বিশ্ব মা দিবস
ভালোবাসা ও নির্ভরতার নাম মা
মাকে নিয়ে কিছু লেখা সত্যি কঠিন। মাকে ঘিরে ভালোবাসার এত উদাহরণ যে ঠিক কোথা থেকে তাঁকে নিয়ে লেখা শুরু করা যায়, তা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হয়। শুধু লেখা কেন, বলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, মাকে কতটা ভালোবাসেন? এ প্রশ্নের ঝটপট উত্তর কারো জানা নেই। চিন্তা করে জবাব দিতে হয়, ঠিক কী বললে উত্তরটি যথার্থ হয়। আসলে মা সন্তানের সম্পর্কটাই এমন। এই ভালোবাসার ব্যাখ্যাটি দুরূহ।
আমার কাছে মনে হয়, মা এবং সন্তান আলাদা শরীরে একই সত্তার বসবাস। এটি শুধু কথার কথা নয়, প্রমাণিত বলা যায়। একান্ত নিজের কথাই যদি ধরি, পরিস্থিতির কারণে মা দূরে থাকেন আমার কাছ থেকে; ইচ্ছা থাকলেও সব সময় কাছে থাকা হয় না। দেখা গেছে, কখনো মা অসুস্থ বোধ করছেন, একান্ত নিজের ভেতরে নিজে কষ্ট সইছেন, দূরে থাকলেও আমি টের পাই। হয়তো ওই সময়টি নীরবে আমার অস্থিরতায় কাটে; নয়তো খুব ভোরে ঘুম ভাঙে মায়ের কষ্টে থাকার মুখটি দেখে। পরে ফোনালাপে সত্যতা প্রমাণিত হয়। বুঝতে দিই না। তখন ভাবিত হয়, স্রষ্টার একি সৃষ্টি!
অন্যদিকে মায়ের দিক থেকেও একই ঘটনা প্রায়ই ঘটে। অনেক দিন মাকে বলতে শুনেছি, তিনি রাতের ঘুমে স্বপ্ন দেখেছেন ভালো নেই আমি। হয়তো বিপদে আছি কিংবা অসুস্থতায়। ভোরে উঠে জানতে চান, সব ঠিক আছে তো। আমি অনেকবার আশ্চর্য হয়ে তার এমন প্রশ্ন শুধু শুনেই গেছি, আর স্বভাবসুলভ উত্তরে ভালো আছি বা সব ঠিক আছে জানিয়েছি। অথচ এই আমি তখন মা যে আশঙ্কার কথা জানতে চেয়েছেন, সত্যি তেমনি কোনো ঘোর বিপদে দিন কাটাচ্ছি। যদিও চাপা স্বভাবের এই আমি সব সময়ই তা চেপে গেছি। সে ভিন্ন কথা। মা এবং সন্তানের ভালোবাসার এই ব্যাপার আসলে কোনোভাবে ব্যাখ্যা করার নয়।
এখানে হয়তো আমার নিজের কথা টেনে এনেছি। তবে বিশ্বাস করি, কমবেশি সব মা-সন্তানের সম্পর্ক এমনই হৃদ্যতার। খুব ছোটবেলা থেকে বাবাকে পাশে পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু সব সময় নির্ভরতা খুঁজেছি মায়ের কাছে। ভয়ে মুখ লুকিয়েছি মায়ের আঁচলে, কেঁদে চোখের জল মুছেছি মায়ের আঁচলে কিংবা খেয়ে হাত মুছেছি মায়ের আঁচলে।
সেই ছোট থেকে বড় হওয়া অবধি যখনই টাকার প্রয়োজন হয়েছে, হাত পেতেছি মায়ের কাছে। বাবার পকেট থেকে মায়ের হাত ঘুরে সেই টাকা এসে পৌঁছাত। অথচ কী আশ্চর্য ব্যাপার, জানি টাকাটা বাবাই দেবে, চাইলে তিনি হয়তো না করবেন না, তার পরও কখনোই বাবার কাছে হাত পাতা হয়ে ওঠেনি। এখানেও নির্ভরতা খুঁজেছি। জানি, মা ঠিকই টাকা সংগ্রহ করে দেবেন। কারণ না প্রকাশ করলে মান-অভিমান কেবল তার সঙ্গেই যে মানায়। আর যা-ই হোক মা অভিমান করে থাকতে পারেন না সন্তানের প্রতি। যত কঠোর অভিমানই হোক, মায়ের ভালোবাসার কাছে সে অভিমান চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় মুহূর্তে। মা-সন্তানের সম্পর্ক যেন এখানে এসে আরো মহিমান্বিত, উজ্জ্বল ও অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে।
লেখক : আইনজীবী ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘স্বপ্ন’।