লিটনের ব্যাটে হোয়াইটওয়াশ এড়াল বাংলাদেশ
একদিকে চোখ রাঙাচ্ছিল হোয়াইটওয়াশ অন্যদিকে র্যাঙ্কিংয়ে অবনমন হওয়ার শঙ্কা—এমন সমীকরণের ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। শরিফুল-তাসকিনদের বোলিং দাপটের পর অধিনায়ক লিটন দাসের দৃঢ়তায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্বস্তির জয় পেল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে আফগানিস্তানকে সাত উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে আফগানদের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচল লিটন দাসের দল। প্রথম দুটি ম্যাচ জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিল আফগানরা।
সাগরিকায় বাংলাদেশের কাজটা সহজ করে দেন বোলাররা। আফগানদের থামিয়ে দেন দেড়শর নিচে। যার জবাব দিতে নেমে শুরুটা নড়বড়ে হয় বাংলাদেশের। রান তাড়ায় শুরুতেই নাঈম শেখকে হারায় স্বাগতিকরা।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফারুকির করা বল অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখন জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে দেন নাঈম। ব্যাটের কানায় লেগে বল আঘাত করে স্টাম্পে। ৮ বল খেলে রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি।
ওয়ানডাউনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও স্বস্তি দিতে পারেননি। আশা জাগানিয়া শুরু করলেও ১১ রান করে তিনিও ফেরেন সাজঘরে। জোড়া ধাক্কা খাওয়ার পর হাল ধরেন লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। এই জুটিতেই মূলত কক্ষপথে ফেরে বাংলাদেশ। মাঝে জুটি গড়ে ৩৯ রানে সাকিব ফিরলেও জয় পেতে সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের।
শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে দলের জয়ে নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক লিটন দাস। জয়ের পথে তিনি উপহার দেন ৬০ বলে ৫৩ রানের চমৎকার ইনিংস। সেই সঙ্গে নিজের ব্যাটে দেন গত কয়েকদিনের সমালোচনার জবাব। তাঁর সঙ্গে তাওহিদ করেন ১৯ বলে ২২ রান।
এর আগে আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৫.২ ওভারে ১০ উইকেটে ১২৬ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এদিন টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় আফগানিস্তান। কিন্তু আগের দিনের মতো এদিন আর শুরুটা জমেনি আফগানদের।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আঘাত হানেন একাদশে সুযোগ পাওয়া শরিফুল। এক ওভারেই জোড়া উইকেট তুলে নিলেন তিনি। প্রথমে ফেরালেন আগের দিনের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরানকে (১)। এরপর বিদায় করলেন উইকেটে নতুন আসা রহমত শাহকে। ওয়ানডাউনে নামা রহমতকে রানের খাতা খুলতে দেন না শরিফুল।
দলীয় ৩ রানে জোড়া উইকেট হারিয়ে শুরুটা ব্যাকফুটে হয় আফগানদের। এর মধ্যেই তৃতীয় আঘাত দেন তাসকিন। তিনি বিদায় করেন আগের দিনের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। তাসকিনের শর্ট বল মোকাবিলায় কিপার মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন গুরবাজ। দলীয় রানে ১৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় আফগানিস্তান, গুরবাজ ফেরেন ২২ বলে ৬ রান করে।
তিন উইকেট হারানোর হতাশা কাটিয়ে আর ম্যাচেই থিতু হতে পারেননি আফগানরা। বোলিংয়ে এসে ফের শরিফুলের ধাক্কা। নবম ওভারে মোহাম্মদ নবীকে এলবির ফাঁদে ফেলেন শরিফুল। যদিও রিভিউ নিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করেছেন নবী। কিন্তু রক্ষা হয়নি। আম্পায়ার্স কলই বহাল থাকল। ৯ বলে ১ রান করে নবীকে ফিরতে হলো সাজঘরে।
পেসারদের উইকেট উৎসবে মাঝপথে যোগ দেন স্পিনাররা। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে এলবির ফাঁদে ফেলে নিজের প্রথম শিকার তুলে নেন সাকিব আল হাসান। উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টায় ২২ বলে ১০ রান করেন নাজিবুল্লাহ।
পরের উইকেটটিও স্পিনারদের। তাইজুল ইসলাম আক্রমণে এসে ফেরান আফগান অধিনায়ক শাহিদির প্রতিরোধ। বাকিরা যখন একে একে সাজঘরে ফিরছিলেন তখন উইকেটে মাটি কামড়ে ছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু পারলেন না ইনিংস বড় করতে। যদিও তাঁর উইকেটটি যায় দায়িত্বজ্ঞানহীন শটে। তাইজুলের বলে আগে থেকে রিভার্স সুইপ খেলার চেষ্টায় গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। দলীয় ৫৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় আফগানিস্তান, ৫৪ বলে ২২ রানে আউট শাহিদি।
পরের আঘাতটি আনেন শরিফুল। আব্দুল রহমানকে ডিপ ফাইন লেগে তাইজুলের হাতে ক্যাচ বানিয়ে নিজের চতুর্থ শিকার তুলেন তিনি। ২০ বল খেলা আব্দুল করেন ৪ রান। দ্রুত উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত বড় ইনিংস গড়তে পারেনি আফগানরা। তবুও শেষ দিকে টেলএন্ডারদের ওপর ভর করে কোনোমতে ১০০ ছাড়ানো পুঁজি গড়ে আফগানিস্তান।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ২১ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন শরিফুল। এটিই তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। দুটি শিকার তাইজুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদের। এ ছাড়া সমান একটি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ৪৫.২ ওভারে ১২৬ (গুরবাজ ৬, জাদরান ১, রহমত ০, হাসমতউল্লাহ ২২, নবী ১, জাদরান ১০, ওমরজাই ৫৬, আব্দুল ৪, জিয়াউর ৫, মুজিব ১১, ফারুকী ০; শরিফুল ৯-১-২১-৪, তাসকিন ৮.২-১-২৩-২, মিরাজ ৯-১-৩৫-১, সাকিব ১০-১-১৩-১, তাইজুল ৯-০-৩৩-২।
বাংলাদেশ : ২৩.৩ ওভারে ১২৯/৩ (নাঈম ০, লিটন ৫৩, শান্ত ১১, সাকিব ৩৯, হৃদয় ২২; ফারুকী ৫-১-২৬-২, মুজিব ৭-১-৩৪-০, জিয়াউর ৩.৩-০-২২-০, ওমরজাই ২-০-১১-০, আব্দুল ৪-০-২৭-০, নবী ২-০-৭-১।
ফল : বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ : আফগানিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী।