খেলার মাঠ থেকে মসনদের পথে
১৯৭১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ম্যাচে খুব একটা উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারনেনি পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইমরান খান। তবে বল হাতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার সামর্থ্য তাঁর আছে। পরবর্তী সময়ে সেটা তিনি প্রমাণও করেছেন। ২১ বছরের ক্যারিয়ারে ৮৮ টেস্ট খেলে ৩৮০৭ রান ও ৩৬২ উইকেট নিয়েছেন। ওয়ানডেতেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। ১৭৫ ম্যাচে ৩৭০৯ রান করেন এবং ১৮২ উইকেট পান। পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন তিনি।
মাঠে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে যতটা উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন, অধিনায়কত্ব গুণে আরো বেশি প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। সে ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে দেশকে সেরা সাফল্য এনে দেন, তাঁর নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতে পাকিস্তান।
৩৯ বছর বয়সে খেলা ছাড়ার পর নিজের উপার্জিত অর্থের বড় অংশ দিয়ে লাহোরে মায়ের নামে ক্যানসার হাসপাতাল গড়েন। এর পরপরই রাজনীতিতে পদার্পণ তাঁর। পাকিস্তানে তুমুল জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার ১৯৯৬ সালে রাজনীতির মাঠে নামেন। তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নামে একটি দল গঠন করেন। দীর্ঘ ২২ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসতে যাচ্ছেন তিনি।
দেশটির সাধারণ নির্বাচনে সর্বশেষ ফলের হিসাবে ইমরান খানের দল বেশ এগিয়ে আছে। ২৭২টি আসনের মধ্যে ১১৩টি আসনে জয় পেয়েছে পিটিআই। আর নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ৬৫টি আসনে জয় পায়। অন্যদিকে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর দল পিপিপি ৪৩টি আসনে জয় পেয়েছে।
ইমরান খান এর আগে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হয়েছেন দুবার। গত সাধারণ নির্বাচনে তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের একটি প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ হিসেবে তিনি নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন পাকিস্তানের রাজনীতিতে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে বসতে যাচ্ছেন।
কোনো অঘটনা না ঘটলে ইমরানের খানের দল যে এবার ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছে, সেটা অনেকটাই নিশ্চিত। খেলার মাঠের অসাধারণ নেতৃত্বগুণ রাজনীতির মাঠেও তিনি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার ফল এই অসাধারণ আর্জন।
একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে ইমরান খানের এই অর্জন অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। পাকিস্তানের মতো একটি দেশের সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ক্ষমতায় যাওয়া অনেকটাই কঠিন কাজ। আর এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক এই কাপ্তান।
অন্যসব ক্রীড়াবিদের চেয়ে তিনি যে একেবারেই আলাদা, সেটা আরো একবার দেখিয়েছেন সাবেক এই অলরাউন্ডার। রাজনীতির মঞ্চে আসা বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদই অন্য দলে যোগ দিয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু ইমরান খানই একমাত্র ক্রীড়াবিদ, যিনি নিজে এককভাবে রাজনৈতিক দল গঠন করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্ষমতার একেবারেই কেন্দ্রবিন্দুতে বসতে যাচ্ছেন।