মেসির আক্ষেপের ‘শতক’!
শততম ম্যাচ খেলতে নামার আগে উত্তেজনা অনুভব করা স্বাভাবিক। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ১০০ নম্বর ম্যাচ খেলতে নামার আগে লিওনেল মেসিও কি অনুভব করছেন সে রকম কিছু? নাকি হতাশা আর আক্ষেপ কুঁরে-কুঁরে খাচ্ছে এ সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে? বার্সেলোনার হয়ে ক্লাব ফুটবলে একের পর এক শিরোপা জিতে চললেও আর্জেন্টিনার হয়ে যে এখনো ব্যর্থতার বোঝাই টেনে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে!
শনিবার বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে জ্যামাইকার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। এটাই হতে যাচ্ছে মেসির শততম ম্যাচ। প্রায় ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে বড় কোনো সাফল্য পাননি চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। দারুণ মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও তিনি দলীয় সাফল্যের জন্য আকুল। আর্জেন্টিনার দৈনিক লা নাসিওনের সঙ্গে কথা বলার সময় যেন সেই আকুতি ফুটে উঠল মেসির কণ্ঠে, ‘এই মাইলফলকে পৌঁছাতে পেরে খুবই খুশি। আশা করি জয় দিয়ে এটা উদযাপন করতে পারব। এবং এরপর কাপটা জিতেও নিতে পারব।’
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মাত্র ১৮ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক হয়েছিল মেসির। হাঙ্গেরির বিপক্ষে জীবনের প্রথম ম্যাচ অবশ্য শেষ হয়েছিল হতাশায়। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে মাঠে নামার কয়েক মিনিটের মধ্যে মাঠ ছেড়েছিলেন লাল কার্ড দেখে। পরে সতীর্থরা খুঁজে পেয়েছিল ক্রন্দনরত মেসিকে। সেই কান্না আর হাহাকার বোধহয় এখনো শেষ হয়নি!
বার্সেলোনার হয়ে চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ আর সাতবার স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা জিতেছেন। প্রতি মৌসুমের গোলের রেকর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় মেতে উঠছেন। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিখ্যাত আকাশি-সাদা জার্সিতে মেসি কেন জানি কিছুতেই সাফল্যের আনন্দে মেতে উঠতে পারছেন না।
মেসি প্রথম কোপা আমেরিকা খেলেছিলেন ২০০৭ সালে। সেবার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের কাছে হেরে শেষ হয়েছিল তাঁর শিরোপা-স্বপ্ন। ২০১১ সালে পরের কোপা আমেরিকায় আবারও ব্যর্থ মেসির আর্জেন্টিনা। ঘরের মাটিতে সেই আসরে আর্জেন্টিনাকে বিদায় নিতে হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। এখন পর্যন্ত কোপা আমেরিকায় ১২ ম্যাচ খেলে মেসি মাত্র তিনটি গোল করতে পেরেছেন।
মেসির বিশ্বকাপ-ভাগ্য আরো করুণ। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই গোল করেছিলেন। কিন্তু সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল আর্জেন্টাইনদের। চার বছর পর ২০১০ বিশ্বকাপে মেসি ছিলেন দলের স্বপ্নসারথি। সেবার আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বে ছিলেন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কিন্তু দুই যুগের দুই ফুটবল-মহাতারকার মেলবন্ধনও আর্জেন্টিনাকে সাফল্য এনে দিতে পারেনি। বরং কোয়ার্টার ফাইনালে আবারও জার্মানির কাছে পরাস্ত হয়েছিল দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এবার আর টাইব্রেকারে নয়, ৪-০ গোলের লজ্জাজনক ব্যবধানে।
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপে মেসির কাঁধে ছিল অধিনায়কের দায়িত্ব। প্রথম চার ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে এবং পরে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতে নিয়ে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। কিন্তু আবারও আর্জেন্টিনা আর মেসির শিরোপা-স্বপ্নের ‘ঘাতক’ জার্মানি!
আক্ষেপ আর কান্না এভাবেই দীর্ঘায়িত হয়েছে মেসির জীবনে। শততম ম্যাচের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও যে আক্ষেপ ঘোচেনি, ‘এটা এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজও আর্জেন্টিনার হয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জিততে পারিনি।’
এবারের কোপা আমেরিকাই হয়তো মেসির এই আফসোস দূর করে দেবে। বার্সেলোনা-তারকার সামনে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডেরও হাতছানি। সবচেয়ে বেশি ১৪৫টি ম্যাচ খেলার রেকর্ড এখন হাভিয়ের জানেত্তির দখলে। আর সবচেয়ে বেশি ৫৬টি গোল করেছেন গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। অন্যদিকে জাতীয় দলের হয়ে ৯৯টি ম্যাচ খেলে মেসির গোল ৪৬টি। যদিও এই পরিসংখ্যান কেন জানি মেসিসুলভ মনে হয় না।
বার্সেলোনার হয়ে তাঁর যে ৪৮২ ম্যাচেই ৪১২ গোল!