ভুলি নাই ২১
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতেই শহীদদের স্মরণে মিনার
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা করে তৎকালীন পুলিশ বাহিনী। নির্বিচারে গুলি চালায় মিছিল লক্ষ্য করে। তখন শহীদ হন সালাম, রফিক, শফিউরসহ অনেকে। ঘটে যাওয়া এই অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বাংলার সর্বত্র। ছাত্রসমাজ ফেটে পড়ে নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রতিবাদে। যার ফলে আমরা দেখি ২৩ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রনেতা গোলাম মওলা ও তাঁর সহযোগীদের উদ্যোগে প্রায় ৩০০ মানুষ একটি মিনার রাতারাতি গড়ে তোলেন, যা ছিল ১১ ফুট লম্বা ও ত্রিস্তরবিশিষ্ট।
এ সময় মিনার নির্মাণে অংশ নেওয়া বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। এই মিনারের মূল নকশা করেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বদরুল আলম। নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি স্তরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মেডিকেলের আরেক ছাত্র সাঈদ হায়দার। মিলিটারি কারফিউ আর হিম করা শীত উপেক্ষা করে তৈরি করা এই শহীদ মিনার দেখতে পরদিন ভিড় জমায় শত শত মানুষ। মিনারতলে ফুল থেকে শুরু করে টাকা-পয়সা পর্যন্ত অনেক কিছুই দান করতে থাকে তারা। নাম না- জানা এক নারী দান করেন তাঁর গলার হার।
শাসকশ্রেণি বেশিদিন সহ্য করেনি এই মিনার। তৈরির তিন দিন পর তাদের নির্দেশে মিনারটি শুধু ধ্বংসই করেনি পুলিশ, পাশাপাশি ধ্বংসাবশেষও নিয়ে যায় তারা। তবে খুব বেশি দিন বাঙালিকে মিনারবিহীন রাখতে পারেনি তারা। চার বছরের মধ্যে আবার তৈরি হয় মিনার। সেই মিনার আরো বড়, আরো উঁচু, আরো সংহত।
গ্রন্থনা : সেখ ফয়সাল আহমেদ