রিয়ালের জালে বার্সার এক হালি গোল
রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা খেলা মানেই টানটান উত্তেজনা, স্নায়ুর চাপ, তীব্র লড়াই। কিন্তু স্প্যানিশদের কাছে যার পোশাকি নাম ‘এল ক্লাসিকো’, সেই লড়াই কি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারল? ফলাফল তো একেবারেই একপেশে, ৪-০! লিওনেল মেসি ম্যাচের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় মাঠের বাইরে। অথচ সবচেয়ে বড় তারকার অনুপস্থিতি দলকে বুঝতেই দিলেন না নেইমার ও লুইস সুয়ারেজ। সুয়ারেজের গোল দুটি, নেইমার ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার একটি করে গোল। তাই লা লিগার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর, সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ একেবারে বিধ্বস্ত, তা-ও আবার ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে।
urgentPhoto
মেসির অনুপস্থিতির জন্যই হয়তো শুরু থেকে কিছুটা সতর্ক ছিল বার্সেলোনা। অন্যদিকে রিয়াল আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করলেও প্রতিপক্ষের সতর্ক ডিফেন্সে ফাঁক বের করতে পারেনি। সপ্তম মিনিটে প্রথম সুযোগ পেয়েছে বার্সা; মাস দুয়েক আগে হাঁটুর চোটে পড়ে মেসি মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর এক দুর্ধর্ষ জুটি গড়ে তোলা নেইমার আর সুয়ারেজের সৌজন্যে। তবে সুয়ারেজের সঙ্গে চোখজুড়ানো ওয়ান-টু খেলে রিয়ালের ডিফেন্স তছনছ করে দিলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি নেইমার। ব্রাজিলিয়ান তারকার শট চলে গেছে ক্রসবার উঁচিয়ে।
পরের মিনিটে ডান দিক থেকে গড়ে ওঠা রিয়ালের আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়েছেন ক্লদিও ব্রাভো। রোনালদোর শট গ্লাভসে জমিয়ে দলকে নিশ্চিত বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন বার্সার গোলরক্ষক।
১১ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে গড়ে ওঠা দারুণ এক আক্রমণে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। লুকা মদ্রিচের কাছ থেকে বল পেয়ে সুয়ারেজকে পাস দিয়েছিলেন সের্গি রবার্তো। সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার সুয়ারেজের বল জালে জড়াতে ভুল হয়নি (১-০)।
২৫ মিনিটে রবার্তোর ব্যর্থতায় ব্যবধান ২-০ হয়নি। রাকিতিচের পাস থেকে বক্সের ভেতর বেশ সুবিধাজনক জায়গায় বল পেলেও রবার্তো মেরেছেন পোস্টের ওপর দিয়ে।
তবে ৩৯ মিনিটে হতাশ হতে হয়নি বার্সাকে। ইনিয়েস্তার পাস ধরে, এগিয়ে আসা কেইলর নাভাসকে বোকা বানিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছেন নেইমার। রিয়াল গোলরক্ষক নাভাস কিছুই করতে পারেননি।
বিরতির ঠিক আগে একটুর জন্য তৃতীয় গোলের দেখা পায়নি অতিথিরা। নেইমারের পাস থেকে সুয়ারেজের প্রচেষ্টা গোললাইন থেকে ফিরিয়ে সে যাত্রা রিয়ালকে রক্ষা করেছেন মার্সেলো।
প্রথমার্ধে পাত্তা না পেলেও বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে রিয়াল। সুযোগও এসেছিল গোলের। তবে বার্সা গোলরক্ষক ব্রাভোর অসামান্য দৃঢ়তা স্বাগতিকদের হতাশ করেছে বারবার। রোনালদোর দুটো এবং করিম বেনজেমার দুটো মোট চারটি নিশ্চিত সুযোগ ঠেকিয়ে অতিথিদের পোস্ট অক্ষত রাখার কৃতিত্ব চিলির এই গোলরক্ষকের।
রিয়াল গোলের জন্য মাথা কুটে মরলেও বার্সার গোল-জোয়ার থেমে থাকেনি। ৫৩ মিনিটে নেইমারের চমৎকার ব্যাকহিল থেকে জোরালো ভলিতে স্কোরলাইন ৩-০ করেন অধিনায়ক ইনিয়েস্তা। তার চার মিনিট পর বার্সার জন্য আরেকটি অনুপ্রেরণা। প্রায় দুই মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরেন মেসি।
চারবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারকে পেয়ে বার্সার আক্রমণের ধার বেড়ে যায় আরো। তার সুফল আসে ৭৪ মিনিটে। জর্দি আলবার পাস ধরে, অফসাইড ফাঁদ ভেঙে নিজের দ্বিতীয় আর দলের চতুর্থ গোলের আনন্দে ভেসে যান সুয়ারেজ। ৮৪ মিনিটে নেইমারকে গুরুতর ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে রিয়ালকে আরো লজ্জায় ফেলে দেন ইসকো।
বছর পাঁচেক আগে নিজেদের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে লা লিগাতেই রিয়ালকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বার্সা। শনিবার রাতে বার্নাব্যুতেও সেই স্কোরলাইনে জিততে পারত কাতালানরা। হয়নি শেষ দিকে ইনিয়েস্তার জায়গায় বদলি হিসেবে নামা মুনির এল হাদ্দাদির ব্যর্থতায়।
তবু যা হয়েছে তা-ও রিয়ালের জন্য কম লজ্জার নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই ‘এল ক্লাসিকো’র ফলাফল লিগ শিরোপার গতিপথ ঠিক করে দিচ্ছে। রিয়ালকে এক হালি গোলের লজ্জায় ডুবিয়ে লা লিগার শীর্ষস্থান আরো মজবুত করেছে বার্সা। ১২ ম্যাচ থেকে লুইস এনরিকের শিষ্যদের সংগ্রহ ৩০ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে রিয়াল আপাতত দ্বিতীয় স্থানে। আপাতত কারণ, রোববার রাতে রিয়াল বেতিসকে হারাতে পারলে দ্বিতীয় স্থান দখল করবে আতলেতিকো মাদ্রিদ।
গত মৌসুমে একটা শিরোপাও জিততে পারেনি রিয়াল। এবার মৌসুমের মাঝপথে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে এত বড় একটা হারের লজ্জা। স্পেনের সফলতম দলের সত্যিই দুঃসময়।