রোড টু ফাইনাল : বাংলাদেশ
যুব বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করা বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে অপরাজিত। আর মাত্র এক ম্যাচ। আগামীকাল রোববার ভারতকে হারাতে পারলেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশে যুবারা।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকে আকবর-মাহমুদুলরা যে ছন্দে আছে তাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশের ভক্তরা। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক যুব টাইগারদের বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার মিশন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ‘সি’ গ্রুপে পড়েছিল বাংলাদেশ। যেখানে তিন প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড আর পাকিস্তান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম মিশন ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। গত ১৮ জানুয়ারি সেই ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় আকবর আলীর দল। আগে ব্যাট করে ছয় উইকেটে ১৩৭ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। পরে বৃষ্টি আইনে জয়ের জন্য ২২ ওভারে ১৩০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। ব্যাট করতে নেমে ১১.২ ওভারেই ১৩২ রান তুলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশের যুবারা।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় পরীক্ষা ছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। সে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান। তাই ম্যাচটিতে ৮৯ রানেই গুটিয়ে যায় স্কটিশরা। ৯০ রানের জবাব দিতে নেমে সাত উইকেটেই জয় তুলে নেয় আকবর আলীর দল। ২০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রাকিবুল। টানা ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে লাল-সবুজের দল।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানি পেসারদের সামনে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশের যুবারা। মাত্র ১০৬ রানের মাথায় হারিয়ে বসে ৯ উইকেট। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। নেট রান রেটে এগিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার তানজিদ হাসানের ৮০ ও শাহাদাত হোসেনের অপরাজিত ৭৪ রানের ওপর ভর করে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান রাকিবুল হাসান। বাঁহাতি স্পিনারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৫৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রাকিবুল। ১০৪ রানের বিশাল জয় নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।
সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। ছন্দে থাকা বাংলাদেশের সেমিতে জয় পেতেও বেগ পেতে হয়নি। ব্যাট হাতে ইতিহাস গড়েন মাহমুদুল হাসান জয়। বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়ার ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরিতেই রেকর্ড গড়েন তিনি। দেশের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি হাঁকান। শুধু দেশের কেন, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ছাড়া এর আগে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শতকের ইনিংস নেই কারো। এবারই প্রথম সেই খরা কাটিয়ে সেঞ্চুরি করলেন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান। তাঁর শতরানে ভর করে ছয় উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। নিশ্চিত হয় বিশ্বকাপের ফাইনাল।
এর আগে কখনো যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি বাংলাদেশ। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে শিরোপাজয়ের সম্ভাবনা দেখেছিলেন আকবর। ধাপে ধাপে সেই স্বপ্ন জয়ের কাছে এগিয়ে গেল বাংলাদেশের যুবারা।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা দীর্ঘদিনের। লম্বা সময়ে বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাইমুর-হাবিবুল-মাশরাফি-সাকিবদের মতো তারকারা। কিন্তু কেউই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার মতো সাফল্য এনে দিতে পারেননি। জাতীয় দল কেন, কোনো পর্যায়েই না।
তবে মাশরাফি-সাকিবরা যা পারেননি সেটা করে দেখালেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ড গড়লেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল জুনিয়র টাইগাররা।