নিয়ে শাওনের জেদের বেলায় অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি জানিয়েছিলেন, ১২ জুলাই সকাল ৫টায় অপারেশনে যাওয়ার আগে তিনি (হুমায়ূন) নাকি বলছিলেন, ‘আমি জানি আমি ভালো হয়ে যাব। তবে আমার যদি কিছু হয়, আমাকে নিয়ে ওরা অনেক টানাহেঁচড়া করবে, তুমি শক্ত থেকো, কুসুম। আমাকে নুহাশপল্লীতে নিয়ে যেয়ো।’ দূরদর্শী হুমায়ূন তাঁর সমাধিক্ষেত্রকে আমজনতার আনন্দ-বিনোদনের চারণভূমি হিসেবে মানতে পারতেন এ কথা তাঁর লেখার ভক্ত নন যাঁরা, তাঁরাও বিশ্বাস করবেন না। এতটা ভাবগাম্ভীর্যহীন মানুষ হুমায়ূন ছিলেনই না। তিনি ঘরোয়া বা পারিবারিক বিনোদন ভালোবাসতেন। তাই বলে নিজের বাড়িকে পাবলিক সরাইখানার জায়গায় মানতে পারতেন না। যে শক্ত কুসুম একরকম টেনেহিঁচড়ে মা আয়েশা ফয়েজ, আগের ঘরের সন্তান, স্ত্রী, ভাইবোন, স্বজন বা ভক্তদের ইচ্ছাকে পদদলিত করে হুমায়ূনকে নিভৃত নুহাশপল্লীতে রেখে ঢাকায় ফিরেছিলেন, সেই কুসুমের মনে তবে এই ছিল? হুমায়ূন আহমেদ তাঁর জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ‘নুহাশপল্লীতে একটা অংশ আছে যেখানে প্রচুর গাছগাছালি। ওদিকটায় কেউ যায় না, যেহেতু গাছগাছালি ছাড়া কিছু নাই। একবার এক দুপুর বেলা একা একা আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিছুই ভালো লাগছে না। এ সময় আমার প্রস্রাবের বেগ পেয়ে গেল।’
এখন ওখান থেকে হেঁটে ফিরে গিয়ে পেশাব করব? এখানে যেহেতু সুবিধাটা আছে...গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পেশাব করছি। অর্ধেকের মতো পেশাব করা হয়েছে, পেশাবের মাঝখানে খুব মিষ্টি একটা গলা, মেয়েদের গলা : এখানে এই কাজ করছেন? আমরা এখানে বেড়াই! আমার যা মনে হলো, যেহেতু মেয়ের গলা, আর পেশাবের মাঝখানে ঘুরে দাঁড়াতেও পারছি না। মনে হলো, প্রায়ই তো নুহাশপল্লীতে লোকজন ঘুরতে আসে—এদেরই কেউ হয়তো। তড়িঘড়ি পেশাব শেষ করে ঘুরে তাকালাম, দেখি কেউ নেই। কেউ না। আমি দৌড়ে বার হয়ে এসে খুঁজলাম, দেখলাম কোথাও কেউ নেই। তারপর আমি ম্যানেজারকে ডাকলাম : অর্ডার দিয়ে দিলাম এখানে কেউ যেন বাথরুম না করে। এবং দ্রুত কাছেই একটা টয়লেট তৈরির করার ব্যবস্থা করতে বলে দিলাম। এর প্রথম ব্যাখ্যা হলো; ওটা ওই কোনো একটা এনটিটি, যাদের আমরা চোখে দেখি না। ওদের কেউ। এটা একটা ইজি ব্যাখ্যা। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটা হলো : আমার সাবকনসাস লেবেল এই কাজটা পছন্দ করে নাই। সাবকনসাস লেবেল হয়তো চায় নাই আমি এই কাজটা করি, তাই নিজে নিজে একটা এনটিটি তৈরি করে তাকে দিয়ে আমাকে বলিয়েছে। শেষটাই আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য।’
যদি মেহের আফরোজ শাওনের সাবকনসাস বলে কিছু থেকে থাকে, তবে নুহাশপল্লীর গেটে চেয়ার পেতে বসে পাক ফ্যানের বাতাস খেতে খেতে ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুলের টিকেট বিক্রির কালে বিশ্রামরত নিনিত ও নিষাদের সেই মা শাওনের শয়নকক্ষে গিয়ে যদি হুমায়ূন আহমেদ বলেন, কুসুম, আমার প্রাণাধিক প্রিয় নুহাশপল্লী নিয়ে তুমি এই কাজ করছ? তখন কুসুম কি জাদুর কারিগর হুমায়ূনকে বলবেন, নো ফ্রি লাঞ্চ! জানু, আমি তোমাকে এত্তো ভালোবাসি! আমি এই কাজ করতে পারি?