ইইউ-মার্কিন চাপে ‘কোণঠাসা’ ইসরাইল!
ইসরাইল ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে ‘ছোটখাটো কোনো সংকট’ চলছে না। কদিন আগে নিজ দলের এমপিদের উদ্দেশ্যে সতর্কতার সুরে কথাটি বলেছিলেন খোদ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ১৮ জানুয়ারি ইইউভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন। প্রস্তাবনাটির ভাষা এতটাই রুক্ষ যে, ইইউ-ইসরাইল সম্পর্কের অবনতি বোঝাতে নেতানিয়াহু যা বলেছেন, সেসবকে ‘ন্যূনোক্তি’ বলা চলে।
আন্তর্জাতিক আইনানুযায়ী, ১৯৬৭ সালে ইসরাইলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড (সেটেলমেন্ট) ও ইসরাইল রাষ্ট্রকে আলাদা ভাবা হয়। ইইউও দীর্ঘদিন ধরে এ নীতি অনুসরণ করে আসছে। ইসরাইল ইস্যুতে সংস্থাটির সর্বশেষ গৃহীত প্রস্তাবটি ওই নীতির আরো সম্প্রসারিত ও কর্কশ সংস্করণ মাত্র।
মাসকয়েক আগে ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেইন অ্যাফেয়ার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ইসরাইল ও ইসরাইলের দখলকৃত ভূখণ্ডকে পৃথকভাবে বিবেচনা করাকে ইইউর এ-সংক্রান্ত নীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত করার কড়া সুপারিশ করা হয়েছিল প্রতিবেদনটিতে। ইউরোপিয়ান কূটনীতিকরা বলছেন, গৃহীত প্রস্তাবটি ওই প্রতিবেদনেরই ধারাবাহিক একটি রূপ মাত্র।
ইইউর আইন ও ইসরাইলের সঙ্গে সংস্থাটির সকল চুক্তিতে এই ‘পৃথককরণ নীতি’কে কেন্দ্রবিন্দু বানানো হলে, এর প্রভাব অবধারিতভাবেই ইসরাইলের ওপর পড়বে। ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইইউ। ২৮ সদস্যরাষ্ট্র-বিশিষ্ট সংস্থাটির সঙ্গে অর্থনীতি, গবেষণা, অবকাঠামো, আইন, বিমান পরিবহন প্রভৃতি খাতে বহু চুক্তি রয়েছে ইসরাইলের। অপরদিকে বিশ্বের একমাত্র ইহুদি দেশটির অর্থনীতিতে বৃহৎ অবদান রয়েছে ‘সেটেলমেন্ট অর্থনীতি’র। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবস্থান পাকাপোক্ত করতে গৃহনির্মাণ ছাড়াও শিল্প-কারখানা গড়েছে দেশটি। দখলকৃত ভূখণ্ডের অর্থনীতিকে বলা হয় ‘সেটেলমেন্ট ইকোনমি’। ইইউ এবার একেই টার্গেট করেছে। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডভিত্তিক যেকোনো ধরনের কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী, এমনকি ব্যক্তিবিশেষের ওপর ইইউ মারাত্মক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। সংস্থাটি ইদানীং ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি উগ্র বসতি-স্থাপনকারীদের (সেটেলার) সহিংসতার ওপর বিশেষ নজর দিচ্ছে। ফলে ডানপন্থী ইহুদি সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষ এসব নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারেন। তাদের ইউরোপে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ইইউর প্রস্তাবনায় মৃতপ্রায় ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ পুনর্জীবিত করার জন্য অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান রয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবছর অন্তত একটি শান্তি সম্মেলন আয়োজন করার কথা রয়েছে। এসবের পেছনে রয়েছে ফ্রান্স। দখলকৃত ভূখণ্ডে ইসরাইলের বসতি-নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করে পাস হওয়া নিরাপত্তা পরিষদের পুরোনো প্রস্তাবটি নতুন করে প্রয়োগের পক্ষে দেশটি। প্যারিসে শান্তি সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্বও নিতে চায় ফ্রান্স।
গত বছর দখলকৃত ভূখণ্ডে উৎপন্ন পণ্যে ‘মেইড ইন ইসরাইল’ কথাটি নিষিদ্ধ করে ইইউ। বরং সেসব পণ্যে বিশেষ আলাদা চিহ্ন যোগ করা বাধ্যতামূলক করে সংস্থাটি। এতে প্রথমত, দখলকৃত ভূমিকে ইসরাইলের ভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো না। দ্বিতীয়ত, যাঁরা ইসরাইলি পণ্য বয়কট করতে চান, তাঁদের জন্যও বিষয়টি আরো সুবিধাজনক হবে। ইউরোপে ইসরাইল-বয়কট আন্দোলনের সমর্থকদের সংখ্যা এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। স্বভাবতই, ইইউর ওই পদক্ষেপে ক্ষিপ্ত হয় ইসরাইল। কিন্তু নতিস্বীকারের বদলে দেশটি ইইউকে ‘পাল্টা জবাব’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নেতানিয়াহু সরকার ইইউকে ‘শাস্তি দিতে’ ফিলিস্তিন ইস্যুতে সংস্থাটির সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়! ইইউর সর্বশেষ প্রস্তাবটির কড়া শব্দচয়ন ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরাইলের ওই একরোখা মনোভাব ভালোভাবে নেয়নি ইউরোপের দেশগুলো। বরং এতে ইউরোপে ইসরাইলের প্রতি ক্ষোভ ও হতাশাই বেড়েছে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকরাও বলছেন, ইসরাইলের ওই গোঁয়ার আচরণ ইউরোপীয় সরকারগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটির মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছাকে বাড়িয়েছে বৈ কমায়নি। ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, এমনকি জার্মানিও এ পদক্ষেপে একমত হয়। সবচেয়ে কট্টর অবস্থানে ছিল ফ্রান্স, সুইডেন ও আয়ারল্যান্ড। দ্য গার্ডিয়ানের খবর, সর্বসম্মতভাবে এ প্রস্তাব যাতে ইইউতে গৃহীত না হয়, সে জন্য গ্রিস, সাইপ্রাস, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও চেক রিপাবলিকের মতো ইইউর স্বল্প প্রভাবশালী দেশগুলোকে রাজি করাতে তীব্র লবিং করে ইসরাইল। কিন্তু ক্ষমতাধর দেশগুলোর চাপে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দেশ গ্রিস পিছু হটলে, ইসরাইলিদের গোটা প্রচেষ্টা মাঠে মারা যায়।
সম্প্রতি বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইউরোপের অনেক দেশের সঙ্গে ইসরাইলের সমস্যা নেই। সমস্যা হলো ইইউ কাঠামোর সঙ্গে। দৃশ্যত, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর আঙুল ছিল ব্রাসেলসে সংস্থাটির সদর দপ্তরে কর্মরত ইসরাইল-বিরোধী আমলাদের দিকে। তাঁর মতে, তাদের সরিয়ে দিলেই, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এর আগেও এ কথা বহুবার বলেছেন তিনি।
তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। অন্তত বর্তমান খসড়া প্রস্তাবনাটির বেলায়, নেতানিয়াহুর বক্তব্য বাস্তব পরিস্থিতির পুরোপুরি বিপরীত। খসড়া প্রস্তাবটি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত ইউরোপীয় কূটনীতিকরা বলছেন, ইইউ ফরেইন পলিসি প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি ও ইইউর বৈদেশিক বিভাগ যে খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল প্রথমে, সেটি ছিল বরং তুলনামূলক ভাবে কম কঠোর। কিন্তু পরে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী পাঁচটি দেশের প্রতিনিধিরা ওই খসড়া প্রস্তাব দেখে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তাঁরা খসড়া প্রস্তাবটির ভাষা আরো বেশি কঠোর করার দাবি জানান।
ইইউর এ প্রস্তাব গ্রহণের দিনই ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল শ্যাপিরো নজিরবিহীন এক মন্তব্য করেন। ইসরাইলি রাজনীতিবিদ ও জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একটি মর্যাদাপূর্ণ সম্মেলনে শ্যাপিরো বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ওপর মাত্রাতিরিক্ত হামলার বেলায় শক্তিশালী তদন্ত করা হয়নি। ছিল না ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের শক্ত কোনো প্রতিক্রিয়া। মাঝে মাঝে আইনের শাসনের দুই ধরনের সংস্করণ দেখা যায় এখানে। একটি হলো ইসরাইলিদের জন্য, আরেকটি ফিলিস্তিনিদের জন্য।’
ইসরাইলে নিযুক্ত কোনো মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ক্ষেত্রে এ ধরনের মন্তব্য বিরল বলা চলে। মানবাধিকারকর্মীরা অনেকদিন ধরেই ইহুদি ও আরব-ফিলিস্তিনিদের প্রতি ভিন্ন আইন প্রয়োগের অভিযোগ তুলে আসছেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিনিরা এখনো সামরিক আইনে শাসিত হন; অপরদিকে ইসরাইলিরা বেসামরিক আইনে। এ যুক্তি দেখিয়ে অনেকেই ইসরাইল রাষ্ট্রকে বর্ণবাদী ‘অ্যাপার্থেইড’ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তুলনা করেন। শ্যাপিরোর মন্তব্য ওই যুক্তির এক ধরনের স্বীকৃতিও বটে। ইইউর কড়া সেটেলমেন্ট-বিরোধী প্রস্তাবনা গ্রহণের দিনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ মন্তব্য কাকতালীয় নয়, এটি বুঝতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শ্যাপিরো ‘ভুল করে’ এ মন্তব্য করেননি, তা নিশ্চিতভাবে বোঝা গেল কদিন পর। নেতানিয়াহু থেকে শুরু করে বহু ইসরাইলি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ শ্যাপিরোর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন স্বভাবসুলভ কায়দায়। এমনকি নেতানিয়াহুর সাবেক ‘চিফ অব স্টাফ’ শ্যাপিরোর প্রতি অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করেন। পরেরদিনই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়ে দেন, শ্যাপিরোর অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে ওবামা প্রশাসনের। এমনকি, মার্কিন প্রশাসন ইইউর ‘সেটেলমেন্ট’ বিরোধী ওই প্রস্তাবটিতেও সমর্থন দিয়েছে।
গোঁদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ইইউর প্রস্তাব গ্রহণের একদিন পর বিশ্বখ্যাত মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এই ‘সেটেলমেন্ট’ নিয়ে ‘অকুপেশন ইনকরপোরেটেড’ শীর্ষক একটি বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রসঙ্গত, ‘ইনকরপোরেটেড’ শব্দটি সেসব বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরে বসে, যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে নথিভুক্ত। অর্থাৎ ইসরাইলি দখলদারিত্বের সঙ্গে মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমর্থন ও সম্পর্কের দিকেই মানবাধিকার গোষ্ঠীটির ইঙ্গিত। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কীভাবে বসতি, কারখানা ও ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছে ইসরাইল, তার বিস্তারিত বর্ণনা প্রতিবেদনটিতে রয়েছে। এসব ব্যবসা কীভাবে ইসরাইলের দখলদারিত্বে এবং ফিলিস্তিনি নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নিপীড়ন ও বৈষম্যে অবদান রাখে, তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। ২০-৩০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে দখলকৃত ভূখণ্ডে সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ করতে সকল দেশি-বিদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কদিন আগে নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে বর্ণনা করেছেন ‘সেটেলমেন্ট এন্টারপ্রাইজ’ নামে। তারও কদিন আগে সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গট ওয়ালস্ট্রমকে ইসরাইলে ‘পারসনা নন গ্রাটা’ বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে নেতানিয়াহু সরকার। মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার ও স্পষ্টবাদী ওয়ালস্ট্রম আগেও বহুবার ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলকে ক্রুদ্ধ করেছেন। ওয়ালস্ট্রম ক্ষমতায় বসার কদিন পরই সুইডেন ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রায়ই ইসরাইলি নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে স্পষ্টবাদী কথা বলে আসছেন তিনি। সর্বশেষ ইসরাইলি আইন প্রয়োগকারী বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে কি না, তা তদন্ত করার আহ্বান জানান ওয়ালস্ট্রম। দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে উৎপন্ন পণ্যকে ‘সেটেলমেন্ট প্রোডাক্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং সর্বশেষ সেটেলমেন্ট-বিরোধী প্রস্তাবটির অন্যতম কট্টর সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষকও সুইডেন। এর পেছনেও ওয়ালস্ট্রমের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।
এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি, ইসরাইলের মনোনীত রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ব্রাজিল। কারণ, ওই ব্যক্তি নিজে একজন বসতি স্থাপনকারী (সেটেলার)। তিনি বসতি স্থাপনকারীদের একটি উগ্র গোষ্ঠীর সাবেক নেতাও। এ নিয়ে ব্রাজিলের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক দ্বিতীয় শ্রেণিতে অবনমিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের সরকার ওই পদক্ষেপের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল দখলকৃত ভূখণ্ডের অধিবাসীকে ‘ইসরাইলি নাগরিক’ হিসেবে বিবেচনা করার কোনো ইচ্ছে ব্রাজিলের নেই। এ ছাড়া আসন্ন রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকে কয়েকশ কোটি ডলারের কাজ পাওয়া একটি ইসরাইলি নিরাপত্তা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ব্রাজিল।
সম্প্রতি ইসরাইলের সবচেয়ে বড় শত্রু ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশটিকে বিপুল আকারের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর অল্প সময় পরই এত দিক থেকে একসঙ্গে ইসরাইলি দখলদারিত্বের প্রতি আঘাত হানা হচ্ছে। কিছু ইসরাইলি বিশ্লেষক এ সবকিছুকে ‘দৈব ঘটনা’ মানতে রাজি নন। যেমন, ইসরাইলি পত্রিকা ‘ইয়েদিওথ আহরোনোথ’-এ শিমন শিফার লিখেছেন, ‘শ্যাপিরোর মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, আমাদের নীতিনির্ধারকদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ওবামা প্রশাসন আর সহ্য করবে না। হোয়াইট হাউসের দৃষ্টিভঙ্গি এ ক্ষেত্রে অনেকটা এমন : যথেষ্ট হয়েছে!’
তাঁর মতে, “...এ-ও হতে পারে যে, ইইউর মতো হোয়াইট হাউসও ইসরাইল ও দখলকৃত ভূখণ্ডকে পৃথকভাবে গণ্য করতে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। এটা ভাবাটা অত্যুক্তি হবে না যে, ইসরাইল আর আগের মতো জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্বয়ংক্রিয় সমর্থন বা ‘ভেটো’র ওপর নির্ভর করতে পারবে না।” শিমন শিফার মনে করেন, ইরানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর মার্কিনিদের এমন আচরণ ইসরাইলের প্রতি একধরনের বার্তা বহন করে। শ্যাপিরো তাঁর নিয়োগকর্তাদের নির্দেশেই এমন মন্তব্য করেছেন বলে শিফারের বিশ্বাস। আগে সাধারণত আরব, মুসলিম ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো ইসরাইলবিরোধী পদক্ষেপের দাবিতে সোচ্চার ছিল। এখন ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র ক্ষীয়মাণ মাত্রায় ওই পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে। দেখার বিষয়, এসব পদক্ষেপ কতটা টেকসই ও কার্যকর হয়। ক্রমেই একঘরে হতে থাকা ইসরাইল কীভাবে নতুন এ প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে, সেটিও ভবিষ্যৎ জানাবে।
[সূত্র : হারেতয, দ্য গার্ডিয়ান]
লেখক : সাংবাদিক।