ম্যারাডোনার চলে যাওয়ার এক বছর
দেখতে দেখতে ফুটবলের মহানায়ক দিয়েগো ম্যারাডোনার প্রয়াণের এক বছর পেরিয়ে গেল। গত বছর এই দিনে পুরো ফুটবল দুনিয়াকে স্তব্ধ করে চিরবিদায় নিয়েছেন ফুটবলের জাদুকর ম্যারাডোনা। সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের অন্যতম তারকাকে ছাড়া এক বছর পার করল ফুটবল ভক্তরা।
২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬০ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে মারা যান ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন এ কিংবদন্তির মৃত্যুর আজ এক বছর পূর্ণ হলো।
আর্জেন্টাইন তারকার প্রয়াণ দিবসে দেশটির ঘরোয়া ফুটবলে আজ ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এ ছাড়া মাঠে খেলোয়াড়রা ‘১০’ সংখ্যার আদলে দাঁড়াবেন। সম্মান জানানো হবে ম্যারাডোনার ১০ নম্বর জার্সিকে।
আর্জেন্টিনার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় স্মরণ করা হবে ফুটবল কিংবদন্তিকে। ইতালির ক্লাব নাপোলিতে দুটি মূর্তি উন্মোচন করা হবে।
জীবদ্দশায় ম্যারাডোনা হয়ে উঠেছিলেন যেন রূপকথার এক চরিত্র। তাঁর জীবনটা কখনও সরল পথে ছিল না। কখনও ফুটবল মাঠে গোল করে ভক্তদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছেন, দেশকে এনে দিয়েছেন বিশ্বজয়ের স্বাদ। আবার কখনও বিতর্কিত কাজ করে মানুষের হাসির খোরাক হয়েছেন। তবে, নানা বিতর্কের মধ্যেও ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বিশেষ নাম ছিল ম্যারাডোনা।
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন ম্যারাডোনা। দক্ষিণ প্রান্তের শহর ভিয়া ফিওরিতোতে তাঁর বেড়ে ওঠা। তিন কন্যা সন্তানের পর তিনিই ছিলেন মা-বাবার প্রথম পুত্রসন্তান।
শৈল্পিক ফুটবল দিয়ে কিশোর বয়সেই নজর কাড়েন ম্যারাডোনা। মাত্র আট বছর বয়সে যোগ দেন আর্জেন্টিনার যুব দলে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
১৯৭৭ সালে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে ডাক পান ম্যারাডোনা। এরপর দেশের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ আসরে অংশ নেন। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৮৬ সালে নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা। তবে, ওই বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম গোলটি ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে অবশ্য সমস্যা হয়নি। প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে প্রতিপক্ষের পাঁচ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে দ্বিতীয় গোল করেন ম্যারাডোনা। ওই গোলটিকে ২০০২ সালে ফিফা ডটকমের ভোটারেরা শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করে।
১৯৯০ সালের বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন ম্যারাডোনা। তবে, সেবার আর বিশ্বকাপ ছোঁয়া হয়নি। পরের বছর ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। এরপর মাঠে ফিরে আর ছন্দ খুঁজে পাননি ম্যারাডোনা। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৭ সালে বুটজোড়া তুলে রাখেন ম্যারাডোনা।
ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে নাম লেখান কোচিংয়ে। কিন্তু, ফুটবল মাতানো ম্যারাডোনা কোচ হিসেবে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। কোচিং ক্যারিয়ারেও নানা সময় বিতর্কিত হয়েছেন কিংবদন্তি এ ফুটবলার।
২০০৮ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান ম্যারাডোনা। কিন্তু, ২০১০ বিশ্বকাপের পর দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে সে দায়িত্বও ছাড়তে হয় বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে।