সঞ্চয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য শিক্ষার সুরক্ষায় চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স : সিইও
বাবা ছিলেন সচিব, পরিবারের অন্য সদস্যরাও সরকারি কর্মকর্তা। তাই পরিবারের সবাই স্বপ্ন দেখত বিসিএস ক্যাডার হবেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি ছিল বেশ দুর্বলতা। ছাত্রাবস্থায় একটি এনজিওর মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। পরে এটাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বিমা খাতে তরুণ উদ্যোগী এবং গতিশীল পেশাদারত্ব ও দক্ষতার সাক্ষর রাখেন মাত্র ৪২ বছর বয়সে। দেশের বিমা খাতের সর্বকনিষ্ঠ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
বলছিলাম এস এম জিয়াউল হকের কথা। যিনি দক্ষতা ও নৈপুণ্য দিয়ে বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের মাধ্যমে বিমা ব্যবসার সম্প্রসারণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। ক্ষুদ্র ও গ্রুপ বিমার বিভিন্ন সেক্টরে বিমা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে সর্বশেষ হয়েছেন চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সিইও।
শিক্ষাজীবনে জিয়াউল হক প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জনের মাধ্যমে লোক প্রশাসন বিভাগে বিএসএস (সম্মান), এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তীতে মানবসম্পদ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও ফিন্যান্স বিষয়ে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি আমেরিকার লাইফ অফিস ম্যানেজম্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন (লোমা) ইনস্টিটিউট থেকে বিমা বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রোফেশনাল ডিগ্রি ফেলো লাইফ ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট (এফ এল এমআই) অর্জন করেন। এছাড়া তিনি জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। বিমা পেশায় প্রচুর কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিচ্ছেন।
নিরহংকারী, কর্মীবান্ধব, সাদামাটা জীবনের অধিকারী এস এম জিয়াউল হকের মুখোমুখি হয়েছে এনটিভি অনলাইন। চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স অফিসে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের বিশেষ প্রতিনিধি মো. জাকের হোসেন।
এনটিভি অনলাইন : পরিবারের লোকজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও বিমা পেশাকে কেন বেছে নিলেন?
এস এম জিয়াউল হক : পড়াশোনা শেষ করার পর প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি করার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমি কাজ করার আগ্রহ দেখাই। পরবর্তী সময়ে অ্যালিকো কোম্পানিতে ম্যানেজম্যান্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাই। সেখানে বিমা পেশার যাবতীয় কার্যক্রম সরাসরি অবলোকন করার পর অনুপ্রাণিত হয়ে আমি বিমা পেশাকে হৃদয়ে ধারণ করি। আমি মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করি বিমা পেশার গুরুত্ব। তখন থেকেই একজন একনিষ্ঠ বিমাকর্মী হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মানসে দৃঢ় প্রত্যয়ী হই এবং জীবন বিমাকে পেশা হিসেবে বেছে নিই।
এনটিভি অনলাইন : চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স নিয়ে এলো চার্টার্ড সুরক্ষা। চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সকে কেন চতুর্থ প্রজন্মের কোম্পানি বলা হয়?
এস এম জিয়াউল হক : বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমি-আপনি সবাই অনেক ভালো থাকতে চাই। পরিবারের জন্য হলেও ভালো থাকতে হবে। পরিবার নিয়ে সবাই ভালো থাকবেন। চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স চতুর্থ প্রজন্মের ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। এ কোম্পানি ভালো সেবার মাধ্যমে গ্রাহকের আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। নতুন নতুন প্রোডাক্ট উদ্ভাবনের কারণে মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের প্রজন্মকে এভাবে ধরা হয়, ১৯৭৩ সালে জীবন বিমা করপোরেশন, সাধারণ বিমা করপোরেশন ও আমেরিকান লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (অ্যালিকো) প্রথম প্রজন্মের বিমা বলা হয়। ১৯৮৫ সালে যখন বেসরকারীকরণ হয়, তখন দ্বিতীয় প্রজন্মের বিমা কোম্পানি আসে। যেমন ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি। এরপর তৃতীয় প্রজন্মের ইনস্যুরেন্স কোম্পানি আসে ১৯৯০ সাল থেকে ২০০০ সালের দিকে। এরপর ২০১১ সালে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআর) প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ২০১৩ সালে একসঙ্গে ১৪টি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। এদের চতুর্থ প্রজন্মের ইনস্যুরেন্স বলা হয়।
এনটিভি অনলাইন : দেশে বহু ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও গ্রাহক আপনার ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কেন আসবে?
এস এম জিয়াউল হক : গ্রাহকদের আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসায় এগিয়ে চলছে দেশের অন্যতম জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। মানুষের জীবনে নিরাপত্তায় ছায়া হয়ে কাজ করা চতুর্থ প্রজন্মের এই বিমা প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই থেকে ব্যবসা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের শুরুতে চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রতি মাসে প্রিমিয়াম আয় ছিল এক কোটি টাকা। ব্যবসায়িক সফলতার ধারাবাহিকতায় এখন প্রতি মাসে ছয় থেকে সাত কোটি টাকা প্রিমিয়াম অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। অদম্য অগ্রযাত্রার পথিক প্রতিষ্ঠানটির গত দুই বছরে প্রিমিয়ামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭০ শতাংশ। গৌরবোজ্জ্বল এই প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে এ বছর ৬০ কোটি টাকা লাইফ ফান্ডে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করা এই প্রতিষ্ঠানটি করপোরেট সুশাসন চর্চা ও মানুষের জীবন নিরাপত্তা সেবা দিয়ে আসছে। দেশের অন্যতম সেরা এই জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) দ্বারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত একটি জীবন বিমা কোম্পানি। এ কোম্পানি জীবন বিমা ও গ্রুপ বিমা পলিসি বিক্রি করে। এ কোম্পানি বিভিন্ন ধরনের বিমা পণ্য বিক্রি করে, যা কোম্পানির বর্তমান ও সম্ভাব্য পলিসি হোল্ডারদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে আসছে। বর্তমানে কোম্পানিটি সারা দেশে ৩০টি সেলস অফিস, ২৫টি ব্রাঞ্চ অফিস, এবং ১৭টি ইউনিট অফিসের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
এনটিভি অনলাইন : প্রযুক্তিগত ভাবে চার্টার্ড লাইফের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলুন?
এস এম জিয়াউল হক : বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিন-চারটি কোম্পানি প্রযুক্তিগতভাবে শক্ত অবস্থানে আছে। চার্টার্ড লাইফ তাদের মধ্যে একটি। চার্টার্ড লাইফ তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলস্বরূপ গ্রাহকদের সব ধরনের সেবা–যেমন সঠিক সময়ে পেমেন্ট, বিমা দাবি নিষ্পত্তি এবং কর্মীদের যাবতীয় কমিশন ও অন্যান্য সুবিধা দ্রুততার সঙ্গে প্রদান করা হয়েছে। গ্রাহক প্রিমিয়াম জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানার সুযোগ পাচ্ছে।
এনটিভি অনলাইন : তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা থাকলেও চতুর্থ প্রজন্মের বিমা কোম্পানিগুলো কেন শেয়ারবাজারে আসছে না বা আসতে পারছে না?
এস এম জিয়াউল হক : বিমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসতে হলে দুটি বিষয়ে যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, তা হলো :
ক. লাইফফান্ড পজিটিভ হতে হবে।
খ. পলিসি ভ্যালুয়েশনে সারপ্লাস আসতে হবে।
কিন্তু নতুন কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায়িক খরচ পরিচালনা করার পর তিন বছরের মধ্যে পজিটিভ লাইফ ফান্ডে আসতে পারেনি এবং ভ্যালুয়েশনেও সারপ্লাস আনতে সক্ষম হয়নি। এ ক্ষেত্রে নতুন কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ থাকে ভালো ব্যবসা করে লাইফ ফান্ড পজিটিভ এবং ভ্যালুয়েশন সারপ্লাস করা। বাংলাদেশের চতুর্থ প্রজন্মের বিমা কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় এই সক্ষমতা এখনও দেখাতে পারেনি বলেই তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার বাধ্য-বাধকতা থাকলেও শেয়ারবাজারে আসতে পারছে না।
এনটিভি অনলাইন : দেশের বিমা কোম্পানিগুলোকে শৃঙ্খলায় আনার ক্ষেত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআর) কেমন ভূমিকা রাখছে?
এস এম জিয়াউল হক : আইডিআর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আমাদের জাতীয় বিমা দিবস দিয়েছে এবং আমাদের একটি অবস্থান দিয়েছে। কিন্তু বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআর) বিমা কোম্পানিগুলোকে পরিচালনা করার জন্য যে লোকবল দরকার, তা এখনও তৈরি হয়নি। কেননা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার পর তারা দেড় দুই বছর বা কিছুদিন কাজ করার পর আবার ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে। এতে বিমা কোম্পানিগুলোকে পরিচালনায় তাদের দক্ষতা দেখাতে পারছিলেন না। তবে এখন স্থায়ী লোকবল দেওয়ায় তারা দক্ষতার সঙ্গে বিমা কোম্পানিগুলোকে পরিাচালনায় সক্ষম হচ্ছেন।
মানুষ তো সঞ্চয় করে ভবিষ্যতের জন্য। একপর্যায়ে মানুষ ফ্ল্যাট, জমি, ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু এসবে লোকসান ও বিভিন্নভাবে প্রতারিত হওয়ার পর এখন বিমাতে তারা নির্ভরতা খুঁজে পায়। আমাদের দেশের মানুষ চায় অধিক মুনাফা, কিন্তু ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কোনো মুনাফা দেয় না। ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দেয় মানুষকে সুরক্ষা। ইনস্যুরেন্স আপনার বিপদে সবার আগে যাবে।
ব্যাংকে আপনি পাঁচ হাজার টাকা করে রেখে ১২ মাসে ৬০ হাজার টাকা জমাবেন। আপনার প্রয়োজনে আপনি তুলতে পারবেন। আপনি শুধু এ টাকাই পাচ্ছেন। কিন্তু চার্টার্ড ইনস্যুরেন্সে আপনি যদি ৬০ হাজার টাকা রাখেন দেখা যাবে আপনি স্বাস্থ্য বিমায়, দুর্ঘটনায় বা অসুস্থতায় কভারেজ পাচ্ছেন ১০ লাখ টাকার। এ সুবিধা দিতে গিয়ে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কিন্তু অনেকে ভোক্তার টাকা জমা রেখে সেই টাকা যে ঘটনার শিকার তাকে দিচ্ছে। এ জিনিস তো মানুষ বুঝে না; মানুষ বোঝে ইনস্যুরেন্স মানে অধিক মুনাফা। যখন ইনস্যুরেন্স অধিক মুনাফা দেয় না তখন মানুষ ইনস্যুরেন্সের প্রতি আকৃষ্ট হয় না।
এনটিভি অনলাইন : বিমা করলে গ্রাহক টাকা ফেরত পায় না, আছে ফিল্ড পর্যায়ে দুর্নীতিও—এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
এস এম জিয়াউল হক : বিমা কোম্পানি এবং বিমা গ্রাহকের অসচেতনতার কারণে বিমা গ্রাহক মাঝেমধ্যে টাকা ফেরত পায় না। এর প্রধান কারণ, বিমা গ্রাহকরা নবায়ন প্রিমিয়াম সঠিক ভাবে জমা দেয় না। বিমা কোম্পানিগুলোও এর দায় এড়াতে পারে না। কারণ বিমা প্রতিনিধিরা বিমা গ্রহীতার কাছ থেকে কখনও কখনও নগদ টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিতে জমা না দেওয়ায় এ ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পলিসিগুলো তামাদি হয়ে যায় এবং বিমা গ্রহীতা টাকা ফেরত পায় না। ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঠিকভাবে সংযুক্তি করা হলে এ ধরনের অনিয়ম কমে যাবে এবং বিমা গ্রহীতা সঠিকভাবে টাকা ফেরত পাবে। এ ক্ষেত্রে আইডিআরএর বিভিন্ন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে আরও বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। টাকা পাওয়া কিন্তু দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপার। কিন্তু টাকা পেলেও কী মানুষ জানে? ১০ লাখ টাকা দিয়ে আমি তো বলব না ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। আপনিও কী বলবেন? আমি ১০ লাখ টাকা পেয়েছি? হয়তো ১৫ হাজার টাকা দাবি পাননি। এটাই কিন্তু আপনি সবাইকে বলে বেড়াবেন পাননি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৭৭ ভাগ ক্লেইম আমরা ইয়ারলি সেটেল করেছি, বিমা দাবি দিয়েছি। আমিও বিশ্বাস করি শতভাগ দেওয়া উচিত। এখন কেউ যদি সঠিক সময়ে টাকাটা জমা না দেয় এবং ৩১ দিনের মধ্যে তার যদি কাভারেজ আসে তারমধ্যে দুর্ঘটনা বা মৃত্যু হলে আমরা কাভারেজ দিতে পারি, কিন্তু সে ৩১ দিনের পরে যখন পলিসিটা বন্ধ হয়ে যায়। তখন কিন্তু কোনো টাকা থাকে না, তা তামাদি হয়ে যায়। প্রথম দুই বছরে। এই বিষয়গুলো কাস্টমারকে সঠিকভাবে জানতে হবে, জানাতে হবে।
এনটিভি অনলাইন : দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে বিমা কোম্পানির ভূমিকা কী হতে পারে?
এস এম জিয়াউল হক : আমাদের সরকার এত বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে উপকার করবে? যদি মানুষ নিজেকে নিজের মাধ্যমে সুরক্ষা না করে বিমার মাধ্যমে? যখনি দেশে বিপর্যয় ঘটে, আমেরিকায় বেল আউট হয়েছে কিন্তু অর্থনীতির চাকা ঠিক ছিল। ওই সব দেশে প্রত্যেকটি কোম্পানি তার ব্যাকগ্রাউন্ডে ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে সুরক্ষিত। দেখা গেল কোম্পানির লোকসান হয়েছে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি তাকে রিফান্ড করে দিয়েছে। তাতে তার অর্থনীতি ধসে যায়নি। আমাদের দেশে একটা বড় ঝড় হলে শস্যের ক্ষতি হয়ে যায়। আমাদের যদি শস্য বিমা করা থাকত। তাহলে সমস্যায় পড়তে হতো না। ভারতে শস্য বিমা করা আছে, তারা সেখান থেকে নিরাপদ। গবাদি পশুর বিমা হতে পারত। আমাদের এখন সুন্দর নীতিমালা আছে, সহযোগিতা আছে, আমাদের কোম্পানিগুলোর উদ্যোগে আসতে হবে এবং জনসচেতনতার প্রয়োজন হবে। সেখান থেকে আপনাদের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন হবে। চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সসহ বিশাল শিক্ষিত একটি গোষ্ঠী এখন বিমা খাতে নিজেকে তৈরি করছে। আপনি দেখেন, দেশে যখন কোনো দুর্যোগ হয়, তখন মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ বিদেশে দুর্যোগ হলে সবাই ইনস্যুরেন্স থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্য বিমা না থাকায় সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে দুর্যোগ হলে খাবারও পায় না, চিকিৎসা নেই। এ অবস্থায় যদি স্বাস্থ্য বিমা থাকত তাহলে দেখা যায়; সব চিকিৎসার খরচ বিমা কোম্পানি বহন করবে। তাহলে বড় ধরনের সে সুরক্ষা পেত। ইনস্যুরেন্স বললে সাধারণ মানুষ মনে করে আগুন লাগলে সুরক্ষা, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সুরক্ষা অথবা দুর্ঘটনায় মারা গেলে সেই সুরক্ষা।
কিন্তু আমি বলব ইনস্যুরেন্স হচ্ছে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের নিরাপত্তা, বৃহৎ সঞ্চয়ের নিরাপত্তা, সন্তানের শিক্ষার নিরাপত্তা, বৃদ্ধ বয়সে পেনশনের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা, সম্পদ রক্ষার নিরাপত্তা। বহির্বিশ্বে কিন্তু যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দেখভাল করে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো দায় থাকে না। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষের ইনস্যুরেন্স না থাকায় কোনো কিছু ঘটলে সরকারের কাছে হাত পেতে বসে থাকতে হয়। মানুষ সফলতা দেখে না, তাই ইনস্যুরেন্সে আসে না। গত বছর আমাদের একটা অনুষ্ঠান ছিল ফিউচার লিডার। ৭১ জন সেখানে কোয়ালিফাই করেছে। আমরা একটা কনটেন্ট দিয়েছিলাম, আমাদের যারা সেলসম্যান। এরমধ্যে ৭১ জন কোয়ালিফাই করেছে এবং সেখানে এক ঘণ্টা বক্তব্য রেখেছেন আমাদের ভাইস-চেয়ারম্যান। আমাদের প্রিয় মানুষ শাইখ সিরাজ। স্যার এক সময় সবাইকে প্রশ্ন করলেন, ভবিষ্যতে তোমরা কী হতে চাও? নিজের সাফল্য কোথায় দেখতে চাও? মেজরিটি বলল, আমরা সিইও হতে চাই। চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি চতুর্থ প্রজন্মের কোম্পানি। যারা উন্নত সেবার মাধ্যমে গ্রাহককে তার আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছে। গ্রাহককে ভালো সেবা দিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনি প্রডাক্টের মাধ্যমে নতুন প্রডাক্টের সেবা দিতে পেরেছে এবং প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করতে পেরেছে।
এনটিভি অনলাইন : সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিক ইন্ট্রো গ্রাফিক্সসহ তথ্য দিয়ে জানাল বাংলাদেশের পাঁচ শতাংশ কোম্পানিও ভোক্তাদের দাবী পূরণে সক্ষমতা রাখে না অথবা উদাসিনতা কাজ করে। এ ক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কী?
এস এম জিয়াউল হক : আপনারা জানেন নিশ্চয়ই, আমাদের ইনস্যুরেন্স কোম্পানি আইনের মধ্যে এবং আমাদের বিসিকের সঙ্গে অন্তর্বর্তী হওয়ার জন্য, প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যে এতে আসার একটা নির্দেশনা ছিল। কিন্তু আমি দেখেছি ১০ বছর হয়ে গেছে নতুন কোম্পানির ১৩-১৪টি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির মধ্যে তিনটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেখানে চার্টার্ড দ্বিতীয়। এখন এ জায়গায় বিসিক আমাদের অনেক ছাড়ও দিয়েছে। কারণ আমাদের পেইডআপ ক্যাপিটাল যা হওয়ার কথা এটাকে বিবেচনায় রেখে আমাদের সুযোগ দিয়েছে। প্রথমবার আমরা যখন অ্যাপ্লাই করেছিলাম তখন আমাদের অবস্থান অনেক ভালো ছিল না। দ্বিতীয়বার পে করার পরে আমাদের অনুমোদন দেয়। আমরা এটা পেতে পেতে যেটা হয়েছে, আমরা নভেম্বরে মার্কেট থেকে টাকাটা পাই। এবং পরবর্তী সময়ে আমাদের এই জায়গাতে বিনিয়োগ করতে বলা হয় সেকেন্ডারি মার্কেটে এবং মার্কেট খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
গত বছর কিছু ব্যবসাও শেষের দিকে জানেন অর্থনীতি টার্মেল শুরু হয় এবং গত বছরে ব্যাংক থেকে সবাই টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের এখানে প্রিমিয়াম জমা দিচ্ছিল না। তাতে শেষ কোয়ার্টারেও আমরা ব্যবসা আশানুরূপ করতে পারিনি। এর ফলে যেটা ঘটেছে, আমাদের গত বছরের যেটা লভ্যাংশ সে লভ্যাংশটা আমরা যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলাম, সেরকম হয়নি। এ কারণে আমরা সে পরিমাণ লভ্যাংশ দিতে পারিনি। তবে যেটা আমাদের মিনিমাম কমিটমেন্ট ছিল সে কমিটমেন্ট হিসেবে দিতে পেরেছি। আরও বেশি দিতে পারলে অবশ্যই ভালো হতো এবং এ বছর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এটা ভালো করার। এখন পর্যন্ত বিজনেস গ্রোথে আছি। এত খারাপ কিছুর মধ্যেও আমাদের ৪০% বিজনেস গ্রোথ আছে। আমরা বিনিয়োগ এবং অন্যান্যা পরিকল্পনার মধ্যে যেটা চেষ্টা করছি যেন আগামী বছরের মধ্যে আরও ভালো করতে পারি। ব্যবসায়িক সাফল্য ভালো। আমি বলব, আরও ভালো করলে ভালো লাগত। আমরা যেভাবে গ্রোথ চেয়েছি, সেভাবে হয়তো আসেনি।
আমরা কোভিডের সময় এবং কোভিড পরবর্তী বছরগুলোতে আমাদের ৬০ ভাগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটা আমরা বলব বিশাল সাফল্য। আমরা চাচ্ছি আগামী দুই বছর ৫০ থেকে ৬০ ভাগ এই প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখা এবং ব্যয় সংকোচন নীতি করা।
এনটিভি অনলাইন : এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
এস এম জিয়াউল হক : ধন্যবাদ এনটিভি অনলাইনকেও। আমি এনটিভি অনলাইনের যারা পাঠক আছে আমি সবাইকে আহ্বান জানাব বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমি-আপনি অনেক ভালো থাকতে চাই এবং সেই ভালো থাকার ক্ষেত্রে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক, জীবনের ও সার্বিকভাবে পরিবারের জন্য। তাই আমরা সুন্দরভাবে যদি ইনস্যুরেন্সকে আমাদের জীবনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তাহলে আপনি ও আপনার পরিবার নিয়ে ভালো থাকবেন। সঠিকভাবে জেনে শুনে আপনি ইনস্যুরেন্সের তথ্য নিয়ে বিনিয়োগ করুন। আপনারা ভালো থাকুন।