অভিমত
টানা ছুটিতে ঈদ হবে স্বস্তিময়
আগেই ধারণা করা হয়েছিল, ঈদে ঘরমুখো মানুষের কষ্ট লাঘবে বর্তমান সদাশয় সরকার ছুটির বিষয়ে একটা কিছু করতে পারে। যেমনটি করেছিল গত রমজানের ঈদে। কথায় আছে, বিশ্রাম আর কাজের অঙ্গ একসঙ্গে গাঁথা, নয়নের অংশ যেমন নয়নের পাতা’, ‘আবার পেটে খেলে পিঠে সয়’ এসব কথা প্রচলিত আছে। বিশ্রাম পেলে, আনন্দ পেলে, বিনোদন পেলে মন ভালো হয়ে যায়। তখন আবার সবাই নতুন উদ্যমে এসে কাজে লাগতে পারে। তখন স্বাভাবিকের চেয়ে একটু কঠিন কিংবা লোড নিয়ে কাজ করলেও আর মনে কষ্ট লাগে না। কারণ, ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার বিষয়টি মাথায় নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর একদিন ছুটি ঘোষণা করায় একটানা ছয় দিনের ছুটি হয়ে গেল কর্মজীবী মানুষের জন্য। তবে এর জন্য অবশ্য ঈদের পরে এসে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সরকারি কর্মজীবীদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস করার শর্ত রয়েছে।
মুসলমানদের দুটি ঈদের মধ্যে কোরবানি ঈদকে বড় ঈদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর দুটি ঈদের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় মাত্র দুই মাস ১০ দিন। এবারের (২০১৬) রমজানের ঈদের ছুটির ক্ষেত্রে সব পর্যায়ের কর্মজীবী ও চাকরিজীবীদের জন্য আশীর্বাদ ছিল পুরো নয় দিনের ঈদ-ছুটি। সেই ছুটিতে কি গার্মেন্টস, কি সরকারি চাকরিজীবী, কী অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার কর্মজীবী—সবাই এই ছুটি কাটিয়ে অত্যন্ত আনন্দচিত্তে স্বস্তিদায়ক একটি অন্য রকম ঈদ উদযাপন করেছে। তখন নয় দিনের ছুটির হিসাবটি ছিল এ রকম যে, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিন, তার আগের সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে শুক্র ও শনিবার এবং পরের সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র-শনিবারসহ চার দিন। তবে সাধারণত সরকারি অফিসের জন্য ঈদের ছুটি থাকে ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিনসমেত মোট তিন দিন মাত্র। কিন্তু গত রমজানের ঈদেও তা-ই ছিল। সে জন্য দেখা গেছে, পবিত্র শবে কদরের ছুটির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতাবলে একদিন ছুটি বৃদ্ধি করার কারণে সেখানে নয় দিনের ছুটির একটি সুবিধা সকলে পেয়েছিল, যা কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক ইতিবাচক একটি মনোভাব তৈরি করেছিল তখন। ঈদ অনুষ্ঠিত হয় সম্পূর্ণ চান্দ্রমাসিক হিসাবের ওপর ভিত্তি করে।
কাজেই এর ওপরে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চাঁদের হিসাবমতে যেদিনই ঈদ নির্ধারিত হবে, সেদিন তা পালন করাই মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় রীতি। কিন্তু এবারের (২০১৬) কোরবানির ঈদ অনুষ্ঠানের জন্য ক্যালেন্ডারে নির্ধারিত ছিল ১২ সেপ্টেম্বর-২০১৬। তদানুযায়ীই সকলে তাদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছিল। এরই মধ্যে চাঁদ দেখে তা ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখে অনুষ্ঠানের জন্য দিন ধার্য হয়। এতে অনেকের পূর্বের পরিকল্পনার কিছুটা পরিবর্তন করার প্রয়াজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। আর সে জন্যই যে জায়গাটিতে এসে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধিত হয়েছিল, সেটি হলো ছুটি। কারণ, ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার যদি ঈদ হতো, তাহলে আগের সাপ্তাহিক ছুটির শুক্র ও শনিবার মিলে স্বাভাবিকভাবেই মোট পাঁচ দিনের ছুটি সবাই অনায়াসে কাটাতে পারত। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ঈদ হওয়ায় আগের রোববার এবং পরের বৃহস্পতিবারে অফিস খোলা থাকার কথা ছিল।
সেখানে বড় ঈদ খ্যাত কোরবানি ঈদ উদযাপনের জন্য মোট সময় পাওয়া যেত মাত্র তিন দিন। এ জন্য চাকরিজীবীরা খুবই অস্বস্তিতে ছিলেন। অনেকেই বলাবলি করছিলেন, গত রমজানের ঈদে যেখানে নয় দিনের এক লম্বা ছুটি কাটিয়ে এসেছে অনেকে, সেখানে এবারের বড় ঈদে মাত্র তিন দিন ছুটি! তবে যদিও কর্মস্থল থেকে দূর-দূরান্তে গ্রামের দেশের বাড়িতে ঈদ করতে গেলে অফিসের বড়কর্তাভেদে নিজস্বভাবে অনেকে ম্যানেজ করে আগে-পিছে আরো ঐচ্ছিক ছুটি কাটানোর প্রয়াস পান, যা আবার সবার ভাগ্যে জোটেও না। সে জন্য এ বিষয়ে সবাই বাংলাদেশের শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি নির্বাহী আদেশের অপেক্ষায় থাকেন। এবারও তিনি তাঁর ভরসার জায়গায় কাউকে নিরাশ করেননি। আগের মতোই তিনি ঈদের আগে রোববার নির্বাহী আদেশে একদিন ছুটি ঘোষণা করেন, এতে ছয় দিনের ছুটি ভোগ করার সুযোগ পেয়েছেন সবাই।
কর্মজীবীদের জন্য ঈদ, পূজা-পার্বণ ইত্যাদি ছাড়া আর বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এমনিতেই ঈদে রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। সেখান থেকে অর্ধেকের বেশি মানুষ ঈদ উদযাপন করতে তাদের গ্রামের বাড়িতে ছুটে চলে যায়। এদের মধ্যে যেমন রয়েছে উচ্চবিত্ত, তেমনি রয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তসহ সব পর্যায়ের মানুষ। কাজেই ঈদকে স্বস্তিময়, আনন্দময় ও শান্তিময় করার জন্য ছুটির কোনো বিকল্প নেই। গত রমজানের ঈদ এর বড় উদাহরণ। কারণ, ঈদ মানেই তো আনন্দ। তাই এবারের ঈদেও নির্বাহী আদেশে একদিন ছুটি বৃদ্ধি করে সরকার সত্যিকার অর্থেই আরেকটি গণমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, যাতে যানজট, নিরাপত্তা, দুর্ঘটনাসহ অনেক সমস্যারই সমাধানের প্রত্যাশা রয়েছে।
লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।