সাক্ষাৎকার
‘দল না পাওয়ায় হতাশা ছিল, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছি’
বঙ্গবন্ধু বিপিএলের প্লেয়ার ড্রাফটে দলই পাননি মেহেদী হাসান রানা। অবিক্রীত রানা অনুশীলন করে গেছেন রংপুরের নেটে। রংপুর তাঁকে দলে নেবে বলে আশা দিয়েছিল। কিন্তু রংপুরও কিছু জানায়নি। শেষ মুহূর্তে ইমরুল-মাহমুদউল্লাহদের অনুরোধে রানাকে দলে ভেড়ায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
শুরুতে দল না পাওয়া সেই রানাই হয়ে ওঠেন চ্যালেঞ্জার্সদের ‘ট্রাম্পকার্ড’। সুযোগ পাওয়ার পর প্রতিটি ম্যাচে চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন চাঁদপুরের এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ছাড়িয়ে যাচ্ছেন দেশ-বিদেশের তারকা বোলারদেরও। উইকেট শিকারিদের তালিকার শীর্ষস্থান নিয়ে তাঁর লড়াই আরেক পেসার মুস্তাফিজের সঙ্গে। সব মিলিয়ে দারুণ কাটছে রানার বিপিএল। বিপিএল চলাকালে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন নিজের ক্রিকেটে আসার গল্প। জানালেন ইনজুরিতে ১৮ মাস ক্রিকেট থেকে ছিটকে যাওয়ার লড়াই ও ফেরার অনুপ্রেরণা নিয়ে।
বিপিএল কেমন কাটছে?
মেহেদী হাসান রানা : সবকিছু এখন পর্যন্ত ভালোভাবে যাচ্ছে। আর ভালো খেললে সবাই সাধুবাদ জানাবে। নিজের কাছেও ভালো লাগবে। পরিবারও বাহবা দেবে, আমি ভালো করলে সেটা তাদের জন্যও আনন্দের। ব্যক্তিগতভাবে ভালো করলে, সেটার ফল আমার দল পাবে। আমি ভালো করছি, সেটার সুবাদে আমার দলের ভালো হচ্ছে। আমি শুধু একা যে ভালো করছি তা নয়। ইমরুল ভাই আছেন। বিদেশি ক্রিকেটাররা আছেন। সব মিলিয়ে আমাদের দল ভালো করছে। এখানে সবার অবদান আছে। হয়তো আমারটা একটু বেশি, এ জন্য দল আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জয় পাচ্ছি।
দল নিয়ে প্রত্যাশা?
মেহেদী হাসান রানা : আমি চাচ্ছি নিয়মিত নিজের কাজটা নিজে করে যেতে। আমরা সবাই ভালো করছি। সবাই যদি এই পারফরম্যান্স শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে, তাহলে অবশ্যই টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
প্রথমে দল পাননি, এখন ট্রাম্পকার্ড, কেমন লাগছে?
মেহেদী হাসান রানা : শুরুতে দল না পেলেও, আমার মন থেকে বিশ্বাস ছিল দল পাব। যখন রংপুর রেঞ্জারের অনুশীলনে যোগ দিই, সেখানেও বিশ্বাস ছিল। এরপর এসএ গেমসে যাই। সেখান থেকে এসেও রংপুরের সঙ্গে অনুশীলন করেছিলাম। তারা নেবে কি না, জানাবে বলেছে। কিন্তু পরে আর জানায়নি। তখনো বিশ্বাস হারাইনি। আমার মনে হয়েছিল, আল্লাহ আছেন, একটা না একটা দল ঠিকই নেবে। বিশ্বাস হারাইনি।
হতাশা কাজ করেছিল?
মেহেদী হাসান রানা : নিজের মধ্যে তো হতাশা অবশ্যই কাজ করেছিল। বেশি কাজ করেছিল ড্রাফটের দিন। ওই দিন দল না পাওয়ার কারণে খুবই হতাশা কাজ করেছিল। তবুও আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছি।
আলোচনায় আছেন, এটা কতটা অনুপ্রেরণা দিচ্ছে?
মেহেদী হাসান রানা : আলোচনায় থাকাটা ভালোলাগার। ভালো যখন করছি, আমার চেষ্টা থাকবে নিজেকে আরো উন্নত করার। আমার এখনো শেখার সময়। যত উপরে যাব, তত শিখব। আর সামনের দিকে যেখানেই সুযোগ পাই, সেখানেই চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার। অবশ্যই এসব বাড়তি অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?
মেহেদী হাসান রানা : আসলে সন্তুষ্টির কোনো শেষ নেই। তারপরও আমি বলব, আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট। তবে আমি চাচ্ছি, আরো ভালোভাবে এই টুর্নামেন্ট শেষ করতে। দেখা যাক।
ক্যারিয়ারের খারাপ সময়টা নিয়ে জানতে চাই?
মেহেদী হাসান রানা : আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল ইনজুরির সময়। এক ইনজুরিতে আমি ১৮ মাস মাঠের বাইরে ছিলাম। এতগুলো মাস যখন আপনি একেবারেই খেলা থেকে দূরে থাকবেন, এটা সবার ক্ষেত্রেই কষ্টকর। খারাপ সময়ে পরিবার সঙ্গে সময় কেটেছে। তবুও হাল ছাড়িনি। চিন্তা ছিল ক্রিকেটে ফিরবই। হয়তো সে জন্যই আল্লাহ আমাকে অপেক্ষার ফল দিচ্ছেন।
জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন আছে কি?
মেহেদী হাসান রানা : আসলে আমি এখনই জাতীয় দলে খেলা নিয়ে ভাবছি না। এখন যেহেতু বিপিএল চলছে, সেজন্য আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ বিপিএলের দিকেই। আর ভালোর কোনো শেষ নেই। আজ যদি আমি তিন উইকেট নেই, কাল আমার পাঁচ উইকেট নেওয়ার ক্ষুধা জাগবে, এটাই স্বাভাবিক।
তারকা খ্যাতি কেমন উপভোগ করছেন?
মেহেদী হাসান রানা : (হেসে) অবশ্যই ভালো লাগছে। বাইরে বের হলে সবাই কথা বলতে চায়, হাত মেলাতে চায়। ভালো বোলিংয়ের জন্য সাধুবাদ জানায়। এসব খুবই ভালো লাগার। খুবই ভালো লাগছে। এটা আসলে সব ক্রিকেটারদের সঙ্গেই হয়। ভালো করলে ভালো বলবে, হাততালি দেবে। খারাপ করলে গালি দেবে, এটাই স্বাভাবিক।
ক্রিকেটে শুরুর গল্পটা কেমন ছিল?
মেহেদী হাসান রানা : আমার ক্রিকেটে আসার গল্প অনেক বড়। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের জন্য পাগল ছিলাম। স্কুল ফাঁকি দিয়ে নানা জাগায় খেলতে চলে যেতাম। এই ক্রিকেটের জন্য মা-বাবার অনেক মার খেয়েছি। তখন তো মা-বাবা চিন্তা করেননি যে এত দূর আসতে পারব। এখন তাঁরা মহা খুশি। এখন বোঝেন, তাঁদের ছেলে ক্রিকেটার হয়েছে। অথচ এই ক্রিকেটের জন্য কত মার খেয়েছি।
কোনো আক্ষেপ?
মেহেদী হাসান রানা : ক্রিকেটে আসতে সবচেয়ে আক্ষেপ হয়েছে পড়ালেখা নিয়ে। পড়াশোনা ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট খেলেছি ঠিকই। কিন্তু আমি লেখাপড়াও চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। ২০১৬ সালে আমার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণসহ সবকিছু করেছি। কিন্তু সে বছরই ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। সেখানে ডাক পাওয়ার কারণে আমার আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এই আক্ষেপটা আমার থেকে যাবে।
ক্রিকেটের অনুপ্রেরণা?
মেহেদী হাসান রানা : ক্রিকেটে মাশরাফি ভাই-আশরাফুল ভাইকে দেখে ক্রিকেটে আসি। কিন্তু আমার অনুপ্রেরণাজুড়ে ছিলেন মাশরাফি ভাইয়া। উনি একের পর এক ইনজুরিতে পড়েও যেভাবে কামব্যাক করেছেন, এটা যেকোনো মানুষের জন্যই অনুপ্রেরণার। আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমি উনার মতো ১৮ মাস ক্রিকেট থেকে বাইরে ছিলাম। তখন বারবার মনে হতো, ভাইয়া এতবার ইনজুরির পরও যদি মাঠে ফিরতে পারেন, আমি কেন পারব না। উনাকে দেখেই নিজের ইচ্ছেটাকে জাগিয়ে রাখি। আসলে উনাকে নিয়ে বিশেষভাবে বলার ভাষা নেই।
বিদেশি ক্রিকেটারদের কাছে থেকে কতটা শিখছেন?
মেহেদী হাসান রানা : বিদেশিদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে কীভাবে বোলিং করতে হবে, কীভাবে ফিট থাকতে হবে। লিয়াম প্লাঙ্কেট আছে, আমাদের আরো বোলার আছে, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছি। তারাও আমাকে অনেক সাহায্য করছে। বিপিএলে এই সুযোগটা বেশ ভালো। সবাই অনেক ভালোবাসে। তারা চায় আমি ভালো করি। আরো ওপরে যাই। যার জন্য যেকোনো কিছুতে সাহায্য করছে। আমাকে প্রতিটি ম্যাচের আগেই সবাই অনুপ্রেরণা দেন। সবাই বলেন, আজ তুমি আরো ভালো করবে। আমিও চেষ্টা করি সবার ইচ্ছে পূরণের।