কানাডায় বাংলা বর্ষবরণ উৎসব
দেশের চিরচেনা পরিবেশ, আকাশ-বাতাস, বর্ণ-গন্ধের অভাব বেশ ভালোভাবেই বোধ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাই, যখনই সুযোগ মেলে উজাড় করে বাংলা ও বাঙালির আবহমান প্রতিটি উৎসব পালন করে কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব প্রবাসীই শামিল হন বাংলাদেশের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় উৎসবে।
গত ৯ এপ্রিল কানাডার এডমন্টনে বসন্ত দিনেই বাংলা বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সপ্তাহ শেষে বন্ধে (উইকএন্ডে) এডমন্টন প্লিজেন্ট ভিউ কমিউনিটি হলে আয়োজিত এই উৎসবে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে নাচ-গান, পুতুলনাচ তো ছিলই, মেলাও বসেছিল ১৫টি স্টল নিয়ে। প্রাণোচ্ছ্ল আয়োজনে এসো হে বৈশাখের সুরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে শামিল হন প্রায় দুই হাজার প্রবাসী। বিদেশি আলো বাতাস, সেখানে বকুল-শিউলী-মাধবীলতার ঘ্রাণ ভাসে না। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে দুই হাজার বাংলাদেশির প্রাণের মেলা থেকে ঠিকই অনুরণ তুলেছিল রাখালিয়া বাঁশির সুর। প্রবলভাবে অনুভূতির গোটা অবয়বে ধরা দিয়েছিল রবীন্দ্র-নজরুল, সুকান্ত-জীবনানন্দ, শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ-হেলাল হাফিজ-রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পুরো অনুষ্ঠান লাল সবুজের পতাকায় একসুতায় বেঁধেছিল বাংলাদেশের প্রাণ।
বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের মতো বড় জমায়েত সচরাচর হয় না কানাডায়। অনেকের সঙ্গে দেখা, অনেক না বলা কথার ফুলঝুরি আর শুভেচ্ছা বিনিময়ে পুরো কমিউনিটি হল হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। সব মানুষ একসঙ্গে গেয়ে ওঠেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’। এতে আক্ষরিক অর্থেই গভীর ভাবাবেগে আক্রান্ত হন সবাই। শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের প্রবাসী বাংলাদেশিদের নান্দনিক উপস্থাপনায় ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখ স্থান করে নেয় সবার মনজুড়ে। প্রবাসীদের বিষাদ আর দূরত্বের কষ্ট কিছুটা ফিকে হয়ে আসে বাংলার উৎসবে।
আনন্দের বর্ণিল ছটা একসময় ফিকে হয়ে আসে, নিজের অজান্তেই মন ছুটে যায় সবুজ শ্যামল সোনার বাংলায়। দূর প্রবাসে দেশের কথা মনে পড়ে চোখের কোণে অশ্রু জমে। বর্ষবরণের আনন্দ আর উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে একসময় প্রতিটি বাংলাদেশির মন টেনে নিয়ে গেছে চৈত্রের দাবদাহে গাছের সুশীতল ছায়া আর পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-কর্ণফুলীর প্রিয় মাতৃভূমিতে।