যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন
হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন কে, হিলারি না ট্রাম্প?
অনেক জল্পনা-কল্পনা পার করে আজ ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবার ৮ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছনেও রয়েছে বিরাট ইতিহাস। ১৭৯২ সাল থেকে এটি প্রবর্তন করা হয়। কারণ সারা দেশের সবস্তরের মানুষ যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে সে জন্য সবদিক বিবেচনা করে নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের মঙ্গলবার সেটি নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে এবার ৮ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোটের দিন আগে থেকেই সূত্রমতে নির্ধারণ করা ছিল। এটি স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শতাধিক বছরের ইতিহাসে ৫৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ৪৫তম ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির নির্বাচন।
সেই শুরু থেকে গাধা ও হাতি মার্কার এ নির্বাচনে যত বাকযুদ্ধই হোক না কেন, শেষপর্যন্ত বিজয়ীকেই আলিঙ্গন করেন বিজিত। এটাই মার্কিন গণতান্ত্রিক নীতি এবং পরমত সহিষ্ণুতার ধরন। তাই এবারও হিলারি ও ট্রাম্পের লড়াইয়ে তাই বাকযুদ্ধ হচ্ছে, হচ্ছে একের পর বিতর্ক, হচ্ছে একের পর এক জরিপ। তবে সব জরিপেই হিলারি ক্লিনটনই কিছু না কিছু পয়েন্টে এগিয়ে থেকেছেন। হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। এবারের মার্কিন নির্বাচনে গাধা মার্কার ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তিনি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের পত্নী হওয়ার কারণে আগে থেকেই ফার্স্ট লেডি হিসেবে হোয়াইট হাউসের অভিজ্ঞতা রয়েছে হিলারির। তিনি ছিলেন একজন সিনেটর। তা ছাড়া তিনি পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের মার্কিন নির্বাচনেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে একজন প্রার্থী ছিলেন।
হিলারি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে না পারলেও পরে ওবামা সরকারের ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হলেও নিজে একজন আইনজীবী হিসেবে অনেক আগে থেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তিগত ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে দেশের গোপন তথ্য পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু নির্বাচনের দুদিন আগে পর্যন্ত তদন্ত করেও এফবিআই এ বিষয়ে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারেনি। যে কারণে নির্বাচনের আগে আরো একধাপ এগিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অপরদিকে হাতি মার্কা নিয়ে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হয়েছেন ধনকুবের ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাবার রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দিয়ে শুরু করলেও বাবার মৃত্যুর পর তিনি নিজেই এর হাল ধরে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি বিশ্বের ৩২৪তম এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৬তম ধনী ব্যক্তি। এর আগে রাজনীতিতে এতটা সক্রিয় না থাকলেও ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি খুবই সফল। তিনি প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর প্রথমদিক থেকে কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে দেশ ও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন। বলা চলে এসব আলোচনা-সমালোচনার ভেতর দিয়েই তিনি রিপাবলিকান মনোনয়ন দৌড়ে অন্য প্রার্থীদের পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে আসেন। নারী কেলেঙ্কারী, মুসলমানদের নিয়ে বেফাঁস কথা বলার জন্য তিনি বেশ কয়েকবার সরাসরি তিরস্কৃতও হয়েছেন হিলারির সঙ্গে আয়োজিত বিতর্কে। তিনি নির্বাচনে না জিতলে ফলাফল মানবেন না বলেও হুমকি দিয়ে চলেছেন মার্কিন ভোটারদের। তারপরও আগের চেয়ে দিনে দিনে হিলারি-ট্রাম্প ব্যবধান কমে ট্রাম্পের পাল্লাই আস্তে আস্তে ভারী হয়ে আসছে বলে প্রতিমুহূর্তে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।
তবে অনেকে ধারণা করছেন, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে কিছু নতুন ইতিহাস সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকার ইতিহাসে প্রেসিডেনসিয়াল নির্বাচনে কোনো দল থেকে এবারই কোনো নারী মনোনয়ন পেলেন। আর যদি তিনি নির্বাচিত হতে পারেন, তবে তা হবে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম হোয়াইট হাউসের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ। কোনো দল পরপর দ্বিতীয়বার পর্যন্ত সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার রেকর্ড থাকলেও টানা তৃতীয়বারের মতো এখনো কেউই সে সুযোগটি পাননি। হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সেই রেকর্ডটিও ভাঙবে। আর ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান ইস্যু যেমন অভিবাসী, পররাষ্ট্রনীতি, শরণার্থী, জলবায়ু পরিবর্তন এবং গর্ভপাত ইত্যাদিতে জনস্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। সে জন্য এত বিতর্ক ছড়ানোর পরেও যদি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও সেখানকার ভোটারদের সচেতনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠবে।
তবে যদি ট্রাম্প জিতে যান, তাহলে ধরে নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাঁদের দেশের জন্য কোনো নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান না। তা ছাড়া তুলনামূলকভাবে শুভ ও বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন হিলারিরই প্রেসিডেন্ট হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন সেটা দেখার জন্য আর অল্প কিছু সময় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলেই জানা যাবে। কিন্তু একটি বিষয় এখানে খুব পরিষ্কারভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। আর তা হলো যদি কোনো কারণে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই যান, তাহলে তিনি বর্তমানে যেভাবে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে ভীতি ছড়াচ্ছেন বাস্তবে তিনি তা করবেন বলে মনে হয় না। কারণ একজন প্রেসিডেন্টই সব ও শেষ কথা নয়। সেখানে সিনেট রয়েছে। সেখানে যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সেভাবেই দেশ ও বিশ্ব রাজনীতি চলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
লেখক : কৃষিবিদ ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়