এমন সৌম্যকেই দেখা যাবে বিশ্বকাপে?

সৌম্য সরকার কীভাবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পান, তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচগুলোতে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা সৌম্য এ মৌসুমের ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছিলেন চরম ব্যর্থ। একের পর এক ম্যাচে সুযোগ পেয়েও সেটার সদ্ব্যবহার করতে পারছিলেন না বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রতিনিয়ত চারদিক থেকে তাঁকে নিয়ে বাড়ছিল সমালোচনা। তবে এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানের সামর্থ্য নিয়ে বাংলাদেশ দলের নির্বাচকদের আস্থার কোনো ঘাটতি ছিল না। তাই বহু সমালোচনা উপেক্ষা করে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে জায়গা মেলে তাঁর।
একের পর এক ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ সৌম্য নিজেকে খুঁজে পান ঘরোয়া ক্রিকেটের এ মৌসুমের শেষ দুই ম্যাচে। আবাহনীর হয়ে ওপেন করতে নেমে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে ঝোড়ো সেঞ্চুরি করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন। লিগের শেষ ম্যাচে ব্যাট হাতে জন্ম দেন নতুন ইতিহাস। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। তবুও সমালোচকদের সংশয় আর দ্বিধা যেন কাটছিল না। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মে ফিরলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়তো সেটা দেখা যাবে না, এমন কথাও হচ্ছিল তাঁকে নিয়ে।
তবে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে দুই ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে আপাতত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন সৌম্য সরকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন ৬৮ বলে ৭৩ রানের চমৎকার একটি ইনিংস। যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একের পর এক শট খেলছিলেন, তাতে সবাই ধরেই নিয়েছিল সেঞ্চুরি করবেন সৌম্য। তবে ৭৩ রানে আউট হয়ে সেই সুযোগ নিজেই হাতছাড়া করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পর সোমবার আবার ব্যাট করার সুযোগ পান সৌম্য। ফাইনালে ওঠার মনস্তাত্ত্বিক চাপের এই ম্যাচে ২৪৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আবার ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন তিনি।
তামিম ইকবালের সঙ্গে আরেকবার ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশকে মজবুত শুরু এনে দেন সৌম্য। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে অর্ধশতক তুলে নিয়ে ৬৭ বলে ৫৪ রান করে আউট হন সৌম্য। তবে টানা দুটি অর্ধশতক তুলে নেওয়ার চেয়েও বড় কথা সৌম্যর ব্যাটিংয়ের ধরন। উইকেটে দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের চেনা শটগুলো খেলেছেন বাংলাদেশ দলের এই ওপেনার। দুর্দান্ত টাইমিং আর আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরিয়েছে তাঁর ব্যাটিংয়ে। পেস আর স্পিন, দুই ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষেই স্বচ্ছন্দে ব্যাট চালিয়েছেন সৌম্য। দুই ম্যাচেই দলকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার পর নিজের সংগ্রহটা বাড়িয়ে নিয়েছেন ঠাণ্ডা মাথায়। শুধু বাউন্ডারির পেছনে না ছুটে, নিয়মিত সিঙ্গেলস ও ডাবলসের দিকেও মনোযোগী ছিলেন বাংলাদেশ ওপেনার।
এর আগে বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচেই ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ হয়েছিলেন সৌম্য সরকার। ২০১৮ সালে দেশের মাটিতে দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরি এবং ভগ্নশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ৮০ রানের ইনিংস ছাড়া বলার মতো আর কোনো স্কোর করতে পারেননি সৌম্য। আপাতত ব্যর্থতার বেড়াজালে আটকে থাকা সময়টাকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ দলের এই তারকা ব্যাটসম্যান। ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এই ফর্মটাকে টেনে নিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।