সাক্ষাৎকার
চমক বলে কোনো শব্দ আমার জানা নেই : সালাউদ্দিন
টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক তারকা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন। এবারও তিনি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চতুর্থবার সভাপতি নির্বাচিত হলে ফুটবলের উন্নয়নে কী কাজ করবেন, একান্ত আলাপচারিতায় তা-ই জানালেন সাবেক এই ফুটবলার।
প্রশ্ন : বাফুফের এবারের নির্বাচন আপনার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জের?
কাজী সালাউদ্দিন : প্রত্যেক নির্বাচনই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচন, আগের নির্বাচন ও ভবিষ্যতের নির্বাচন—সবই আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : নির্বাচনে জিতলে কী কী কাজে প্রাধান্য দেবেন?
কাজী সালাউদ্দিন : আমি যদি নির্বাচনে জিতে আসি, আমি আগে যা করেছি—এবারও সে কাজই করব। আমি ২০০৮ সালে বাফুফে সভাপতির দায়িত্বে আসি। আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন মাঠে খেলা ছিল না। লিগ নিয়মিত হতো না। অনেকেই বলেছে আমাকে, যেখানে মরে গেছে সব কিছু, সেখানে আপনি যাচ্ছেন কেন। তখন আমি বললাম, এটাই আমার কর্তব্য ফুটবলটাকে টেনে তোলা। সেখান থেকে আজ ১২ বছরে ১২টা লিগ হয়েছে। সব খেলাধুলা নিয়মিত হচ্ছে। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগ লিগ নিয়মিত হচ্ছে। সব জায়গায় খেলা হচ্ছে। একটা বেজ তৈরি হয়ে গেছে। একটা ৩০-৩২ তলা বিল্ডিং করতে ফাউন্ডেশন তৈরি করতে হয়। আমার এই সময়টা লেগেছে ফাউন্ডেশন তৈরি করতে। এখন সময় হয়েছে ৩০ তলা বিল্ডিং তৈরি করার।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতের ফুটবলার তৈরি করতে আগামীতে কী কী পদক্ষেপ নেবেন?
কাজী সালাউদ্দিন : ফেডারেশন কখনো ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে না। টুর্নামেন্টগুলো আয়োজন করে, জাতীয় দলের কোচ নেয় ও ডিসিপ্লিনটা মেইনটেইন করে ফেডারেশন। ইউরোপের সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারব না বলে আমি একাডেমি নিয়ে কাজ করি, ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করি এবং নারী ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করি। ক্লাবগুলোকে আমি দোষ দিতে পারি না, তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। অবশ্য গত ১০ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে, ক্লাবগুলোর অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আজকাল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না। অনেক নিয়মের মধ্যে চলে এসেছে সব কিছু।
প্রশ্ন : ফুটবলে পেশাদারত্ব আনতে বাফুফে ও ক্লাবগুলোর মধ্যে সমন্বয় দরকার। এ জন্য কী পদক্ষেপ নেবেন?
কাজী সালাউদ্দিন : কোনো কিছুই একদিনে হয় না। আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, আশা করি ভবিষ্যতে আরো উন্নতি হবে। প্রথম বছরে অনূর্ধ্ব-১৮ ফুটবলে অনেক ক্লাব খেলতে চায়নি, কিন্তু গত বছর অনেক ক্লাব খেলেছে। একটু সময় দেন আমাকে। আমি যেমন ২০০৮ সালে এসে দেখেছি কিছুই ছিল না। এখন একটা জায়গায় চলে এসেছে। যেমন আগে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে যে ঝামেলা হতো, এখন তা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। অনেক পরিবর্তন এসেছে। এটা দু-চার দিনের কাজ নয়। আমার মনে হয়, আমরা ৭০-৮০ ভাগ কাজ করে ফেলেছি। আগামী পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসবে।
প্রশ্ন : সুপার কাপের মতো আগামীতে কোনো চমক নিয়ে আসবেন?
কাজী সালাউদ্দিন : চমক বলতে আমার কাছে কোনো শব্দ নেই। চমক আমি বুঝি না। ফুটবলে কোনো চমক থাকতে পারে না। ফুটবলে ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে হবে। বিশ্বমানের ফুটবল খেলতে হলে আপনাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করতে হবে। এই একটাই খেলা, যেখানে ২১১টি দেশ খেলে থাকে। আমাদের লিগে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ২০০৮ সালের আগে বাংলাদেশে লিগ হতো শুধু একটা মাঠে, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। এখন লিগ হয় পাঁচ থেকে সাতটা স্টেডিয়ামে। এই উন্নতি একদিনে হয়নি। এখন সাত-আটটা জেলায় একই দিনে খেলা হয়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
কাজী সালাউদ্দিন : বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকের কাছে আমার একমাত্র চাওয়া, আপনারা খেলা দেখেন; খেলা দেখে জানান, বাংলাদেশের ফুটবল আগের চেয়ে উন্নতি করেছে কি না। আপনারা টকশো দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন না। সংবাদমাধ্যমের খবর দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন না, নিজের চোখে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।