তিন বছর পর বাংলাওয়াশের তৃপ্তি পেল তরুণরা
ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম সিরিজ জয় এসেছিল সেসময়ের শক্তিশালী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের মতো দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজে হারতে হারতে একসময় ২০০৪-০৫ সেশনে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ৩-২ ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে প্রথম সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল টাইগাররা। এর পরের বছর কেনিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ধবলধোলাই করার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। এরপর কেটে গেছে অনেক দিন। স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড এমনকি পাকিস্তানের মতো দলকেও বাংলাওয়াশের তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়েছে তারা। তিন বছর আগেও জিম্বাবুয়েকেই ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল টাইগাররা। তবে সেই ম্যাচে ছিলেন না সৌম্য, মিঠুন, আবু হায়দার রনি, মেহেদী হাসান মিরাজ কিংবা আরিফুল হকদের কেউই। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দেশের মাটিতে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়েই বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করেছে সফরকারী জিম্বাবুয়েকে।
গত বুধবার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের মাধ্যমে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছিল হোয়াইটওয়াশ নিয়ে। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং ড্যাশিং বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল ছাড়াই সেই পরীক্ষায় উৎরে গেছে স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। সব মিলিয়ে ১২ বারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
অবশ্য শেষ ওয়ানডেতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথম দুই ম্যাচের ব্যর্থতা ভুলে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষের ওয়ানডে ইতিহাসে টানা ১৩তম হার এড়াতে মরিয়া হয়ে খেলেছে তারা। সিরিজ আগেই হেরছিল জিম্বাবুয়ে। তাই নিয়মরক্ষার ম্যাচে কোনো চাপ ছিল না তাদের ওপর। ব্যাটসম্যানদের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি সেটিই জানিয়েছে। পাঁচজন পেসারকে খেলিয়ে নিজেদের পরীক্ষামূলক কম্বিনেশনে সফল হয়েছে বাংলাদেশ দল। শুরুতেই পেসার সাইফউদ্দিন এবং আবু হায়দার রনি উইকেট এনে দিলেও ব্যাট চালিয়ে যেতে থাকেন ব্রেন্ডন টেইলর এবং শন উইলিয়ামস। বিপজ্জনক টেইলরকে ফেরানোর পর উইলিয়ামসকে সঙ্গ দেওয়া সিকান্দার রাজাকেও ফেরান নাজমুল ইসলাম অপু। উইলিয়ামসের শতকে ভর করে ২৮৬ রানের বিশাল লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। ১২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন উইলিয়ামস।
সেই পরীক্ষায় খুব ভালোভাবেই উৎরেছে বাংলাদেশ। প্রথম বলেই লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে আউট হন গত ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা লিটন দাস। একমাত্র রিভিউ আবেদনও ব্যবহার করেন তিনি। তবে তিনে নেমে দীর্ঘদিন দলের অনিয়মিত মুখ সৌম্য সরকার এবং ফর্মের তুঙে থাকা ইমরুল কায়েস যে ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখিয়েছেন, তাতে রিভিউয়ের কথা মনেই হয়নি দর্শকদের। এই দুই ব্যাটসম্যান প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৮০ রান এবং ১৬ ওভারের মধ্যে শতরান এনে দেন বাংলাদেশকে। তখনই দলের ওপর থেকে অতিরিক্ত চাপের বোঝা হালকা হয়েছিল। পরে নিজেদের মধ্যে কে আগে শতক তুলতে পারে, যেন এমন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন দুজন। ফলে বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ দ্রুততম শতক তুলে নেন সৌম্য। ৮১ বলে সেই শতকের সময় নয়টি চার এবং চারটি ছক্কার মার ছিল তাঁর স্কোরকার্ডে। কিছুক্ষণ পর তিনি আউট হয়ে গেলেও জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের। সিরিজের দ্বিতীয় শতক তুলে মোট ৩৪৯ রান করে তামিমকে ছাড়িয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক হন ইমরুল কায়েস। তবে মাত্র ১১ রান দূরে থাকা পাকিস্তানের বাবর আজমকে ছুঁতে পারার আগেই মিসহিটে বাউন্ডারিতে ক্যাচের শিকার হন তিনি। পরে মুশফিক-মিঠুন জুটি নির্বিঘ্নে খেলা শেষ করেন।
বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের কাছে জিম্বাবুয়ের বোলারদের অসহায়ত্ব একটু বেশিই ফুটে উঠেছিল সৌম্য-ইমরুলের ফিরে আসার গল্পে। তবে এত বেশি রান তাড়া করে ১২তম বারের মতো বাংলাওয়াশের স্বাদ নিতে পেরে অবশ্যই স্বস্তিতে থাকবেন নির্বাচকরা। এই ধারা কতটা অব্যহত রাখতে পারে তরুণ বাংলাদেশ দল, সেটিই এখন দেখার বিষয়।