মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও কারচুপি!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক দেশ হলেও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের দলীয় লড়াই প্রক্রিয়া নিয়ে আছে নানা বিতর্ক। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সে বিতর্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
রিপাবলিকান ফ্রন্টরানার ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ডেলিগেট নির্বাচনে কারচুপি করে তাঁর ও বার্নি স্যান্ডার্সের মনোনয়ন কেড়ে নেওয়ার ষড়চন্ত্র চলছে। ক্লিনটন-শিবির পাল্টা অভিযোগ করে বলছে, সুপারডেলিগেটদের মাধ্যমে সিস্টেমে কারচুপি করতে চাইছেন স্যান্ডার্স।
নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সম্প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে যাওয়ায় কারচুরির অভিযোগ তুলছেন ট্রাম্প।
সিএনএনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক কার্ল হাগল্যান্ড বলেছেন, মিডিয়া এমন একটি ধারণা তৈরি করেছে যে ভোটাররা প্রার্থী নির্বাচন করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। আইনে এখনো পরিষ্কার বলা আছে, রাজনৈতিক দল তাদের কনভেনশনে প্রার্থী মনোনীত করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেশির ভাগ সময় পর্দার অন্তরালে দলের শক্তিশালী লবি, প্রার্থী মনোনীত করেছে। বিবিসির মতে, দলগুলো চলে প্রাইভেট ক্লাবের মতে, বাইরের যে কাউকে তারা সন্দেহের চোখে দেখে।
সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য এ মনোনয়ন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করা হয়েছে। যেখানে প্রাইমারি আর ককাসে অংশ নিয়ে যে কেউ দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারছেন। তবে মূল ক্ষমতা এখনো পার্টি হেভিওয়েটদের হাতে, যা নিয়ে চিন্তিত দুই দলের দুই প্রার্থী ট্রাম্প আর স্যান্ডার্স। দুই প্রার্থীর সমর্থকদের একাংশ মনে করে, পার্টি স্টাবলিশমেন্ট তাঁদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
রিপাবলিকান মনোনয়ন লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর সমর্থকদের আশঙ্কা দল তাঁকে প্রার্থী হতে দেবে না। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে বহু অভিযোগ থাকলেও স্যান্ডার্স সম্পর্কে কোনোভাবেই তেমনটি বলা যাবে না। কিন্তু তাঁর দল ডেমোক্রেট পার্টির স্টাবলিশমেন্টও তাঁর বিরুদ্ধে। স্যান্ডার্স সমর্থকরা মনে করেন, সুপারডেলিগেট দিয়ে পার্টি নেতারা স্যান্ডার্সকে হারিয়ে দেবেন।
গত আটটির মধ্যে সাতটি রাজ্যে জিতেও ডেলিগেট সংখ্যায় স্যান্ডার্স এখনো হিলারির অনেক পেছনে। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, সাবেক ফার্স্ট লেডি এ পর্যন্ত পেয়েছেন এক হাজার ৩০৫ জন ডেলিগেটের সমর্থন। আর স্যান্ডার্স পেয়েছেন এক হাজার ৮৬ জন ডেলিগেটের সমর্থন। কিন্তু সুপারডেলিগেটদের সমর্থন যোগ করলে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন হিলারি।
দলীয় নেতারা সুপারডেলিগেট হিসেবে পার্টি কনভেনশনে ভোট দেবেন। এ পর্যন্ত ৪৬৯ সুপারডেলিগেটের সমর্থন নিশ্চিত হওয়ায় হিলারির ভোট দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৭৭৪। দলের একজন সিনেটর হলেও স্যান্ডার্স এ পর্যন্ত পেয়েছেন মাত্র ৩১ জন সুপারডেলিগেটের সমর্থন। ফলে তাঁর মোট ডেলিগেট দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ১১৭ জন। ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন পেতে একজন প্রার্থীর লাগে দুই হাজার ৩৮৩ ডেলিগেটের ভোট।
হিলারির প্রেস সেক্রেটারি ব্রায়ান ফেলন কারচুপির অভিযোগ সম্পর্কে সিএনএনকে বলেছেন, রিগিংয়ের কথা যদি বলেন, সিনেটর স্যান্ডার্স তাই করার চেষ্টা করছেন।
হিলারির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ১৯ এপ্রিল নিউইয়র্কে হিলারি ভালোভাবে জিতে গেলে স্যান্ডার্স আর লড়াইয়ে থাকতে পারবেন না। সেক্রেটারি অব স্টেটের দায়িত্ব নেওয়ার আগে হিলারি দুই মেয়াদে নিউইয়র্কের সিনেটর ছিলেন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের সদর দপ্তরও এখানে। আর নিউইয়র্কে জন্ম নিলেও স্যান্ডার্স বহু বছর আগেই এ রাজ্যে ছেড়েছেন।
জনমত জরিপেও হিলারি স্যান্ডার্সের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন। নিউইয়র্কে আছে ২৯১ ডেলিগেট।
হিলারি সমর্থকদের আরো যুক্তি আছে। তাঁদের মতে, হিলারি যে শুধু বেশি সংখ্যক রাজ্যে জিতে বেশি সংখ্যক ডেলিগেট পেয়েছেন তা নয়, প্রাপ্ত ভোটেও তিনি অনেক এগিয়ে। এ পর্যন্ত হিলারি পেয়েছেন ৯৪ লাখ ১২ হাজার ৪২৬ ভোট। আর স্যান্ডার্সের ঝুলিতে আছে ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৭ ভোট।
রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ট্রাম্প ৮২ লাখ ৫৬ হাজার ৩০৯ আর ক্রুজ ৬৩ লাখ ১৯ হাজার ২২৪ ভোট পেয়েছেন। পপুলার ভোটে এগিয়ে থাকার পরও যদি কেউ মনোনয়ন না পান, তা নিয়ে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠবে।
বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করেন, রিপাবলিকান প্রাইমারিতে ট্রাম্প যদি প্রয়োজনীয় এক হাজার ২৩৭ ভোট না পান, তাহলে পার্টি রাজনীতির অন্দরমহলের বহু খেলা বাইরে চলে আসবে। কারণ, তখন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থী মনোনীত হবেন কনভেনশনে। জুলাইয়ের কনভেনশন নিয়ে এরই মধ্যে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে।
ট্রাম্প সরাসরি রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। দলীয় নেতারা তাঁর সঙ্গে নোংরা খেলা খেলছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
তবে রিপাবলিকান দলের একজন সিনিয়র নীতিনির্ধারক স্টিভ স্টিভেন্সের মতে, হেরে গিয়েই ট্রাম্প নানা অজুহাত খুঁজছেন। যেমন আইওয়া ককাসে হারার পর তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘ট্রেড ক্রুজ আইওয়াতে জেতেননি, তিনি ভোট চুরি করে নিয়েছেন।’
এক পক্ষ আরেক পক্ষের দিকে আঙুল তুললেও, এখন দুই গ্রুপই চেষ্টা করছে, ডেলিগেট হিসেবে নিজেদের আস্থাভাজনদের কনভেনশনে নিতে। কারণ, রিপাবলিকান প্রার্থী চূড়ান্ত হতে পারে কনভেনশনে, ডেলিগেটদের সরাসরি ভোটে। কনভেনশনের ভোটে হেরে গেলে কারচুরির অভিযোগ তুলে গলা ফাটালেও লাভ হবে না। কারণ কনভেনশনে বিজয়ী ঘোষিত হয়ে যাবেন রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে।