মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টিনায় তোলপাড়
ব্যাপারটা নতুন নয়। কোনো টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনা ব্যর্থ হলেই লাতিন আমেরিকার দেশটিতে লিওনেল মেসিকে নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে যায়। বাকি সবাইকে ছেড়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় বার্সেলোনা-তারকাকে। কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনা টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার পরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ প্রবাদের পথ অনুসরণ করে আর্জেন্টিনার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও মেসির সমালোচনায় মুখর।
গত বছর বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ‘গোল্ডেন বল’ নেওয়ার সময় মেসির যন্ত্রণাক্লিষ্ট অভিব্যক্তি এখনো অনেক ফুটবলপ্রেমীর চোখে ভাসে। কোপা আমেরিকার ফাইনাল শেষে তিনি নাকি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারই নিতে চাননি। মেসির অনাগ্রহের কথা জেনেই নাকি আয়োজকরা মঞ্চ থেকে সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি সরিয়ে ফেলেন।
আর্জেন্টিনা সর্বশেষ কোনো গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জিতেছিল কোপা আমেরিকাতেই, ১৯৯৩ সালে। দীর্ঘ ২২ বছর পর সাফল্যের আশায় আর্জেন্টাইনরা তাকিয়েছিল মেসির দিকে। আবারো আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়ে স্বাভাবিকভাবেই ম্যারাডোনার দেশের মানুষ হতাশ। গত মৌসুমে বার্সেলোনার ট্রেবল জয়ের অন্যতম নায়ক নিজেও হতাশায় আচ্ছন্ন। ফাইনালে হারের দুদিন পর গত সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে মেসি লিখেছেন, ‘ফাইনালে হারের চেয়ে যন্ত্রণাদায়ক আর কিছু নেই। কিন্তু আমি সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁরা সব সময় আমাদের সমর্থন দিয়েছেন এবং কঠিন সময়ে পাশে থেকেছেন।’
মেসি নিজে হতাশ, অনুতপ্ত। কিন্তু আর্জেন্টাইন গণমাধ্যমের একাংশের তাতে মন গলছে না। চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হচ্ছে কোপার ফাইনালের পর থেকে। আর এ কারণে আর্জেন্টিনার জনপ্রিয় ক্রীড়াদৈনিক ওলের আশঙ্কা, ‘আরেকটি ফাইনালে হতাশাজনক হারের পর তীব্র সমালোচনার কারণে মেসি হয়তো জাতীয় দল থেকে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে পারেন।’
এমন আশঙ্কা অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লুইস সেগুরা। দেশের সবচেয়ে বড় তারকাকে নিয়ে সমালোচনায় তিনি ক্ষুব্ধ-মর্মাহত, ‘আমি কিছুতেই বুঝি না মানুষ কেন তার (মেসির) এত সমালোচনা করে। শিরোপা জিততে না পেরে সমর্থকদের মতো মেসিও অনেক কষ্ট পেয়েছে।’
আর্জেন্টিনার সাবেক ফুটবলার মাতিয়াস আলমেইদাও এই অস্বস্তিকর সময়ে মেসির পাশে দাঁড়িয়েছেন, ‘সব সময়ই কোনো-না-কোনো কারণে তার সমালোচনা করা হয়। এমনকি জাতীয় সংগীত না গাইলেও সমালোচনা করা হয় মেসির।’ বার্সেলোনার হয়ে অজস্র সাফল্যে উদ্ভাসিত হলেও আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মেসি আজো তেমন কোনো সাফল্য পাননি। এই অপ্রাপ্তিরও ব্যাখ্যা আছে আলমেইদার কাছে, ‘ক্লাবের হয়ে সাফল্যের পুনরাবৃত্তি জাতীয় দলের পক্ষে করা আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের জন্য খুব কঠিন।’
কোপা আমেরিকা শেষে আপাতত নিজের শহর রোজারিওতে আছেন মেসি। কিছুদিনের মধ্যেই বার্সেলোনায় ফিরে আগামী মৌসুমের জন্য প্র্যাকটিস শুরু করে দেবেন ফুটবল-মহাতারকা। কিন্তু সমালোচনা বোধহয় আরো কিছুদিন সইতেই হবে। ডিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে তাঁর তুলনা চলছে অনেক দিন ধরে। যদিও কোনো কোনো আর্জেন্টাইন ’৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়কের সঙ্গে মেসির তুলনা করতে কিছুতেই রাজি নন। তাঁদেরই একজনের টুইট, ‘ম্যারাডোনা=মেসি+ হাভিয়ের মাসচেরানো।’