বার্নাব্যুর ডাগ-আউটে দেখা মিলবে না জিদানের
যখন খেলতেন ফুটবলটা পায়ের জাদু দিয়ে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন গোটা ফুটবল বিশ্বকে। জিনেদিন জিদান যখন দায়িত্বটা নিলেন কোচের তাবৎ দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছেন ‘গুরু’ হিসেবেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। অবশ্য আজ বৃহস্পতিবার বিকেলেই জানিয়ে দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে তিনি থাকছেন না আর স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুর ডাগআউটে।
গত ২৬ মে জিতেছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। জিদানের অধীনে প্রথম দল হিসেবেই আধুনিক ইউরোপ সেরার এই প্রতিযোগিতায় রিয়াল জিতেছে টানা তিন মৌসুমের শিরোপা। এত দারুণ সাফল্য পাওয়ার পরও সরে দাঁড়ানোটা অবাক করেছে রিয়াল ভক্তসহ ফুটবল সমর্থক গোষ্ঠীকেই।
রিয়ালের সঙ্গে জিদানের প্রণয়টা অবশ্য কোচিং দিয়েই শুরু হয়নি। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পুরো পাঁচটা মৌসুম ফুটবলার হিসেবেই এই ক্লাবে কাটিয়েছিলেন ফরাসি এই মিডফিল্ডার। তাঁর চার বছর পর পুরোনো ক্লাব থেকে ডাক পেয়েছিলেন উপদেষ্টা হওয়ার জন্য। তৎকালীন কোচ হোসে মরিনহোকে বিভিন্ন পরামর্শ বা টিম মিটিংগুলোতে নিত্য-নতুন কৌশল বাতলে দেওয়াই ছিল তাঁর কাজ।
মরিনহো চলে গেলেন ২০১৩ সালে। রিয়ালের দায়িত্বে আসলেন কার্লোস আনচেলেত্তি। ক্লাব রিয়াল এবার জিদানকে বানিয়ে দিল তাঁর সহকারী কোচই। তবে সে দায়িত্বে বেশিদিন ছিলেন না ফরাসি এই ফুটবলার। ২০১৪ সালে রিয়ালের ‘বি’ টিমের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান জিদান।
‘বড়’ রিয়ালের কোচ হিসেবে নিয়োগটা পাওয়ার আগে দুই বছর ‘ছোট’ রিয়ালের দায়িত্বটা পালন করেছেন যত্নের সঙ্গেই। তাই তো, ২০১৬ সালে রাফায়েল বেনিতেজ চলে যাওয়ায় সুযোগ পেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের কোচিং করানোর। সে বছরের ৪ জানুয়ারি চলমান মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন রিয়ালের প্রধান কোচ হিসেবে।
প্রথম বছরেই চোখ ধাঁধানো কোনো সাফল্য না এনে দিতে পারলেও জিতেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। তবে পরের মৌসুমটা ছিল জিদানের জন্য বেশ সাফল্য-প্রসূত একটি বছর। লা-লিগা শিরোপার পাশাপাশি আবারও জিতেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। তবে সেবারও জেতা হয়নি কোপা দেল রে’র ট্রফিটা।
৪৫ বছর বয়সী এই কোচ যেবার ছুঁয়ে দিলেন যখন কোপা দেল রের শিরোপা, সেবার হেরে গেলেন লা-লিগার শ্রেষ্ঠত্বটা। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের সঙ্গে জিতেছিলেন স্প্যানিশ ঘরোয়া টুর্নামেন্টের শিরোপাটা। সঙ্গে ক্লাব বিশ্বকাপও ছিল রিয়ালের দখলেই। সে বছরই জিতেছেন ফিফা সেরা পুরুষ দলের কোচের পুরস্কার।
আর শেষ মৌসুমে এসে পাওয়া হয়নি লা-লিগা বা কোপা দেল রের কোনোটাই। তবে সদ্য সমাপ্ত লিভারপুলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালটা জিতে ট্রফিটা রেখে দিয়েছেন তাঁর ক্যাবিনেটেই।
চলতি বছরের শুরুতেই সাবেক এই রিয়াল তারকা জানিয়েছিলেন যদি কখনো মনে হয় ক্লাবকে দেওয়ার মতো আর কিছুই বাকি নেই তাঁর, সাথে সাথেই সরে দাঁড়াবেন দায়িত্ব থেকে। তিনবার ইউরোপের সেরা হয়ে জিদান বুঝিয়ে দিয়েছেন দেওয়ার আছে আরো অনেক কিছুই।
তারপরও চলে যেতেই হলো জিদানকে। সাফল্য আর ব্যর্থতার মিশেলে বিদায় লগ্নে ক্লাবটির ফুটবলার আর কোচ হিসেবে অন্যতম সেরা হয়েই রিয়াল ভক্তদের অন্তরে থেকে যাবেন যে এই কিংবদন্তি, তেমনটা বলাই বাহুল্য।