নয় মিনিটে লেভানদভস্কির পাঁচ গোল!
এক ম্যাচে একজনেরই পাঁচ গোল। তা-ও আবার মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে! সত্যিই অবিশ্বাস্য। এমন অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দেওয়ার কৃতিত্ব রবার্ত লেভানদভস্কির। এই পোলিশ স্ট্রাইকারের অসাধারণ নৈপুণ্যে জার্মান বুন্ডেসলিগায় ভল্ফসবুর্গকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ।
ঘরের মাঠ আলিয়াঞ্জ আরেনায় বড় জয় পেলেও শুরুতে পিছিয়ে পড়েছিল বায়ার্ন। ২৬ মিনিটে ড্যানিয়েল কালিগিউরির লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যাওয়া ভল্ফসবুর্গ বিরতি পর্যন্ত ১-০ গোলের লিড ধরে রেখেছিল। বিরতির সময় বোধ হয় অতিথিরা কল্পনাও করতে পারেনি, দ্বিতীয়ার্ধে কী দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে তাদের কপালে! লেভানদভস্কিকে প্রথম একাদশে রাখেননি বায়ার্নের কোচ পেপ গার্দিওলা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকান্ত্রার জায়গায় বদলি হিসেবে মাঠে নেমেই খেলার চেহারা পাল্টে দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী লেভানদভস্কি।
৫১ মিনিটে লেভানদভস্কি-ম্যাজিকের সূচনা। বুন্ডেসলিগার গত তিন মৌসুমের চ্যাম্পিয়নদের সমতা ফেরানো গোলটি ছিল চমৎকার এক আক্রমণের ফসল। পরের মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া জোরালো শটে বায়ার্নকে এগিয়ে দেন লেভানদভস্কি। তিন মিনিট পর হয়ে যায় হ্যাটট্রিকও। লেভানদভস্কির প্রথম প্রচেষ্টা পোস্টে লেগে ফিরে আসে তাঁর কাছেই। দ্বিতীয় শট রুখে দেন গোলরক্ষক। তবে তৃতীয়বারের চেষ্টা আর হতাশ করেনি তাঁকে, বল চলে যায় ভল্ফসবুর্গের জালে।
অর্থাৎ মাত্র ৩ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের মধ্যে হ্যাটট্রিক! বুন্ডেসলিগার ইতিহাসে এটাই দ্রুততম হ্যাটট্রিক। তবে এই পোলিশ স্ট্রাইকারের গোলের খিদে তখনো মেটেনি। ৫৭ ও ৬০ মিনিটে আরো দুটো গোল তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। এর মধ্যে পঞ্চম ও শেষ গোলটি এককথায় অবিশ্বাস্য। ডান দিক থেকে উড়ে আসা একটি ক্রস অসাধারণ সাইডভলিতে জালে পাঠিয়ে দেন লেভানদভস্কি। জার্মান লিগে বদলি খেলোয়াড়ের ভূমিকায় তিনিই প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে পাঁচ গোল করলেন।
ম্যাচ শেষে লেভানদভস্কি নিজেও যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না, কী অসাধারণ কীর্তি গড়েছেন। ইউরো স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর কণ্ঠ থেকে ফুটে বেরোচ্ছিল বিস্ময়, “সত্যিই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আমি শুধু পোস্ট লক্ষ্য করে শট নিতে চেয়েছি। তার পর কী হতে পারে, তা নিয়ে তেমন কিছু ভাবিনি। এক গোলে পিছিয়ে পড়ায় বুঝতে পারছিলাম যে ঘুরে দাঁড়িয়ে অবশ্যই আমাদের অন্তত দুটো গোল করতে হবে। কিন্তু পাঁচ গোল করে ফেলা অবিশ্বাস্য ঘটনা। বুঝতেই পারিনি কত দ্রুত এটা হয়েছে। কিন্তু খুব দ্রুত যে হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মাঠে থাকলে আপনাকে কিন্তু শুধু খেলার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। চতুর্থ গোলের পর আমি স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার তখন একটা শব্দই মনে হয়েছিল। শব্দটা হলো ‘ওহ!’।”
লেভানদভস্কির পারফরম্যান্সে গার্দিওলাও বিস্ময়াভিভূত। বার্সেলোনার কোচ থাকার সময় মেসি-ইনিয়েস্তাদের দুর্দান্ত নৈপুণ্য কম দেখেননি। কিন্তু এমন মধুর অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি বলে জানালেন ম্যাচ শেষে, ‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। পাঁচ গোল! খেলোয়াড় বা কোচ হিসেবে জীবনে কখনো এমন ঘটনার সাক্ষী হইনি। ভল্ফসবুর্গের মতো কঠিন দলের বিপক্ষে পাঁচ গোল করা সহজ কথা নয়। আমি রবার্তের পারফরম্যান্সে ভীষণ, ভীষণ খুশি। ওর আত্মবিশ্বাস আর আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।’