‘প্রবাস থেকে ভবিষ্যৎ সুপারস্টার তৈরি করতে চাই’

‘প্রবাসী গাও জীবনের গান’—এ স্লোগানকে সামনে রেখে মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে শুরু হয়েছে গানের প্রতিযোগিতা ‘এমএমলাইভ-সিঙ্গারস অব লাইফ-২০২০’। মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা ছাড়াও এ প্রতিযোগিতায় সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নিতে পারবেন।
গত ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অডিশন রাউন্ড থেকে বাছাই করা প্রতিযোগীদের নিয়ে আগামী বছরের ২৬ জানুয়ারি গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হবে। এ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় এমএমলাইভের কো-ফাউন্ডার ও প্রধান নির্বাহী জাফর ফিরোজের সঙ্গে। এনটিভির মালয়েশিয়া প্রতিনিধি কায়সার হামিদ হান্নানের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো :
এনটিভি : প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আপনারা একটি গানের প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। প্রবাসে যেখানে সবাই নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে এমন একটি উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে বলে আপনি মনে করেন?
জাফর ফিরোজ : কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও প্রবাসে সবাই কাজের মাঝে একটু অবসর খুঁজে নিতে চায়। আর আমরা চাই, সেই অবসর সময়ে মেধাবী প্রবাসীকে খুঁজে বের করে আনতে। আমরা যখন এই প্ল্যানটা নিয়ে আমাদের টিমের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, কাজটা বাংলাদেশের মতো এত সহজ নয়। কারণটা আপনিই বললেন যে, এখানে সবাই ব্যস্ত। আবার এখানে বাংলাদেশি মিউজিশিয়ান, সংগীত পরিচালক পাওয়াও সহজ নয়। আমরা সবকিছু মাথায় রেখেই কাজটায় হাত দিয়েছি। কিন্তু এরই মধ্যে প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ আমাদের কঠিন কাজটাকে সহজ করে দিয়েছে। আমাদের কাছে এরই মধ্যে অনেক অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়েছে। সেখানে মালয়েশিয়ার সবকটি প্রদেশের বাইরেও সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে প্রবাসীদের ভিডিও রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা প্রবাস থেকে এমন কিছু প্রতিভাকে সমগ্র জাতির কাছে তুলে ধরতে পারব, যারা আসলেই জহুরির হাতে পড়লে রত্ন হয়ে প্রকাশ পাবে।

এনটিভি : আপনারা কি সেই রত্নের সন্ধান পেয়েছেন?
জাফর ফিরোজ : আমরা এর ভার সম্মানিত বিচারক ও দর্শকদের ওপর রাখতে চাই। আমাদের বিশ্বাস, তাঁরা তাঁদের বিচারকাজের মাধ্যমে আগামী ২৬ জানুয়ারি কুয়ালালামপুর থেকে প্রিয় দেশকে ভবিষ্যৎ সুপারস্টার উপহার দেবেন। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা প্রবাস থেকে ভবিষ্যৎ সুপারস্টার তৈরি করতে চাই।
এনটিভি : এখানে প্রবাসী যাঁরা আছেন, তাঁরা বিভিন্ন জন বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। এ প্রতিযোগিতায় কোন সেক্টরের মানুষ বেশি অংশ নিচ্ছেন?
জাফর ফিরোজ : প্রতিযোগীদের ভেতর বেশিরভাগই অফিশিয়াল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজের সঙ্গে জড়িত। সে তুলনায় ছাত্রদের সংখ্যাটা খুবই কম।
এনটিভি : আপনারা কীভাবে তাঁদের বাছাই করছেন?
জাফর ফিরোজ : আমরা প্রথমে তাঁদের কাছে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে একটি গানের ভিডিও চেয়েছিলাম। সেখান থেকে যাঁরা যাঁরা ইয়েস কার্ড পেয়েছেন, তাঁদের ভিডিও অ্যাপ ও ইউটিউবে প্রকাশ করেছে আমাদের বোর্ড। সেখানে দর্শকরা তাঁদের পছন্দের প্রতিযোগীদের ভোট দিচ্ছেন। এরপর শুরু হচ্ছে ‘ডেঞ্জার জোন’। ‘ডেঞ্জার জোনে’ দর্শকরা সাত দিন ভোট দেওয়ার সময় পাবেন। দর্শকদের ভোট ও বিচারকদের ভোটে ‘ডেঞ্জার জোন’ পার হয়ে ২০ জন প্রতিযোগী যাবেন ‘স্টুডিও রাউন্ডে’। ‘স্টুডিও রাউন্ডে’ প্রতিযোগীদের গ্রুমিং করানো হবে। সেখানে একজন শিল্পী কীভাবে গান গাইবেন, কীভাবে গানের সঙ্গে অভিনয় ও কোরিওগ্রাফ করবেন, শিল্পীর সাজসজ্জা এবং একজন শিল্পীর দেশ ও সমাজের প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধতা আছে, তা শেখানো হবে। ‘স্টুডিও রাউন্ডে’র ভোট ও বিচারকের রায়ে ১০ প্রতিযোগী যাবেন ‘ফাইনাল রাউন্ডে’। ‘ফাইনাল রাউন্ডে’ ১০ প্রতিযোগী ১০টি গান পরিবেশন করবেন। এই সেরা ১০ প্রতিযোগী থেকে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচন করা হবে।
এনটিভি : শিল্পীদের গ্রুমিংয়ের জন্য কাদের রাখছেন?
জাফর ফিরোজ : গ্রুমিংয়ের জন্য ঢাকা থেকে গ্রুমাররা আসছেন এবং মালয়েশিয়া থেকে ফিল্ম ও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কয়েকজন থাকছেন।
এনটিভি : যতগুলো রিয়েলিটি শো দেখেছি, সেখানে দর্শকদের জন্য কোনো পুরস্কারের কথা কথা শোনা হয়নি। কিন্তু এ প্রতিযোগিতায় আপনারা দর্শকদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করছেন। কেন?
জাফর ফিরোজ : আপনি কি অডিয়েন্স ছাড়া সেলিব্রেটি দেখেছেন? দেখেননি। অডিয়েন্সের প্রতি একজন সেলিব্রেটির কিন্তু দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। আমরা সেই দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে অডিয়েন্সের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছি। আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে দর্শক পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকেই পছন্দের শিল্পীকে ভোট দিতে পারবেন।
এনটিভি : কীভাবে নির্বাচন হবে ভাগ্যবান দর্শক?
জাফর ফিরোজ : ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’ সরাসরি সম্প্রচার হবে ‘এমএমলাইভ’ অ্যাপে। লাইভ চলাকালে দর্শকরা ১০ প্রতিযোগী থেকে একজনকে ভোট করতে পারবেন। যাদের ভোটে চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত হবে, তাদের মধ্য থেকে একজন দর্শক পাবেন পুরস্কার। যিনি এই পুরস্কার পাবেন, তাঁর ছবি ও ঠিকানা ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’র স্ক্রিনে এবং সেই সঙ্গে ‘এমএমলাইভ’ অ্যাপে প্রদর্শন করা হবে। তাই, যাঁরা অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, গ্র্যান্ড ফিনালের আগেই তাঁদের নিজেদের প্রোফাইল শতভাগ সম্পূর্ণ করতে হবে, যাতে সত্যিকারের ভাগ্যবান বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দিতে আমাদের জন্য সহজ হয়।
এনটিভি : যে সব প্রতিভাবান শিল্পী এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বের হয়ে আসবেন, তাঁদের কি শুধু ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’ পর্যন্ত নিয়ে আসাই আপনাদের কাজ, নাকি ‘গ্র্যান্ড ফিনালে’র পরও তাঁদের নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে?
জাফর ফিরোজ : দেশের সব মিডিয়ার প্রতি আমাদের একটা আপিল আছে। আপনারা জানেন, প্রবাসে যারা থাকে, তাদের অধিকাংশই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা। সব সময় নিজেদের সঙ্গে সংগ্রাম করে তাদের চলতে হয়। শিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সেই সম্ভাবনাগুলো দারিদ্র্যের যাঁতাকলে এক সময় নষ্ট হয়ে যায়। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের ইচ্ছে চাপা দিয়ে কষ্টকেই বেছে নেয়। আমাদের এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে প্রতিভাগুলো বের হয়ে আসবে, আপনারা সেই প্রতিভাগুলোকে আর হারিয়ে যেতে দেবেন না। কিছু লাইট এই প্রবাসী প্রতিভাগুলোর দিকে জ্বালিয়ে রাখুন, যাতে প্রতিভাগুলো বিকশিত হতে পারে।
এনটিভি : সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
জাফর ফিরোজ : আপনাকেও ধন্যবাদ।