বাজেট প্রতিক্রিয়া
সরকার, বাজেট ও বেসরকারি খাত
অতিসম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জাতীয় সংসদে দশমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেন। সে আনন্দ অবশ্য সংসদ সদস্যরা অধিবেশন শেষে কিছুটা ভাগ করে নিয়েছেন। বরাবরের মতো মানুষের মাঝে বাজেট নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তবে অন্যতম ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বেসরকারি কর্মজীবীদের ওপর।
এই সরকারের শাসন আমল থেকে খুব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, তারা জনগণের পাশে থেকে, তাদের সমস্যা দূর করতে যথেষ্ট উৎসাহী। সে লক্ষ্যে তারা কাজও করে যাচ্ছে বটে। জনসাধারণের সমস্যা নিরূপণের চেষ্টা করা ছাড়া যে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা দায়, সে কথা সরকারদলীয় নীতিনির্ধারকরা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করেছেন। তাই জনদুর্ভোগ দূরীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সময়মতো কার্যকারিতায় সরকার বেশ পারদর্শিতার পরিচয়ই দিচ্ছে।
আজ যে বিষয়টি নিয়ে না লিখলেই নয়, সেটা হচ্ছে বাজেট উপস্থাপনে বেসরকারি খাতের পেনশন চিন্তা। এটা নিয়ে অবশ্য সরকার বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছে। এই কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুস সাকিব।
এবার আশা যাক বাজেট প্রসঙ্গে। ভোটের রাজনীতি হোক আর সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেই হোক, সরকারের বেসরকারি খাতের পেনশন চিন্তাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। তা ছাড়া চাকরিজীবীদের ৯৫ শতাংশ লোকের কথা চিন্তা না করে উপায়ই বা কি? তা ছাড়া এই বড় জনসংখ্যাকে সমৃদ্ধ না করে জাতি এগোবেই বা কীভাবে! এই সরকারের সবচেয়ে বড় দূরদর্শিতাই হচ্ছে, সাধারণ মানুষের চাওয়াকে বুঝতে পারা। দেশকে সামনের দিকে, উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা। যার প্রতিফলন পেনশন সুবিধা চালু করার প্রস্তাবনা।
বর্তমানে শুধু সরকারি চাকুরেরাই পেনশন সুবিধা ভোগ করছেন। বেসরকারি খাতে সরকারি খাতের মতো এমন সুবিধা নেই। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটি সুবিধা দিয়ে আসছে। এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতেগোনা। আবার অনেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ডিপোজিট পেনশন স্কিমসহ (ডিপিএস) বিভিন্ন নামে অনেকটা এই ধরনের সেবা নিয়ে আসছেন। অনেকে আবার জানেনও না এসব সেবার কথা। তাই সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা। বেসরকারি খাতকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর সেবা চালু হলে সরকারি নতুন যোগদানকারী কর্মকর্তাদেরও এই সেবার আওতায় আনা হবে। অর্থনীতির ভাষায় এর সুবিধা আরো বেশি। তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে অন্যতম হচ্ছে :
ক) সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, খ) নগরায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে সৃষ্ট একক পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্বল, গ) বাংলাদেশের গড় আয়ু বাড়ায় প্রবীণদের সংখ্যা বেড়ে যাবে যাদের সহায়তা প্রদান সরকারের শুধু একার পক্ষে কষ্টসাধ্য, তাই সবার অবদান রাখার ব্যবস্থা, ঘ) জনগণকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করা, ঙ) জনসাধারণের পাশাপাশি দেশকেও সমৃদ্ধ করা, চ) এই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ, দেশের অর্থিক চাহিদাও পূরণ করবে।
আপাতদৃষ্টিতে উপস্থাপিত পেনশন প্রস্তাব বেসরকারি খাতের জন্য অবশ্যই সহায়ক হবে। বর্তমান সরকারি ব্যাংকিং সিস্টেমে চালু করা অন্য সেবাগুলো জনগণের জন্য লাভজনক। বেসরকারি খাতে যেহেতু পেনশনসেবা এখন পর্যন্ত নেই, সুতরাং অবশ্যই সরকার জনসাধারণের পাশে থেকে সর্বাধিক সুবিধা দেবে এটাই আশা করছি। শুধু আশা নয়, জোর দাবিও জানাচ্ছি। আমি নিজেও বেসরকারি খাতে কাজ করা একজন সামান্য কর্মী হিসেবে এটার দাবি জানাচ্ছি। বেসরকারি খাতে যারা কাজ করছেন, তারা দেশের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের অংশীদার। তারা জাতীয় রাজস্ব সংগ্রহে অবদান রাখে। তাদের অবদান আছে, জিডিপিতে। সুতরাং তাদের জন্য ভালো কিছু কেন নয়? বরং আমার তো অবাক লাগছে, আগে সরকারগুলো কেন এমন ভাবল না। সে যাই হোক, দেরিতে হলেও যখন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এর ধারাবাহিকতা জারি থাকা চাই।
লেখক : প্রকৌশলী