ভারতের বিপক্ষে প্রোটিয়াদের নাটকীয় জয়
লক্ষ্য বেশ বড়—৩০৪ রান। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে চাপের মধ্যে থাকা ভারতকে প্রথম ওয়ানডেতে এই কঠিন লক্ষ্যে প্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন যিনি, ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও তাঁর দখলে। তবে রোহিত শর্মার ১৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসও ‘টিম ইন্ডিয়া’কে জয় এনে দিতে পারেনি। নাটকীয়ভাবে পাঁচ রানে জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
রোববার কানপুরের গ্রিন পার্কে শিখর ধাওয়ানের (২৩) সঙ্গে ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে ভারতকে বেশ ভালো সূচনা এনে দেন রোহিত। স্বাগতিকদের পরের জুটিটা দুর্দান্ত। রোহিত আর অজিঙ্কা রাহানের মধ্যে গড়ে ওঠা ১৪৯ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ওয়ানডের দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
রাহানে ৮২ বলে ৬০ রান করে বিদায় নেওয়ার পর বিরাট কোহলি (১১) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তবে রোহিত খেলছিলেন দৃঢ়তার সঙ্গে। গত নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে খেলা ২৬৪ রানের সেই অবিস্মরণীয় ইনিংসটার কথাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। মনে হচ্ছিল, রোহিত সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন দলকে।
তা অবশ্য হয়নি। ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে ইমরান তাহিরকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয়েছে রোহিতকে। ১৩৩ বলের চমৎকার ইনিংসটি ১৩টি চার ও ছয়টি ছক্কায় সাজানো। সেই ওভারেই সুরেশ রায়নাকে (৩) জেপি ডুমিনির ক্যাচ বানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে খেলায় ফিরিয়েছেন লেগস্পিনার তাহির।
রোহিতের বিদায়ের সময় ভারতের প্রয়োজন ছিল ২৩ বলে ৩৫ রান। মহেন্দ্র সিং ধোনি অনেক চেষ্টা করেও দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। শেষ ওভারে পেসার কাগিসো রাবাদাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়া ভারত অধিনায়কের অবদান ৩১ রান। ৩০ বলের ইনিংসটিতে চার মাত্র একটি, ছক্কা নেই। সে জন্যই বোধহয় পাঁচ রানের ব্যবধান ঘোচাতে পারেনি স্বাগতিক দল, থেমে গেছে সাত উইকেটে ২৯৮ রানে। রাবাদা আর তাহির দুজনেরই ‘শিকার’ দুটি করে উইকেট।
ভারত অধিনায়কের আরেকটি ব্যর্থতার দিনে প্রোটিয়া অধিনায়ক স্বমহিমায় উজ্জ্বল, দুর্দান্ত শতকের আনন্দে বিভোর। শতক পূর্ণ করার জন্য ইনিংসের শেষ বলে এবি ডি ভিলিয়ার্সের প্রয়োজন ছিল দুই রান। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০০ রানের ঘরে যেতে প্রয়োজন ছিল তিন রান। দারুণ এক ছক্কা মেরে দুটিই পূর্ণ করে ফেলেছেন অতিথিদের অধিনায়ক। ডি ভিলিয়ার্সের ২১তম ওয়ানডে শতকের ওপরে ভর করে প্রোটিয়ারা গড়েছে পাঁচ উইকেটে ৩০৩ রানের বড় সংগ্রহ। কানপুরে এটাই সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৫ রান যোগ করে শুরুটা ভালোভাবে করেছিলেন দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক (২৯) ও হাশিম আমলা (৩৭)। নবম ওভারে ডি কককে আউট করে ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন আমলা ও ফাফ ডু প্লেসি। ২৩তম ওভারে আমলা আউট হয়ে গেলেও ভারতীয় বোলারদের চাপের মধ্যে রেখে ডু প্লেসি খেলেছেন ৭৭ বলে ৬২ রানের লড়াকু ইনিংস।
তবে ভারতকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৭৩ বলে ১০৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ম্যাচসেরা ডি ভিলিয়ার্সের অধিনায়কোচিত ইনিংসটিতে ছিল পাঁচটি চার ও ছয়টি ছক্কা। শেষ দিকে ফারহান বেহারদিনের ১৯ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংসও দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিনশর ওপরে নিতে ভালো অবদান রেখেছে।
ভারতের পক্ষে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন অমিত মিশ্র ও উমেশ যাদব।
১৪ অক্টোবর ইন্দোরে হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে। সিরিজের বাকি তিন ম্যাচ ১৮, ২২ ও ২৫ অক্টোবর।