শেষের নাটক ছাপিয়ে বাংলাদেশের জয়ের উচ্ছ্বাস
লক্ষ্যটা খুব বড় ছিল না। কিন্তু মুজিব-ফারুকিদের বিপক্ষে রান তাড়ার শুরুটা হয় চরম হতাশার। একের পর এক টপ অর্ডারদের হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের ভাগ্য দুলছিল আফগানিস্তানের পক্ষেই। তবে তাওহিদ হৃদয় ও শামীম হোসেন মিলে পাল্টে দেন দৃশ্যপট। চালকের আসনে ফের বাংলাদেশের নাম। নাটকের তখনও বাকি! কারণ, শেষ ওভার হ্যাটট্রিক করে করিম জানাত আভাস দেন অন্য কিছুর। শেষ পর্যন্ত সব নাটক ছাপিয়ে জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসল বাংলাদেশ।
আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সাকিব আল হাসানের দল।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ১৫৫ রানের লক্ষ্যটা আপাতদৃষ্টিতে মাঝারি মনে হলেও বাংলাদেশের জন্য হয়ে ওঠে পাহাড় সমান। হবেই বা না কেন? এত ছোট লক্ষ্য তাড়াতেও যে শুরুতেই চোখে ধোঁয়া দেখে বাংলাদেশ। দলীয় ৩৯ রানে হারিয়ে বসে তিন টপ অর্ডারকে।
শুরুটা হয় রনি তালুকদারকে দিয়ে। ফজল হক ফারুকির বলে ইনিংসের প্রথম ওভারেই বোল্ড হন রনি (৪)। নতুন বলে ফারুকিকে সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন বাংলাদেশি ওপেনার। আফগানদের পরের শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত।
ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থ হওয়া শান্ত ফেরেন ১২ রান করে। মুজিবের করা বল মোকাবিলায় স্ট্যাম্প বরাবর থেকে কিছুটা সরে যান শান্ত। সেটা বুঝতে পেরে মুজিবও বল করেন লেগ স্ট্যাম্পের দিকে। শান্ত ব্যাট চালিয়ে দেন, কিন্তু বল তাঁর কনুইতে লেগে আঘাত হানে স্ট্যাম্পে।
জোড়া ধাক্কা খাওয়ার মাঝে লিটন দাসও হতাশ করেন। ওমরজাইয়ের বলে রশিদ খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৮ রানে বিদায় নেন লিটন। তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ যখন ধুঁকছিল তখন আশার আলো হয়ে জ্বলতে পারতেন সাকিব। কিন্তু, পারলেন না নায়ক হতে। ফরিদকে ছক্কা হাকাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন করিম জানাতের হাতে। তিন ছক্কায় ১৭ বলে ১৯ করে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক।
একে একে ব্যাটারদের হারানোর ধাক্কা খাওয়া বাংলাদেশের হাল ধরেন দুই তরুণ তাওহিদ ও শামীম। দুজনে মিলে শেষ দিকে ঝড় তোলেন। উপহার দেন ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটি। এই জুটিতে ভর করে জয়ের পথে হাঁটে বাংলাদেশ। কিন্তু ২৫ বলে ৩৩ রান করে শামীম ফিরলে ফের পথটা কঠিন হয়ে যায়। থিতু হওয়া জুটি ভাঙার পর একে একে মিরাজ, তাসকিন ও নাসুমকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক করেন করিম জানাত। ভয়ে জাগে বাংলাদেশের। কিন্তু, শরিফুল এসে এক বাউন্ডারিতে দূর করে সব ভয়। বাংলাদেশও পৌঁছে যায় জয়ের ঠিকানায়। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকা তাওহিদ দলকে জেতানোর পথে ৩২ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন।
এর আগে ম্যাচের শুরুর চিত্রটাও ছিল বাংলাদেশের। মেঘলা কন্ডিশন কাজে লাগাতে টস জিতে বোলিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত যে ভুল নয় সেটা প্রমাণ করেন বোলাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মিলে যায় সাফল্য। ওই ওভারের প্রথম বলে লং অন দিয়ে নাসুমকে ছক্কা হাঁকান হজরতউল্লাহ জাজাই। সেই প্রতিশোধ পরের বলেই নেন নাসুম। অনেকটা ঝুলানো বল দিয়ে তাওহিদের হাতে ক্যাচ বানিয়ে জাজাইকে সাজঘরে পাঠান সিলেটের এই স্পিনার।
চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন তাসকিন। ফিরিয়ে দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। তাসকিনের করা স্লোয়ার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন গুরবাজ (৩)। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের শরিফুলকে সজোরে ছক্কা হাঁকান ইব্রাহিম জাদরান। পরের বলটিও চেয়েছেন উড়িয়ে মারতে। জায়গায় দাঁড়িয়ে কাট করতে গিয়ে ধরা পড়েন লিটন দাসের হাতে।
এর মধ্যেই আক্রমণে এসে করিম জান্নাতকে বিদায় করেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়কের করা ডেলিভারিটি উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছেন জান্নাত। টাইমিং মেলেনি। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় মিডঅফে। সেখানে থাকা ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করলেন না।
৫২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর বিপদে পড়ে যায় অতিথিরা। সেই বিপদ কাটাতে হাল ধরেন মোহাম্মদ নবী ও নাজিমুল্লাহ জাদরান। জমে ওঠার আগেই এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। উইকেটের পেছেন লিটনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন নাজিবুল্লাহকে (২৩)।
নাজিবুল্লাহকে হারানোর পর ওমরজাইকে নিয়ে আরেকটি জুটি উপহার দেন নবী। ফলে আফগানিস্তান পায় লড়াইয়ের পুঁজি। শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে ৪০ বলে ৫৪ রানের ইনিংস উপহার দেন নবী। ৩৩ রান করেন ওমরজাই।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ২৭ রান দিয়ে সর্বোচ্চ দুই উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। সমান একটি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান : ২০ ওভারে ১৫৪/৭( জাজাই ৮, গুরবাজ ১৬, জাদরান ৮, জান্নাত ৩, নবী ৫৪, নাজিবুল্লাহ ২৩, ওমরজাই ৩৩, রশিদ খান ৩, মুজিব ০; নাসুম ৩-০-২০-১, তাসকিন ৪-০-২৯-১, শরিফুল ৩-০-৩০-১, সাকিব ৪-০-২৭-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-১, মিরাজ ২-০-১৩-১)।
বাংলাদেশ : ১৯.৫ ওভারে ১৫৭/৮ (লিটন ১৮, রনি ৪, শান্ত ১৪, সাকিব ১৯, তাওহিদ ৪৭, শামিম ৩৩, মিরাজ ৮, নাসুম ০, তাসকিন ০, শরিফুল ৪* ; ফারুকি ৪-০-৩৬-১, মুজিব ৪-০-২২-১, ওমরজাই ৩-০-৩৪-১, রশিদ ৪-০-২৪-১, ফরিদ ২-০-১৭-১, নবী ১-০-৮-০, জান্নাত ১.৫-০-১৫-৩)।
ফল : ২ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।