অদম্য মাশরাফির অন্য ‘দ্বিশতক’
ওয়ানডে অভিষেক ১৪ বছর আগে, ২০০১ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। মাশরাফি বিন মুর্তজার দারুণ এক মাইলফলক-ছোঁয়া ম্যাচের প্রতিপক্ষের নামও জিম্বাবুয়ে। শনিবার প্রথম ওয়ানডেতে সিকান্দার রাজাকে কট বিহাইন্ড করে বাংলাদেশের পক্ষে ২০০তম উইকেটের আনন্দে মেতে উঠলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এই মাইলফলকে পৌঁছানোর কৃতিত্ব এর আগে শুধু দুজনেরই ছিল। দুজনই বাঁহাতি স্পিনার—আবদুর রাজ্জাক আর সাকিব আল হাসান। অর্থাৎ ওয়ানডেতে ২০০ উইকেট নেওয়া প্রথম বাংলাদেশি পেসার মাশরাফি।
সব মিলিয়ে ২০০ উইকেট অবশ্য গত জুলাইয়ে হয়েছিল মাশরাফির, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে। তবে জিম্বাবুয়ে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশের পক্ষে ১৯৯টি উইকেট ছিল তাঁর। অন্য উইকেটটি পেয়েছিলেন ২০০৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশিয়া কাপে এশিয়া একাদশের পক্ষে।
১৪ বছর আগে অভিষেক হলেও শনিবার মাত্র ১৫৮তম ওয়ানডে খেললেন তিনি। মাত্রই, কারণ তাঁর পাঁচ বছর পরে শুরু করেও সাকিবের ওয়ানডের সংখ্যা ১৫৭। অবশ্য মাশরাফি যে আজও খেলে যেতে পারছেন, সেটাই তো চরম আশ্চর্যের। দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচারের যন্ত্রণাকে পেছনে ফেলে আজ তিনি বদলে যাওয়া বাংলাদেশের কাণ্ডারি, সফল অধিনায়ক।
গত বছর বাংলাদেশের ক্রিকেট ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এশিয়া কাপে আফগানিস্তান আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হংকংয়ের মতো দলের কাছে হার বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কলঙ্কিতই করেছে শুধু।
বলা যায়, এক ক্রান্তিলগ্নেই বাংলাদেশের অধিনায়ক হয়েছিলেন মাশরাফি। আর শুরুতেই সাফল্য। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেই সাফল্যের সূচনা হয়েছিল বাংলাদেশের। তবু বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে বাংলাদেশকে তেমন পাত্তা দেননি ক্রিকেটবোদ্ধারা। কিন্তু ক্রিকেট-দুনিয়াকে হতবাক আর ইংল্যান্ডকে বিদায় করে মাশরাফির দল চলে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। ভারতের বিপক্ষে শেষ আটের লড়াইয়ে আম্পায়ারিং নিরপেক্ষ হলে কী হতো, তা বলা মুশকিলই।
তবু বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে বীরোচিত সংবর্ধনা পেয়েছিলেন মাশরাফি ও তাঁর সতীর্থরা। বিশ্বকাপের ঠিক পরে উজ্জীবিত বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল পাকিস্তানকে। তারপর ভারতকে হারিয়ে চরম প্রতিশোধ। বাংলাদেশের আগুনে পুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাও ‘বধ’ হয়েছিল অসহায়ভাবে। এসব অসাধারণ সাফল্যই এসেছিল মাশরাফির সুযোগ্য নেতৃত্বে।
সুযোগ্য নেতাই বটে। মাঠে নিজেকে উজাড় করে দিতে কখনোই পিছপা হন না মাশরাফি। গত মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দিনসাতেক কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। তবে বাসায় ফিরে কয়েক দিন বিশ্রাম নিয়েই যোগ দেন জাতীয় দলের অনুশীলনে। জিম্বাবুয়ে সিরিজ শুরু হওয়ার আগের দিন নিজেই জানিয়েছেন, এখনো শতভাগ ফিটনেস ফিরে পাননি। সেই সঙ্গে ‘বাংলাদেশের খেলা হলে বসে থাকতে পারি না’ এমন কথাও বলেছেন অবশ্য। অদম্য, অপ্রতিরোধ্য একজন মানুষের মুখেই তো এমন কথা মানায়। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব তো দিচ্ছেনই, প্রয়োজনের সময় এনে দিচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ঝড়ো ব্যাটিং করে মূল্যবান রানও উপহার দিচ্ছেন দলকে।
বাংলাদেশের সৌভাগ্য, মাশরাফি আজ জাতীয় দলের অধিনায়ক।