বৃষ্টি আইনে আফগানিস্তানের কাছে হারল বাংলাদেশ
আফগান স্পিনারদের নিয়ে মনে যে ভয় ছিল বাংলাদেশের ব্যাটারদের, সেটাই শেষপর্যন্ত জয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফের একবার আফগান স্পিনারদের স্পিন বিষে নীল সাকিব-মুশফিকরা। ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে হেরে ওয়ানডে সিরিজে শুরুটা মোটেও ভালো হলো না স্বাগতিকদের।
আজ বুধবার (৫ জুলাই) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১৬৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে বৃষ্টি আইনে ১৬৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বৃষ্টির বাধায় ২১.৪ ওভারে ৮৩ রানের বেশি তুলতে পারেনি আফগানরা। বৃষ্টি আইনে তাদের জয় ১৭ রানে।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয় দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তবে দলীয় ৩০ রানের মাথায় ফজল হক ফারুকীর বলে ডিপ স্কয়ারের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে গুরবাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক তামিম। ২১ বলে ১৩ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
তামিমের বিদায়ের পর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে জুটি গড়েন লিটন। তবে সেই জুটিও বেশি বড় হয়নি। দলীয় ৬৫ রানের মাথায় মুজিবুর রহমানের বলে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। আউটের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ২৬ রান।
এরপর দলীয় ৭২ রানে ফিরে যান শান্তও। ১৬ বলে ১২ রান করেন তিনি। সবমিলিয়ে শুরুতে তিন নির্ভরযোগ্য ব্যাটারকে হারিয়ে চাপ বাড়ে বাংলাদেশের। তারপর বৃষ্টিতে ৩০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর শুরু হলে হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়েন সাকিব। তবে দলীয় ১০৯ রানে সাকিবের বিদায়ে ফের বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। ৩৮ বলে ১৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাকিব।
সাকিবের বিদায়ে পর দ্রুতই মুশফিককে হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। রশিদের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ৩ বলে খেলে নামের পাশে ১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি মুশফিক। এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন হৃদয়। তবে রশিদ খান হৃদয়ের সেই আশা পূরণ হতে দেননি। দলীয় ১২৮ রানের মাথায় আফিফকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে সাজঘরে পাঠান রশিদ।
আফিফের বিদায়ের পর মিরাজকে নিয়ে কিছুটা চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন হৃদয়। তবে তাতেও কাজ হয়নি। দলীয় ১৩৯ রানে ফারুকীর বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে আউট হন মিরাজ। তার বিদায়ে কার্যত বাংলাদেশের লড়াকু সংগ্রহ গড়ার আশা শেষ হয়ে যায়।
এরপর দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টি আঘাত হানলে ফের বন্ধ হয়ে যায় খেলা। ১ ঘন্টারও বেশি সময় পর খেলা শুরু হলে কমে আসে ওভার। ৭ ওভার কমিয়ে ৪৩ ওভারে শুরু হয় খেলা। বৃষ্টির পরই সাজঘরে ফেরেন তাসকিন। এরপর বাকি ব্যাটারদের নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখার কাজটা করেন হৃদয়। তুলে নেন লড়াকু এক ফিফটি। যদিও ফিফটি হাঁকিয়ে আর থিতু হতে পারেননি হৃদয়। ফারুকীর বলে গুরবাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৬৯ বলে ৫১ রান করে। চেষ্টা করেও ২০০ এর গন্ডি পেরোতি পারেনি। শেষমেশ ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে থামে বাংলাদেশ।
১৬৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে কিছুটা দেখেশুনে ব্যাটিং করে আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। দলীয় ৫৪ রানের মাথায় সাকিবের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাজমুল শান্তর হাতে তালুবন্দি হন গুরবাজ। ৪৫ বলে ২২ রান করে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
তার বিদায়ের পর আরেক ব্যাটার রহমত শাহ ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। দলীয় ৭০ রানে তাসকিনের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে লিটনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলেও পুনরায় খেলা মাঠে গড়ানো সম্ভব হয়নি। শেষমেশ আফগানরা বৃষ্টি আইনে এগিয়ে থাকায় তাদের জয়ী ঘোষণা করা হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ১৬৯/৯ (তামিম ১৩, লিটন ২৬, শান্ত ১২, সাকিব ১৫, হৃদয় ৫১, মুশফিক ১, আফিফ ৪, মিরাজ ৫, হাসান ৮*, তাসকিন ৭, মুস্তাফিজুর ৩*; ফারুকী ৮.৪-১-২৪-৩, শাফি ৪.২-০-৩৬-০, ওমরজাই ৬-০-৩৯-১, মুজিব ৯-১-২৩-২, নবী ৬-০-২৫-১, রশিদ ৯-০-২১-২)।
আফগানিস্তান: ২১.৪ ওভারে ৮৩/২ (গুরবাজ ২২, জাদরান ৪১, রহমত ৮, শহীদি ৯; হাসান ৭-০-৩৬-০, মুস্তাফিজুর ৪-০-১০-০, তাসকিন ৫.৪-০-২৬-১, সাকিব ৫-১-৯-১)
ফলাফল: বৃষ্টি আইনে আফগানিস্তান ১৭ রানে জয়ী।