বাংলাদেশকে হেসেখেলে হারিয়ে সিরিজ জিতল আফগানিস্তান
মাত্র তিন মাস বাকি ওয়ানডে বিশ্বকাপের। এর আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। তবে, এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা পেতে হবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে রীতিমতো ধরাশায়ী লিটন-শান্তরা। ব্যাটে-বলে ব্যর্থতায় আফগানদের কাছে সিরিজ হারল পেল লাল-সবুজের দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে ১৪২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ পকেটে পুরেছে সফরকারীরা। এবার শেষ ম্যাচে আফগানদের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের।
আজ শনিবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে গুরবাজ-জাদরানের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩৩১ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় আফগানিস্তান। জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি বাংলাদেশ।
সাগরিকার সবুজ উইকেটে শুরুটা ব্যাটারদের জন্য কঠিন হবে ভেবে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন। তবে তার সেই সিদ্ধান্ত যে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে তা বুঝতে পারেনি লিটন। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে রানের পাহাড় গড়ে সফরকারীরা।
৩৩২, স্বাভাবিকভাবেই ওয়ানডেতে যেকোনো দলের জন্য কঠিন সংগ্রহ। সেই কঠিন কাজটাকেই সহজ করতে নেমেছিলেন লিটন-নাঈমরা। যদিও আফগান বোলাররা স্বাগতিকদের সেই ইচ্ছে পূরণ হতে দেননি। বড় সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই অধিনায়ক লিটনকে হারিয়ে বড় হোঁচট খায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৫ রানের মাথায় ফজল হক ফারুকীর বল মিড উইকেটের ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে নবীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন। ১৫ বলে ১৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। লিটনের বিদায়ের পর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল শান্তও পারেননি আস্থার প্রতিদান দিতে।
ইনিংসের ৫.৫ ওভারের সময় মুজিবের করা অসাধারণ ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। আউটের আগে শান্তর ব্যাট থেকে আগে পাঁচ বলে এক রান। এরপর তামিমের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখও ব্যর্থ হন। ফারুকের অফ স্ট্যাম্প করিডোরে করা বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে স্বাগতিকরা। একে একে সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেনরা বিদায় নিলে বাংলাদেশের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। ৭২ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
অবশ্য অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে সেই বিপর্যয় কিছুটা সামাল দেয় বাংলাদেশ। এই দুই ব্যাটার মিলে গড়েন ৮৭ রানের জুটি। দলীয় ১৫৯ রানের মাথায় মুজিবের বলে ওয়াইড লং অনের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে রহমত শাহ এর হাতে ধরা পড়েন মিরাজ। আউটের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪৮ বলে ২৫ রান। মিরাজের বিদায়ের পর আর কেউ মুশফিককে তেমন সঙ্গ দিতে না পারায় ১৮৯ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। চোটের কারণে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেনি এবাদত।
এর আগে, চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনে করেন দুই ওপেনার গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। নতুন বলে ইনিংস শুরু করা মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম ওভারে এক বাউন্ডারিতে দেন চার রান। পরের ওভারে হাসান মাহমুদ দেন তিন রান। কিন্তু স্বাগতিক বোলারদের সামলে উইকেটে থিতু হয়ে যান অতিথি ওপেনাররা। শুরুর ১০ ওভারে দুজন মন্থর গতিতেই টানেন আফগানিস্তানকে। ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে তোলেন ৬৬ রান। এরপর বাংলাদেশি বোলারদের পরীক্ষা নেন। তিন পেসার ও দুই স্পিনার মিলে কিছুই ভাঙতে পারছিলেন না আফগানদের প্রতিরোধ।
এর মধ্যেই তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যান গুরবাজ। সাকিব আল হাসানের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ঠিক ১০০ বলে কাঙ্ক্ষিত শতকের দেখা পেয়ে যান তিনি। মাত্র ২০ ম্যাচ খেলা গুরবাজের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। এর কিছুক্ষণ পর আরেক ওপেনার ৭৫ বলে পা রাখেন পঞ্চাশের ঘরে। দুজনে ভর করে ওয়ানডেতে প্রথমবার দুইশ রানের উদ্বোধনী জুটি দেখে আফগানরা। ১৯৩ বলে আসে গুরবাজ ও জাদরানের দুইশ রানের জুটি। ছুটতে থাকা এই জুটি শেষ পর্যন্ত থামান সাকিব। ৩৬.১তম ওভারে সাকিবকে ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন গুরবাজ। মূলত সাকিবকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিস করে ফেলেন তিনি। এলবির আবেদন তোলে বাংলাদেশ। তাতে সাড়া দেন আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওর্থ। ১২৫ বলে ১৪৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলে থামেন তিনি। যা সাজানো ছিল তো ১৩টি বাউন্ডারি ও আটটি ছক্কায়।
পরের বলেই আরেকটি উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ, কিন্তু মুশফিকের হাস্যকর ভুলে সেই সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। পরের ওভারে অবশ্য ইবাদত এসে স্বস্তি দেন। তুলে নেন আফগানদের দ্বিতীয় উইকেট। ইবাদত হোসেনের শর্ট বলে পুল করে ফাইন লেগ সীমানায় মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন উইকেটে নতুন আসা রহমত শাহ। কিছুক্ষণ বাদে অধিনায়ক শাহিদিকে থামান মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর দ্রুত আরও দুটি উইকেট হারায় আফগানিস্তান। কিন্তু তাতে লাভের লাভ হয়নি। এক প্রান্তে আফগানরা দ্রুত উইকেট হারালেও আরেক প্রান্তে থাকা জাদরান তুলে নেন সেঞ্চুরি। তাতে পাহাড় সমান পুঁজি পেয়ে যায় আফগানিস্তান। সেঞ্চুরিয়ান জাদরান ১১৯ বলে ঠিক ১০০ রান করে থামেন মুস্তাফিজের বলে। এরপর বাকিদের ওপর ভর করে বড় স্কোরের ঠিকানায় পৌঁছে যায় আফগানিস্তান।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে সমান দুটি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব, মিরাজ, হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। একটি উইকেট পান ইবাদত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান : ৫০ ওভারে ৩৩১/৯ (গুরবাজ ১৪৫, জাদরান ১০০, শাহ ২, শাহিদি ২, নাজিবউল্লাহ ১০, নবী ২৫, রশিদ ৬, ওমরজাই ২, মুজিব ৫, ফারুকী ১; মুস্তাফিজুর ১০-০-৬০-২, হাসান ১০-০-৭০-২, এবাদত ৯.২-০-৬১-১, সাকিব ১০-০-৫০-২, মিরাজ ৯-০-৬০-২, শান্ত ১.৪-০-১৭-০)।
বাংলাদেশ : ৪৩.২ ওভারে ১৮৯ (নাঈম ৯, লিটন ১৩, শান্ত ১, হৃদয় ১৬, সাকিব ২৫, মুশফিক ৬৯, আফিফ ০, মিরাজ ২৫, হাসান ৪, মুস্তাফিজ ৭; ফারুকী ৭.২-১-২২-৩, মুজিব ১০-০-৪০-৩, সালিম ৬-০-৩৪-০, নবী ৬-০-২৯-১, রশিদ ৯-০-২৮-২, ওমরজাই ৫-০-৩০-০)।
ফলাফল : আফগানিস্তান ১৪২ রানে জয়ী
সিরিজ : আফগানিস্তান ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে